কুমিল্লায় মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছিত করায় তীব্র ক্ষোভ জানিয়ে সিপিবি নেতারা বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের কোনোভাবে অপমান করা যাবে না। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স গত সোমবার এক বিবৃতিতে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধা বীরপ্রতীক আবদুল হাই কানুকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছেন। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ লাঞ্ছনার ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার ও আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, মুক্তিযুদ্ধ আমাদের শ্রেষ্ঠ অর্জন। মুক্তিযোদ্ধারা জাতির অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তান। মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের কোনোভাবে অপমান করা যাবে না। যদি এদের মধ্যে কেউ কোনো অন্যায় করে থাকে, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়াও সংগত। কিন্তু ‘মবে’র নামে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া, মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করা, মুক্তিযোদ্ধাদের হেনস্তা করা, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তির একাংশের বর্তমান কার্যক্রম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা দেশের কোনো বিবেকবান মানুষ মেনে নিতে পারে না।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ এ ধরনের কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি দাবি জানান। একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করা, ক্ষমতায় থাকা বা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধকে ব্যবহার করার বিরুদ্ধে সচেতন দেশবাসীকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ সারাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় বরং কোথাও কোথাও আরো অবনতি হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও উন্নত করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে যথাযথ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
এদিকে এ বিষয়ে বামজোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পর্ষদের সভা সোমবার বাসদ (মার্কসবাদী) কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। বামজোটের সমন্বয়ক ও বাসদ (মার্কসবাদী)-এর কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মাসুদ রানার সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবীর জাহিদ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আলী।
বক্তারা বলেন, আব্দুল হাই কানু বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে সেটা বিচারের আওতায় আসা উচিত। আমরা শুরু থেকেই বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করে জুলাই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবি করে আসছি এবং আওয়ামী লীগ আমলে সংঘটিত দুর্নীতি-লুটপাটের সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবি করেছি। ফলে এসব কাজে কেউ জড়িত থাকলে তার শাস্তি আইনি প্রক্রিয়ায় হতে হবে। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছিত করার অধিকার কারো নেই। ইতিমধ্যে মব ট্রায়ালের মাধ্যমে আইনবহির্ভূত অনেকগুলো ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে যা জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থী।
নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জোর দাবি জানান।