জর্জিয়ার এলাবেলে হুন্দাইয়ের নির্মাণাধীন বৈদ্যুতিক গাড়ি ও ব্যাটারি তৈরির কারখানায় গত ৪ সেপ্টেম্বর এক অভূতপূর্ব ইমিগ্রেশন অভিযানে ৩০০ জন দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিকসহ ৪৭৫ জনকে আটক করেছে। মার্কিন ইতিহাসে সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে এটিই অন্যতম বড় কর্মস্থল ইমিগ্রেশন অভিযান বলে জানিয়েছে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ইনভেস্টিগেশনস। অভিযান চলাকালে কারখানার চতুর্দিকে সড়ক বন্ধ করে দেয় রাজ্য পুলিশ, আর প্রায় ৫০০ জন ফেডারেল, স্টেট ও স্থানীয় আইনপ্রয়োগকারী কর্মকর্তা প্রবেশ করেন হুন্দাই মেটাপ্ল্যান্টে। তখনো নির্মাণাধীন কারখানার ভেতরে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেক শ্রমিক পালানোর চেষ্টা করেন। কেউ কেউ আশ্রয় নেন এয়ার ডাক্টে, আবার কেউ কেউ লুকিয়ে পড়েন স্যুয়ারেজ পুকুরে।
প্রত্যেক শ্রমিককে পৃথকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেন কর্মকর্তারা। তারা জানতে চান সোশ্যাল সিকিউরিটি নম্বর, জন্মতারিখ ও অন্যান্য পরিচয় সংক্রান্ত তথ্য। যারা বৈধভাবে ছিলেন, তাদের ক্লিয়ার নো-ডিপোর্ট লেখা একটি কাগজ দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাকিদের ফোকস্টন আইস প্রসেসিং সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন আইনের লঙ্ঘনের অভিযোগে আটক হওয়া দক্ষিণ কোরিয়ার ৩০০-এর বেশি শ্রমিক শিগগিরই নিজ দেশে ফিরবেন বলে জানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ংয়ের দফতর। সিউলে প্রেসিডেন্টের চিফ অব স্টাফ, কাং হুন-সিক, ৭ সেপ্টেম্বর এক টেলিভিশন ভাষণে জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি সমঝোতায় পৌঁছানো হয়েছে এবং আটক শ্রমিকরা অতিরিক্ত প্রশাসনিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর দেশে ফিরবেন। তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য একটি চার্টার্ড বিমানের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী চো হিউন জানান, আটকদের মধ্যে ৩০০ জনের বেশি দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিক। এ ছাড়া মেক্সিকান কনস্যুলেট জানিয়েছে, ২৩ জন মেক্সিকান শ্রমিকও আটক হয়েছেন।
আইসের কর্মকর্তারা জানান, আটককৃতরা বিভিন্ন অভিবাসন আইন লঙ্ঘন করেছেন। কারো বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সীমান্ত পার হওয়ার অভিযোগ, আবার কেউ কেউ পর্যটক ভিসায় এসে অবৈধভাবে কাজ করছিলেন বলে জানানো হয়। আইসের বিশেষ এজেন্ট স্টিভেন শ্র্যাঙ্ক জানান, আটক হওয়া সবাই যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে অবস্থান করছিলেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ অবৈধভাবে প্রবেশ করেছিলেন, কেউ ভিসা ওয়েইভার ব্যবহার করে থেকে গিয়েছেন, আবার কেউ ভিসার মেয়াদ পেরিয়ে গিয়েছেন। অভিযানটি শুধু আইসের নয়; এতে অংশ নেয় এফবিআই, ডিইএ, এটিএফ, আইআরএস, ইউএস কাস্টমস, জর্জিয়া স্টেট পেট্রোলসহ বিভিন্ন সংস্থা। অভিযান চালানোর জন্য আদালতের অনুমোদিত সার্চ ওয়ারেন্ট ব্যবহার করা হয়। অভিযানের কারণে হুন্দাই-এলজি জেভি ব্যাটারি প্ল্যান্টের নির্মাণ কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় সাড়ে ৮ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রতিশ্রুতি নিয়ে শুরু হওয়া হুন্দাইয়ের বিশাল প্রকল্প আজ বড় ধরনের আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে। আটকরা কী ধরনের শাস্তির মুখে পড়বেন, আর কীভাবে এ ঘটনা ভবিষ্যতের অভিবাসন নীতিতে প্রভাব ফেলবে সেদিকে নজর থাকবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর।
আপস্টেট নিউইয়র্কের কাটোতে ইমিগ্রেশন হানা, বহু কর্মী আটক
আপস্টেট নিউইয়র্কের কাটো শহরের একটি খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান নিউট্রিশন বার কনফেকশনার্স কারখানায় হঠাৎ পরিচালিত ইমিগ্রেশন অভিযানে ডজনের বেশি কর্মীকে আটক করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এজেন্টরা। গত ৫ সেপ্টেম্বর সকালবেলায় এ অভিযান চালানোর সময় কারখানার মূল দরজা জোরপূর্বক খুলে ভেতরে প্রবেশ করে ফেডারেল এজেন্টরা এবং একে একে কর্মীদের একটি কক্ষে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। প্রত্যক্ষদর্শী এক ২৪ বছর বয়সী কর্মী জানান, সব কর্মীকে লাঞ্চরুমে নিয়ে গিয়ে তাদের আইনগত কাগজপত্র দেখাতে বলা হয়। তিনি নিজে বৈধ মার্কিন বাসিন্দা হওয়ায় কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দেওয়া হলেও তার অবৈধ অভিবাসী স্ত্রীকে আটক করা হয়েছে। তিনি জানান, আমরা এখানে কাজ করতে এসেছি, অপরাধ করতে নয়। আমাদের সঙ্গে যা হচ্ছে তা ঠিক নয়।
কারখানাটির সহ-মালিক লেনি শ্মিডট ঘটনাটিকে ভীতিকর বলে উল্লেখ করে বলেন, যদি কোনো অভিযোগ থাকতো, আমরা সহযোগিতা করতাম। কিন্তু যেভাবে হঠাৎ অভিযান চালানো হয়েছে, তা আমাদের জন্য আতঙ্কের। তিনি জানান, তাদের কারখানায় প্রায় ২৩০ কর্মী কাজ করেন এবং অধিকাংশেরই কাগজপত্র আগে থেকেই যাচাই করা হয়েছে। তবে এই ঘটনায় উৎপাদন ক্ষমতা অর্ধেকে নেমে আসবে, যা গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কায়ুগা কাউন্টি শেরিফ ব্রায়ান শ্যাঙ্ক বলেন, প্রায় এক মাস আগে ফেডারেল সংস্থা থেকে সহায়তার অনুরোধ আসে, যা একটি চলমান অপরাধ তদন্তের অংশ ছিল। তবে তদন্তের বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। অভিযানে আটকদের বেশির ভাগই গুয়াতেমালার নাগরিক, বলে জানিয়েছে অধিকার সংস্থা রুরাল অ্যান্ড মাইগ্রান্ট মিনিস্ট্রি। সংস্থাটির মতে, ৫০-৬০ জন এখনো আটক রয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাতে একজন সদ্যজাত শিশুর মা, যিনি দুধ পান করনোর জন্য মুক্তি পান।
অভিযানের নিন্দা জানিয়েছেন নিউইয়র্ক গভর্নর ক্যাথি হকুল। তিনি বলেন, নিউইয়র্ক সীমানা নিরাপদ করতে ফেডারেল সরকারের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত, কিন্তু আইস এজেন্টদের এমন পরিবার বিচ্ছিন্ন করার নীতি আমরা কখনোই সমর্থন করি না। তিনি আরো জানান, আটকদের মধ্যে কমপক্ষে এক ডজন শিশুর বাবা-মা রয়েছেন, যারা স্কুল থেকে ফিরে ফাঁকা ঘরে ফিরেছেন। এটি একটি মানবিক সংকট।