৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৪:১১:১৮ পূর্বাহ্ন


ইউএসসিআইএস নিজস্ব স্পেশাল এজেন্ট নিয়োগ দেবে গ্রেফতার ও মামলা দায়েরের জন্য
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-০৯-২০২৫
ইউএসসিআইএস নিজস্ব স্পেশাল এজেন্ট নিয়োগ দেবে গ্রেফতার ও মামলা দায়েরের জন্য ইউএস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস (ইউএসসিআইএস)


যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ব্যবস্থা ঘিরে বড় ধরনের পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছে ইউএস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস (ইউএসসিআইএস)। এতদিন যাদের কাজ ছিল মূলত গ্রিনকার্ড, নাগরিকত্ব ও মানবিক ভিসা আবেদন যাচাই-বাছাই করা, সে সংস্থা এবার সরাসরি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে যাচ্ছে। নতুন এক চূড়ান্ত নিয়ম অনুযায়ী ইউএসসিআইএস অফবিআইয়ের স্পেশাল এজেন্টদের মতো নিজস্ব সশস্ত্র স্পেশাল এজেন্ট নিয়োগ দিতে যাচ্ছে। যারা তদন্ত, গ্রেফতার এবং মামলা দায়ের পর্যন্ত সব কার্যক্রম সম্পন্ন করবে।

ইউএসসিআইএস প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ২০০৩ সালে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের (ডিএইচএস) আওতায়। শুরু থেকেই এর মূল দায়িত্ব ছিল অভিবাসন সেবা প্রদান যেমন ভিসা, গ্রিনকার্ড, নাগরিকত্ব, শরণার্থী মর্যাদা ও আশ্রয়ের আবেদন যাচাই এবং অনুমোদন করা। এতদিন সংস্থাটি সেবামুখী চরিত্র ধরে রেখেছিল। যদিও ফ্রড ডিটেকশন অ্যান্ড ন্যাশনাল সিকিউরিটি ডিরেক্টরেট (এফডিএনএস) নামের একটি ইউনিট জালিয়াতি শনাক্ত করার কাজ করতো, কিন্তু তারা কখনোই আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা হিসেবে কাজ করেনি। এবার প্রথমবারের মতো ইউএসসিআইএস আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযুক্ত গ্রেফতার, আগ্নেয়াস্ত্র বহন, তল্লাশি ও গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকর করার ক্ষমতা পাচ্ছে। এর ফলে সংস্থাটিকে অনেকটাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতো মনে হবে।

নতুন নিয়মে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম ইউএসসিআইএসকে এই ক্ষমতা দিয়েছেন। গত ৫ সেপ্টেম্বর এখন থেকে সংস্থার বিশেষ এজেন্টরা সরাসরি গ্রেফতার ও জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে, অগ্নেয়াস্ত্র বহন করতে পারবে, তল্লাশি ও গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকর করতে পারবে এবং সিভিল ও ক্রিমিনাল উভয় ধরনের অভিবাসন আইন লঙ্ঘনের তদন্ত চালাতে পারবে। সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হলো, ইউএসসিআইএস এখন নিজেদের মামলাগুলো শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পরিচালনা করবে। আগে এটি করতে হতো আইসিই হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ইনভেস্টিগেশনস (এইচএসআই)-এর মাধ্যমে।

ইউএসসিআইএস পরিচালক জোসেফ বি. এডলো এই পদক্ষেপকে ঐতিহাসিক মুহূর্ত অ্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, ইউএসসিআইএস সবসময়ই একটি প্রয়োগকারী সংস্থা। তার ভাষায়, অভিবাসন ব্যবস্থার সততা রক্ষা করে সংস্থাটি দেশের আইনপ্রয়োগ করে। নতুন ক্ষমতা তাদের অভিবাসন প্রতারণা মোকাবেলায় শক্তিশালী করবে এবং জননিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। তিনি জানান, কয়েকশত ফেডারেল প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিশেষ এজেন্ট নিয়োগ দেওয়া হবে, যারা আবেদনপত্রে জালিয়াতি শনাক্ত করবে এবং প্রয়োজনে অভিবাসী কিংবা সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদেরও গ্রেফতার করতে পারবে।

ট্রাম্প যুক্তি হলো, এভাবে ইউএসসিআইএসকে শক্তিশালী করলে প্রতারণামূলক আবেদন দ্রুত সনাক্ত ও মোকাবেলা করা সম্ভব হবে। এতে আইসিই সীমান্ত পারের অপরাধ ও অবৈধ অভিবাসী ধরপাকড়ে বেশি মনোযোগ দিতে পারবে। ট্রাম্প প্রশাসনের লক্ষ্য হলো বছরে এক মিলিয়ন অভিবাসীকে দেশ থেকে অপসারণের সক্ষমতা অর্জন করা।

তবে এই সিদ্ধান্তে তীব্র সমালোচনা দেখা দিয়েছে সাবেক ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা, আইনজীবী ও অধিকারকর্মীদের মধ্যে। বাইডেন প্রশাসনে ইউএসসিআইএসের সাবেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ডগ র‌্যান্ড বলেছেন, ইউএসসিআইএস আগ্নেয়াস্ত্র ছাড়াই বহু দশক ধরে সফলভাবে কাজ করছে। তার মতে, এ পদক্ষেপ অপ্রয়োজনীয় এবং ভয় সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই নেওয়া হয়েছে। হোমল্যান্ড সিকিউরিটির সাবেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জেসন হাউসার মন্তব্য করেছেন, এখন থেকে ইউএসসিআইএস অফিসের ভেতরেই গ্রেফতারের ঝুঁকি তৈরি হলো। এতে বৈধ পথে আসতে চাওয়া অভিবাসীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ আর থাকবে না।

অভিবাসন অধিকার সংগঠনগুলিও কঠোর সমালোচনা করেছে। ন্যাশনাল পার্টনারশিপ ফর নিউ আমেরিকান্স-এর নির্বাহী পরিচালক নিকোল মেলাকু বলেছেন, এটি একটি ভয়াবহ পরিবর্তন। অভিবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করবে এবং আবেদন করার প্রক্রিয়ায় প্রবেশের পথে আরও বাধা তৈরি করবে। তার মতে, এতদিন ইউএসসিআইএসকে মানুষ একটি জনসেবামূলক সংস্থা হিসেবে দেখেছে, এখন সেটি ভয় প্রদর্শনকারী বাহিনী হয়ে উঠবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন এই নিয়ম চিলিং ইফেক্ট তৈরি করবে। অর্থাৎ যারা বৈধভাবে আবেদন করার যোগ্য, তারাও আতঙ্কে আবেদন থেকে বিরত থাকতে পারে। গ্রিনকার্ড ধারীরা ইমিগ্রেশন অফিস গিয়ে সিটিজেনশিপের ইন্টারভিউ দিতে উৎসাহিত হবে না। কারণ অফিসে গিয়েই গ্রেফতারের ঝুঁকি তৈরি হলে মানুষ আর নিরাপদ মনে করবে না। এর আগেই ট্রাম্প প্রশাসন ইউএসসিআইএসের নীতি কঠোর করেছিল। আগস্টে প্রকাশিত এক নির্দেশিকায় বলা হয়, সামাজিক মাধ্যমে ‘অ্যান্টি-আমেরিকান কার্যকলাপ বা মতাদর্শ’ থাকলে তা নাগরিকত্ব বা ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এছাড়া ১৯৯১ সালে বাতিল হওয়া নেইবারহুড ইনভেস্টিগেশন যেখানে আবেদনকারীর প্রতিবেশী ও সহকর্মীর সাক্ষাৎকার নেওয়া হতো। পুনরায় চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অধিকারকর্মীদের মতে, এসব পরিবর্তন অভিবাসীদের জন্য আরো জটিলতা ও ভয়ের পরিবেশ তৈরি করছে। ইউএসসিআইএসে আইনশৃঙ্খলা ক্ষমতা যুক্ত করা হলে সংস্থার মূল সেবামুখী চরিত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বৈধভাবে গ্রিনকার্ড, নাগরিকত্ব বা আশ্রয়ের জন্য আবেদন করতে ইচ্ছুক অনেকে মনে করবেন যে তারা নজরদারির আওতায় চলে আসছেন। এতে বৈধ অভিবাসনের প্রবাহও কমে যেতে পারে।

ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপকে সমর্থকরা অভিবাসন প্রতারণা রোধে কার্যকর ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য বলে দাবি করছে। কিন্তু, এটি বৈধ আবেদনকারীদের নিরুৎসাহিত করবে, অভিবাসন প্রক্রিয়ায় ভয়ভীতির পরিবেশ তৈরি করবে এবং ইউএসসিআইএসের জনসেবামূলক চরিত্র ধ্বংস করবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নতুন এই আইন কার্যকর হলে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ব্যবস্থায় দীর্ঘমেয়াদে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে।

শেয়ার করুন