৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৪:০৭:৩৬ পূর্বাহ্ন


সিডিপ্যাপ কেলেঙ্কারি : চাপে হোচুল প্রশাসন
পিপিএল অনিয়ম তদন্তে নেমেছে স্টেট সিনেট
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-০৯-২০২৫
পিপিএল অনিয়ম তদন্তে নেমেছে স্টেট সিনেট গভর্নর ক্যাথি হোচুল


নিউইয়র্ক স্টেটের ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ ১১ বিলিয়ন ডলারের হোম কেয়ার প্রোগ্রাম সিডিপ্যাপ এখন প্রশাসনিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে কেঁপে উঠেছে। গভর্নর ক্যাথি হোচুলের প্রশাসন দরপত্র প্রক্রিয়াকে ইচ্ছাকৃতভাবে প্রভাবিত করেছে কি না, সেই প্রশ্নে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনীতি। নতুন প্রমাণ ও সংশ্লিষ্ট কোম্পানির স্বীকারোক্তি ইঙ্গিত করছে যে চুক্তির আড়ালে হয়তো বড় কোনো কারসাজি ছিল। এদিকে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো বেতন ও সেবায় জটিলতায় পড়ে মারাত্মক ভোগান্তির শিকার হয়েছে, যা ক্ষোভকে আরো উসকে দিয়েছে। স্টেট সিনেটের উভয় দলের নেতারাই এখন সরব হয়ে স্বচ্ছ তদন্ত দাবি করছেন আর প্রতিদিনই চাপ বাড়ছে হোচুল প্রশাসনের ওপর।

ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে পাবলিক পার্টনারশিপ, এলএলসি (পিপিএল) নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এ কোম্পানি মূলত ভোক্তাদের জন্য হোম কেয়ার কর্মীদের পেমেন্ট সার্ভিস পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত হয়। কিন্তু সম্প্রতি স্টেট সিনেট কমিটির কাছে পাঠানো এক চিঠিতে কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট প্যাটি বার্নস স্বীকার করেন, তিনি আগে শপথের অধীন মিথ্যা তথ্য দিয়েছিলেন। তিনি আগে বলেছিলেন, বাজেট চূড়ান্ত হওয়ার আগে নিউইয়র্ক স্টেট ডিপার্টমেন্ট অব হেলথের সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ হয়নি। অথচ নতুন প্রমাণের মুখে তিনি স্বীকার করতে বাধ্য হন যে, আসলেই দফতরের সঙ্গে আলোচনা চলেছিল।

রিপাবলিকান সিনেটর স্টিভেন রোডস (নাসাউ) এক বিবৃতিতে বলেন, এখানে কিছু একটা গন্ধ আছে। আমাদের জানতে হবে এ চুক্তির সময় কী ধরনের যোগাযোগ হয়েছে, কারা এতে জড়িত ছিল, এ যোগাযোগ কি দরপত্রের ভাষা ও বাছাই প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলেছে? এবং যদি তা-ই হয়, তাহলে হোচুল প্রশাসন বা তার রাজনৈতিক দাতাদের কেউ উপকৃত হয়েছে কি না-সেটিও খুঁজে বের করতে হবে। নিউইয়র্কের জনগণ এর উত্তর পাওয়ার যোগ্য।

সিনেটর রোডসের বক্তব্য শুধু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবেই নয়, বরং ক্ষুব্ধ পরিবারগুলোর অনুভূতির প্রতিধ্বনি। কারণ এ বিতর্কিত রূপান্তর প্রক্রিয়ার ফলে লাখো হোম কেয়ার সহায়ক ও তাদের সেবাগ্রহণকারীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। বহু মানুষ সময়মতো বেতন পাননি, আবার অনেক রোগী ও পরিবার প্রশাসনিক জটিলতায় পড়েছেন।

পিএপিএল কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট প্যাটি বার্নস স্টেট সিনেটকে দেওয়া তার চিঠিতে লিখেছেন, আমার সাক্ষ্যের সময় আমি অবগত ছিলাম না যে, মার্চের শেষ থেকে এপ্রিলের শুরুতে স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীদের সঙ্গে কিছু সাধারণ যোগাযোগ হয়েছিল। যখন রাজ্য একক ফিসক্যাল ইন্টারমিডিয়ারি প্রোগ্রামে যাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে ভাবছিল, তখনই এসব যোগাযোগ হয়েছিল। এ বক্তব্য পুরো চিত্রটাই পাল্টে দিয়েছে। কারণ, যদি আগে থেকেই আলোচনা হয়ে থাকে, তবে নিরপেক্ষ দরপত্র প্রক্রিয়ার ওপর প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। ডেমোক্র‍্যাট সিনেটর জিম স্কোফিস (অরেঞ্জ), যিনি সিনেট ইনভেস্টিগেশন কমিটির চেয়ার, তিনি বলেন, এ সাক্ষ্য, এর সংশোধন এবং এখনকার নতুন মন্তব্য কেবল আরো বেশি প্রশ্ন তৈরি করছে। আমরা নিশ্চয়ই এর ফলোআপ করবো। তার সঙ্গে ছিলেন সিনেট স্বাস্থ্য কমিটির চেয়ার গুস্তাভো রিভেরা (ব্রঙ্কস)। দুজনই স্পষ্ট করে জানিয়েছেন যে, এ বিতর্কিত প্রক্রিয়া তারা ছেড়ে দেবেন না।

গত মাসে অনুষ্ঠিত শুনানিতে রাজ্যের স্বাস্থ্য কমিশনার জিম ম্যাকডোনাল্ডও শপথের অধীনে বলেছিলেন, তিনি বা তার দফতর দরপত্র প্রক্রিয়ার আগে পিএপিএলের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। ম্যাকডোনাল্ড বলেন, নিউইয়র্ক বড় একটি রাজ্য। এখানে অনেক কিছুই শোনা যায়। তবে আমার টিম সৎভাবে দরপত্র প্রক্রিয়া চালিয়েছে, সৎভাবে মূল্যায়ন করেছে এবং ভালো কাজ করেছে। আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করেছি। কিন্তু এখন যখন প্রমাণ উঠে আসছে যে, তার দফতরের কর্মীরা আসলেই পিএপিএলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, তখন কমিশনারের বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন আরো তীব্র হচ্ছে।

গভর্নর হোচুলের দফতর এখনো সরাসরি অস্বীকার করেনি যে বাজেট চূড়ান্ত হওয়ার আগে কোম্পানির সঙ্গে তাদের যোগাযোগ হয়েছিল কি না। তবে পূর্বে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, একক ফিসক্যাল ইন্টারমিডিয়ারি ব্যবস্থায় যাওয়ার প্রক্রিয়াটি আইন অনুযায়ী স্বাস্থ্য দফতর পরিচালিত একটি মানসম্মত দরপত্র প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই সম্পন্ন হয়েছে। কোনো কর্মকর্তা জানতেন না কে নির্বাচিত হবে, যতক্ষণ না প্রক্রিয়া শেষ হয়।

এ প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলার কারণে হোম কেয়ার প্রোগ্রামের ওপর নির্ভরশীল হাজারো পরিবার মারাত্মক সমস্যায় পড়েছে। কনজ্যুমার ডিরেক্টেড পারসোনাল অ্যাসিস্ট্যান্স প্রোগ্রাম (সিডিপ্যাপ) নামের এ কর্মসূচি নিউইয়র্কে দীর্ঘদিন ধরে কার্যকর। এখানে রোগী বা প্রতিবন্ধীরা নিজেরাই কেয়ারগিভার নির্বাচন করতে পারেন এবং সরকারি তহবিল থেকে তাদের বেতন দেওয়া হয়। কিন্তু নতুন করে পুরো প্রক্রিয়া পিএপিএলের হাতে যাওয়ার ফলে হাজার হাজার কেয়ারগিভারের বেতন আটকে গেছে। পরিবারগুলো একদিকে সেবার সংকটে, অন্যদিকে আর্থিক ধাক্কায় পড়েছে। প্রতিবন্ধী সন্তান বা বয়স্ক পিতামাতার যত্ন নেওয়া অনেক পরিবার এখন দিশেহারা।

বিতর্কিত এ চুক্তি নিয়ে রিপাবলিকানদের পাশাপাশি ডেমোক্র‍্যাটদেরও চাপ বাড়ছে হোচুল প্রশাসনের ওপর। রিপাবলিকানরা স্পষ্টতই এটিকে দুর্নীতির উদাহরণ হিসেবে দেখাতে চাইছে আর ডেমোক্র‍্যাটরা স্বচ্ছতার দাবি তুলছেন। ফলে গভর্নর হোচুলের রাজনৈতিক অবস্থানও ঝুঁকির মুখে পড়েছে। যেহেতু বিষয়টি ১১ বিলিয়ন ডলারের মতো বিশাল এক প্রোগ্রাম সম্পর্কিত, তাই এর রাজনৈতিক অভিঘাত আরো গভীর হতে পারে। ২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে এটি যদি প্রশাসনিক দুর্নীতি বা স্বজনপ্রীতির উদাহরণ হিসেবে প্রমাণিত হয়, তবে হোচুলের জন্য তা হবে একটি বড় সংকট।

শেয়ার করুন