নিউইয়র্ক সিটিতে অপরাধের বিরুদ্ধে নেওয়া কৌশল বাস্তবেই ফল দিচ্ছে। ২০২৫ সালের প্রথম আট মাসে শহরে গুলি ছোড়ার ঘটনা, গুলিবিদ্ধের সংখ্যা, সাবওয়ে অপরাধ এবং দোকান চুরিসহ সব ক্ষেত্রেই রেকর্ড পরিমাণ হ্রাস দেখা গেছে। এনওয়াইপিডি পুলিশ বিভাগ বলছে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত গুলি ছোড়ার ঘটনা এবং গুলিবিদ্ধ ব্যক্তির সংখ্যা নিউইয়র্ক সিটির ইতিহাসে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। এটি শুধুই পরিসংখ্যান নয়, বরং শহরজুড়ে গ্যাং দমন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং পায়ে টহলের মতো কার্যকর কৌশলের বাস্তব প্রতিফলন। ফলে নিউইয়র্ক আবারও আমেরিকার সবচেয়ে নিরাপদ বড় শহর হিসেবে নিজের অবস্থান শক্ত করছে।
পুলিশ কমিশনার জেসিকা টিশ এক বিবৃতিতে বলেন, সিটিবাসীর নিরাপত্তার জন্য অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, সহিংস গ্যাং সদস্যদের গ্রেফতার এবং এনওয়াইপিডির সদস্যদের পায়ে টহলের মাধ্যমে আমরা শহরজুড়ে যে কৌশল নিয়েছি, তা সফল হয়েছে’। এনওয়াইপিডির তথ্যমতে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত শহরে মোট ৪৮৯টি গুলি ছোড়ার ঘটনা এবং ৬১১ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এটি ২০১৮ সালের আগের সর্বনিম্ন রেকর্ডের (৫০২টি গুলি ও ৬১২ জন আহত) চেয়েও কম। এর পাশাপাশি আগস্ট মাসে মেজর অপরাধের হার কমেছে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ, যা আগের বছরের তুলনায় তাৎপর্যপূর্ণ হ্রাস। শহরে অপরাধের হার টানা সাত কোয়ার্টার ধরে কমছে, যা ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে। সাবওয়ে বা পাতালরেলে আগস্ট মাস ছিল রেকর্ড নিরাপদ; করোনা মহামারির বছর বাদ দিলে এটি সবচেয়ে নিরাপদ আগস্ট মাস। এ বছর এখন পর্যন্ত ট্রানজিটে ডাকাতির হার সর্বনিম্ন। এছাড়া, আগস্ট মাসে দোকান চুরি (রিটেইল থেফট) কমেছে ২২ শতাংশ, আর পুরো বছরের প্রথম আট মাসে চুরি কমেছে ১২ শতাংশ। নিউইয়র্কের জনপ্রিয় রিটেইল চেইনগুলো যেমন ওয়ালগ্রিনসে, যেখানে টুথপেস্ট বা শ্যাম্পুর মতো সাধারণ পণ্যও লক করে রাখতে হয়, সেখানে এ সাফল্য গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
মেয়র এরিক অ্যাডামস বলেন, যদিও কিছু হৃদয়বিদারক ঘটনা মানুষের মনে এখনো রয়ে গেছে, তারপরও এটি স্পষ্ট যে, আমাদের পাবলিক সেফটি প্ল্যান কাজ করছে। তিনি জানান, শহরের গ্যাং-সংক্রান্ত সহিংসতা রোধে এ বছর ৫৫টি গ্যাং-অপারেশন চালানো হয়েছে, যাতে ৩৯৬ জন গ্যাং সদস্য ও সহযোগী গ্রেফতার হয়েছেন। এছাড়া আগস্ট মাসে ১ হাজার ১০০ নতুন পুলিশ সদস্য নিয়োগ করা হয়েছে, যা ২০১৬ সালের পর সর্বোচ্চ। ২০২৫ সালে এনওয়াইপিডি মোট ২ হাজার ৯১১ জন রিক্রুট নিয়েছে, যা ২০০৬ সালের পর সর্বোচ্চ বার্ষিক নিয়োগ। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে ব্রঙ্কস এলাকায় গুলির ঘটনা কিছুটা বেড়েছে, সেক্ষেত্রে মেয়র অ্যাডামস প্রতিক্রিয়া স্বরূপ ১ হাজার অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, আমরা গ্যাং সদস্য, শুটার, ট্রিগার-পুলারদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে সহিংসতা বন্ধে কাজ করব।
এ অপরাধ হ্রাসের পরিসংখ্যান মেয়র অ্যাডামসের পুনর্নির্বাচন প্রচারে ইতিবাচক বার্তা হিসেবে কাজ করছে। তিনি বর্তমানে কঠিন একটি নির্বাচনী প্রতিযোগিতায় রয়েছেন এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্যেরও জবাব দিচ্ছেন, যেখানে ট্রাম্প নিউইয়র্কে অপরাধ দমনে ফেডারেল বাহিনী পাঠানোর হুমকি দিয়েছেন। পুলিশ কমিশনার টিশের ভাষায়, আমাদের কৌশল কাজ করছে, এবং আমাদের পুলিশ সদস্যরা শহরকে আরো নিরাপদ করে তুলছেন। অপরাধ রোধে নতুন সদস্য, কৌশলী টহল এবং গ্যাং বিরোধী কার্যক্রমের মাধ্যমে নিউইয়র্ক শহর আরো নিরাপদ শহর হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করছে-এমনটাই বলছে সরকারি পরিসংখ্যান।