প্রতি বছরই জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশি বিজনেস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে গ্রীষ্মে পথমেলার আয়োজন করা হয়। যদিও এর নেতৃত্বে থাকেন জেবিবিএর সাধারণ সম্পাদক ও মূলধারার রাজনীতিবিদ ফাহাদ সোলায়মান। সাংগঠনিক দিক থেকে জেবিবিএর অবস্থা অনেকটা তথৈবচ। ঐক্যের কথা বারবার বলা হলেও ঐক্যবদ্ধ কমিটি কই? কিন্তু ফাহাদ সোলায়মানের নেতৃত্বের গুণে তার যে কোনো অনুষ্ঠানে তারা এককাট্টা। এবারের মেলাতেও তাই দেখা গেল। জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশি বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন এবং ক্যারিশমাটিক লিডার ফাহাদ সোলায়মানে আয়োজনে গত ৭ সেপ্টেম্বর জ্যাকসন হাইটসের ৭৫ স্ট্রিটে এ মেলার আয়োজন করা হয়। ৬ সেপ্টেম্বর সারাদিন ছিল বৃষ্টি। ৭ সেপ্টেম্বরেও ছিল বৃষ্টি। প্রকৃতি বলে কথা। মেলার দিন যদি বৃষ্টি হয় বা দেখায় তাহলে বিশাল বাজেটের আয়োজকের মনের অবস্থা কী হয়। নিশ্চয় ভালো নয়। ফাহাদ সোলায়মানের অবস্থাও তাই। কিন্তু ভাগ্য দেবী ছিল তার পক্ষে। দুপুরের পর বৃষ্টি থেমে যায়। আয়োজকের মুখে দেখা যায়, হাসির ঝিলিক। অপ্রত্যাশিত মেলা হয়ে ওঠে প্রত্যাশীতের বেশি। এক সফল মেলা উপহার দিলেন ফাহাদ সোলায়মান। সেই মেলায় উপস্থাপন করা হয় বাংলাদেশকে। ছিল বাংলাদেশি পণ্যের স্টল, তুলে ধরা হয় বাংলাদেশি সংস্কৃতি। মেলায় দিনের প্রথম অংশে লোকজনের উপস্থিতি একটু কম থাকলেও পড়ন্ত বিকালে ছিল মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি। মেলায় মানুষ হেঁটে হেঁটে স্টলে স্টলে ঘুরেছেন, পছন্দের জিনিস ক্রয় করেছেন, আবার কেউবা আড্ডা মেরেছেন। উপভোগ করেছেন শিল্পীদের পরিবেশনা।
মিয়া মোহাম্মদ দুলাল, এলবিস ও ফৌজিয়ার উপস্থাপনায় বেলুন উড়িয়ে হেরিটেজ মেলার উদ্বোধন করেন মেলার চেয়ারম্যান, এনওয়াই হোমকেয়ারের প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশ সোসাইটির ট্রাস্টি বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান এম আজিজ ও মেলার কনভেনর, জেবিবিএর প্রেসিডেন্ট গিয়াস আহমেদ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইর সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মহসীন নীরা, কুইন্স ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অফিসের প্রতিনিধি রোকেয়া আক্তার, বাংলাদেশ সোসাইটির সহ-সভাপতি কামরুজ্জামান কামরুল, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী লিটু চৌধুরী, জেবিবিএর কর্মকতা আতিকুল ইসলাম জাকির, এপিএ সরোয়ার চৌধুরী, এভিটিভির প্রতিনিধি আবুল কাশেম। অতিথি হিসাবে ছিলেন অ্যাসেম্বলিওম্যান জেসিকা গঞ্জালেস রোহাস, কাউন্সিলম্যান শেখর কৃষ্ণান, বিচারক সোমা সাঈদ, ঠিকানার প্রতিনিধি অনুভা শাহীন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বিলাল চৌধুরী, শাহ গ্রুপের প্রেসিডেন্ট শাহ জে চৌধুরী, কমিউনিটি বোর্ড থ্রির কর্মকর্তা জোবানি রিড, বীর মুক্তিযোদ্ধা মুকিত চৌধুরী, সাবেক বিচারপতি র্যাফায়েল, কমিউনিটি বোর্ড মেম্বার আহসান হাবিব, ফেড রকি, অ্যাসেম্বলিওম্যান ক্যাটেলিনা ক্রুজের প্রতিনিধি জামি কাজী প্রমুখ।
এম আজিজ মূলধারার রাজনীতিবিদদের উদ্দেশ্যে বলেন, যখন আসে তখন আপনারা আমাদের কাছে আসেন। আমরা আপনাদের ভোট দিই। আপনাদেরও আমাদের কাজ করে দিতে হবে। আমাদের এখন বড় প্রয়োজন বয়স্কদের জন্য এডাল্ট ডে কেয়ার সেন্টার এবং শিশুদের জন্য ডে কেয়ার সেন্টার। তারা তা করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। তিনি আরো বলেন, এই ধরনের মেলার আমাদের কমিউনিটির জন্য প্রয়োজন কারণ এই মেলার মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশকে তুলে ধরতে পারি এবং নতুন প্রজন্মের সামনে আমাদের শিল্প সংস্কৃতিকে তুলে ধরছি।
গিয়াস আহমেদ বলেন, জেবিবিএর আয়োজনে প্রতি বছরই এই ধরনের মেলা হয়ে থাকে। এবার ফাহাদ সোলায়মান মেলার আয়োজন করেছে। এই ধরনের উদ্যোগে বাংলাদেশকে উপস্থাপনের পাশাপাশি কমিউনিটিকে উপস্থাপন করা হয়। ফলে নিজেদের মধ্যে সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি বৃদ্ধি পায়।
জেসিকা গঞ্জালেস রোহাস এ ধরনের উদ্যোগে তার সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন এবং কমিউনিটির কল্যাণে কাজ করার শাহ জে চৌধুরী, আমিন মাকজুমি ম্যাকসহ কয়েকজনকে সাইটেশন প্রদান করা হয়। এছাড়াও মেলার পক্ষ থেকে কমিউনিটি বোর্ড থ্রি, চেয়ারম্যান এম আজিজসহ বেশ কয়েকজনকে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
শেখ কৃষ্ণান বলেন, এটি আমার জনপদ। আমি আপনাদেরই লোক। আমরা সব ধর্মের এবং বর্ণের মানুষ এখানে সুন্দরভাবে বসবাস করছি। তিনি বাংলাদেশিদের অবদানের কথা স্বীকার করে বলেন, যে কারণে আমরা ৭৩স্ট্রিটকে বাংলাদেশ স্ট্রিট বলে ঘোষণা দিয়েছি। তিনি যে কোনো প্রয়োজনে তার অফিসের সঙ্গে যোগাযোগের আহ্বান জানান।
মেলায় সংগীত পরিবেশন করেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় শিল্পী কালা মিয়া, কিশোর দাস, কামরুজ্জামান বকুল, ক্রিনিয়া হাসান, নাজু আবন্দ, শশী, শাহ মাহবুব, আফতাব জনি, টিনা রাসের ও শামীম সিদ্দিকী।
সবশেষে ফাহাদ সোলায়মান সবাইকে ধন্যবাদ জানান মেলা সফল এবং সার্থক করার জন্য। তিনি বলেন, এভাবে আপনাদের সহযোগিতা থাকলে আগামীতে আরো বড় বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন করবো।