৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৪:০৬:২৮ পূর্বাহ্ন


ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) সমাবেশে গিয়াস আহমেদ
আমাদের সমাজে ওয়াহাবি-সালাফি আকিদার ছড়াছড়ি
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-০৯-২০২৫
আমাদের সমাজে ওয়াহাবি-সালাফি আকিদার ছড়াছড়ি ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপন সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী


নিউইয়র্কে বসবাসরত বাংলাদেশি মুসলিম কমিউনিটির উদ্যোগে ‘পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপন’ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য গিয়াস আহমেদ বলেন, প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সান্নিধ্য লাভের জন্যে জেরুসালেম থেকে হিজরত করে ইহুদিরা মদিনা শরিফে এসেছিলেন। আমাদের নবীর উম্মত হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাদের ভাগ্যে জোটেনি। হজরত মুসা (আ.) বলেছিলেন, তার মতো একজন নবীর জন্ম হবে মক্কা-মদিনায় এবং সেখানেই তার সাক্ষাৎ পাওয়া যাবে। সে কারণেই বনি ইসরাইলরা মদিনায় হিজরত করেন। কিন্তু তারা সাক্ষাৎ পাননি। অন্যদিকে আমরা পেয়েছি, আলহামদুলিল্লাহ। গিয়াস আহমেদ বলেন, আমাদের সমাজে ওয়াহাবি-সালাফি আকিদার ছড়াছড়ি। কীভাবে চিনবেন তাদের? পথভ্রষ্ট ওয়াহাবি-সালাফিরা ওলি-আওলিয়াদের বিরুদ্ধে কথা বলছে। প্রচলিত হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে গিয়াস আহমেদ আরো বলেন, হজরত মুহাম্মদকে (সা.) আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আমার ওলি-আওলিয়াদের বিরুদ্ধে যারা সমালোচনা করে, আমি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করি। ওলিরা হলেন, নবী করিম (সা.)-এর বংশধর। মনে রাখবেন, যত ওলি-আউলিয়া এসেছেন সবাই আহলে বাইয়াত থেকে এসেছেন। আব্দুল কাদের জিলানীও নবী করিমের বংশধর। খাজা বাবা মঈনুদ্দিন চিশতিও নবী করিম (সা.)-এর বংশধর। ঢাকার হাইকোর্ট সংলগ্ন শরফউদ্দিন চিশতির মাজার, তিনিও নবী করিমের বংশধর। মিরপুরের শাহ আলী (রহ.) নবীর বংশধর। সিলেটে ৬০ জন আওলিয়ার অধিকাংশই নবী করিম (সা.)-এর বংশধর। গিয়াস আহমেদ বলেন, নানামতের মাওলানার বিভ্রান্তিকর বক্তব্যে এখন এমন অবস্থা হয়েছে যে ইমান ঠিক রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। একজন মাওলানা মিলাদ পড়তেন, ক্বেয়াম করতেন, ঈদে মিলাদুন্নবী করতেন, ওলি-আওলিয়ার ভক্ত। কিন্তু দেখা গেছে বিকালেই তিনি চেঞ্জ হয়ে গেছেন। বিকালেই তিনি ওয়াহাবি হয়ে গেলেন। সকালের কথা বিকালেই পাল্টে বলছেন, এগুলো নাজায়েজ। এভাবেই ইমান নষ্ট হচ্ছে এবং এমন অবস্থা যে হবে তা হাদিস শরিফে হাজারো বছর আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। বুখারী শরিফ হাদিসের মতে, সাহাবিদের নবী করিম বলেছেন, একটি সম্প্রদায় সৃষ্টি হবে, যাদের নামাজ-রোজা, কোরআন পাঠ তোমাদের চেয়ে দেখতে-শুনতে ভালো মনে হবে। কিন্তু ভেতরে ইমান থাকবে না। তাদের অন্তরে ইমান ঢুকবে না। গিয়াস আহমেদ উল্লেখ করেন, সুন্নিদের মধ্যেও ইসলাম দুটি ধারায় বিরাজিত। একটি হচ্ছে ইয়াজেদি ইসলাম, আরেকটি হুসাইনি ইসলাম।

রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দে নুরল হক ওরফে ‘নুরাল পাগলা’ নামে একজন ভিন্ন মতাবলম্বীর (নিজকে ইমাম মেহেদি দাবিকারি) কবর ও দরগায় দফায় দফায় হামলা, লাশ তুলে অগ্নিসংযোগের ঘটনার সঙ্গে জড়িত ‘তৌহিদী জনতা’কে ধিক্কার ও নিন্দা জানিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় এ নেতা বলেন, এমন অমানবিক ও ঘৃণ্য কাজটি আমাদের মূল্যবোধ, ও সভ্যসমাজের মৌলিক ভিত্তির ওপর সরাসরি আঘাত। গিয়াস আহমেদ বলেন, তৌহিদী জনতার ব্যানারে একটি লাশ কবর থেকে উঠিয়ে পুড়ে ফেলছে। লাশ পোড়ায় কে? হিন্দুরা। যে একজন পাগল, তার আবার শরিয়ত কী। দাফনের ১২-১৩ দিন পর কবর থেকে সেই লাশ উঠিয়ে যারা পোড়ালেন তারা তো হিন্দু। তারা তো তৌহিদী জনতা হতে পারে না। তারা খারিজি। তারা শয়তান। তৌহিদী জনতার নামে শয়তানরা মাঝেমধ্যেই উগ্রতা চালাচ্ছে। ওরা মিলাদ মানে না। মোনাজাতে বিশ্বাসী নয়।

নিউইয়র্ক স্টেট বিএনপির সভাপতি মাওলানা ওলিউল্লাহ আতিকুর রহমানের সভাপতিত্বে ৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসে ডাইভারসিটি প্লাজায় ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইসলামি চিন্তাবিদ মাওলানা ড. সাইফুল আজম আজাহারী। মাওলানা শিহাব উদ্দিন আহমেদ পরিচালিত এ সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন-ডেমোক্রেটিক পার্টির ডিস্ট্রিক্ট লিডার অ্যাট লার্জ অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী প্রমুখ। ধর্মপ্রাণ বিশিষ্ট প্রবাসীদের মধ্যে ছিলেন জসিম উদ্দিন ভিপি, সাংবাদিক আনিসুর রহমান, মীর মশিউর রহমান, সাঈদুর রহমান সাঈদ, দেওয়ান কাউসার প্রমুখ।

শেয়ার করুন