৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৬:৫৪:০৮ পূর্বাহ্ন


ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন কঠোর ভিসা নজরদারি নীতি
৫৫ মিলিয়ন ভিসাধারী ও গ্রিন কার্ডধারী পর্যবেক্ষণের আওতায়
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৮-২০২৫
৫৫ মিলিয়ন ভিসাধারী ও গ্রিন কার্ডধারী পর্যবেক্ষণের আওতায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ওয়াশিংটনে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ও ন্যাশনাল গার্ড সদস্যদের সঙ্গে কথা বলছেন


ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানির্ভর অভিবাসন নীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। এখন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আগত বা ভিসাপ্রাপ্ত ৫৫ মিলিয়নের বেশি বৈধ ভিসাধারীর বিরুদ্ধে নিয়মিত নজরদারি চালানো হবে এবং যে কোনো ভিসা লঙ্ঘন, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বা জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি শনাক্ত হলে তাদের ভিসা বাতিল করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়নের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নতুন নীতির আওতায় শুধু অস্থায়ী ভিসাধারীরাই নয়, স্থায়ী বসবাসের স্বীকৃতি প্রদানকারী গ্রিনকার্ডধারীরাও নিয়মিত পর্যবেক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে। গ্রিনকার্ড মূলত একটি রেসিডেন্সি ভিসারূপে গণ্য হওয়ায় প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইন লঙ্ঘন বা নিরাপত্তা হুমকি পাওয়া গেলে ভিসা বাতিল এবং বিতাড়নের ব্যবস্থা নিতে পারে। এ পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নিয়ন্ত্রণকে আরো কঠোর করার লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে। এ কঠোর ভেটিং প্রক্রিয়া সরকারের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ও জনস্বাস্থ্য রক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে চালু করা হয়েছে।

প্রশাসন ঘোষণা করেছে, বর্তমানে বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত কিংবা যে কোনো সময় দেশটিতে প্রবেশের উদ্দেশ্যে ভিসাপ্রাপ্ত ৫৫ মিলিয়নেরও বেশি ভিসাধারীকে ‘কন্টিনিউয়াস ভেটিং’ বা ক্রমাগত নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। এ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে যাদের বিরুদ্ধে ভিসা লঙ্ঘন, অপরাধমূলক কার্যকলাপ বা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে কোনো প্রমাণ পাওয়া যাবে, তাদের ভিসা বাতিল এবং যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত থাকলে তাদের বিতাড়নের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্টেট ডিপার্টমেন্ট গত ২১ আগস্ট জানিয়েছে, এ পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ হলেও বর্তমানে তা ব্যাপকভাবে পরিচালিত হচ্ছে। নীতির আওতায় থাকা ব্যক্তিদের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের ইতিহাস, আইন লঙ্ঘনের রেকর্ড এবং বিদেশি গোয়েন্দা ও ইমিগ্রেশন সংস্থার তথ্য বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। এমনকি ভিসা ইন্টারভিউয়ের সময় আবেদনকারীদের মোবাইল ফোন ও অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহারের প্রাইভেসি সেটিংস বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে তাদের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ সহজ হয়।

স্টেট ডিপার্টমেন্ট আরো জানিয়েছে, জাতীয় ও জননিরাপত্তা রক্ষার লক্ষ্যে ট্রাম্প প্রশাসন ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে দ্বিগুণ ভিসা বাতিল করা হয়েছে। শুধু শিক্ষার্থী ভিসা বাতিলের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় চার গুণ বেড়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে প্রায় ৬ হাজার শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে, যার মধ্যে ৪ হাজার জনের বিরুদ্ধে আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ এবং ২০০-৩০০ জনকে সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার কারণে বহিষ্কার করা হয়েছে।

মাইগ্রেশন পলিসি ইনস্টিটিউটের গবেষক জুলিয়া জেলাট বলেন, ৫৫ মিলিয়ন ভিসাধারীর মধ্যে অনেকেই কেবল একবার যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন বা ভবিষ্যতে আর আসার সম্ভাবনা নেই। এত বিশাল জনগোষ্ঠীর ওপর নজরদারির জন্য বিপুল সম্পদ ও জনবল দরকার, যার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। অন্যদিকে কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের সিনিয়র ফেলো এডওয়ার্ড অলডেন বলেন, এই নীতি মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একটি সতর্কবার্তা। এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বোঝানো হচ্ছে যে বিদেশি কর্মী নিয়োগ করলে তাদের ঝুঁকির মুখে পড়তে হবে। এর ফলে বিদেশি শ্রমবাজার ও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বৃহস্পতিবার এক্স (সাবেক টুইটার)-এ ঘোষণা করেন, এখন থেকে বিদেশি ট্রাকচালকদের আর কোনো এইচ-২বি বা অনুরূপ কর্মসংস্থানভিত্তিক ভিসা ইস্যু করা হবে না। তিনি বলেন, বৃহৎ ট্রাক ও ট্রেইলার চালানো বিদেশিদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় মার্কিন সড়কে নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে এবং এতে আমেরিকান ট্রাকচালকদের চাকরি হুমকির মুখে।

এ সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর করা হয়েছে। পরিবহন বিভাগ জানিয়েছে, ট্রাকচালকদের ইংরেজি পড়া ও বোঝার সক্ষমতা থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, কারণ ইংরেজি না বোঝার কারণে অনেক দুর্ঘটনা ঘটেছে, যেখানে সাইন বোর্ড না পড়তে পারা ও যোগাযোগে ব্যর্থতা বড় ভূমিকা রেখেছে। বর্তমানে ইউরোপ ও এশিয়ার ৪০টি দেশের নাগরিক ভিসা ওয়েভার প্রোগ্রামের আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে তিন মাস পর্যন্ত ভিসা ছাড়াই অবস্থান করতে পারেন। তবে চীন, ভারত, রাশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান এবং আফ্রিকার প্রায় সব দেশের নাগরিকদের জন্য এ সুবিধা নেই। তাই তাদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য আবেদন ও কঠোর যাচাই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।

এ নতুন ভিসা পর্যালোচনা নীতি ও কড়াকড়ির ফলে অনেক অভিবাসী, শিক্ষার্থী এবং বিদেশি কর্মীর মধ্যে ভয় ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ থেকে আগত ভিসাধারীদের ওপর অতিরিক্ত নজরদারি চালানো হচ্ছে বলে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন অভিযোগ করেছে। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অনেকে বলছেন, এমন কড়াকড়ির ফলে যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার জন্য বিদেশি মেধাবীদের আগ্রহ কমে যেতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে বাস্তবায়ন হওয়া এই আক্রমণাত্মক ভিসা পর্যালোচনা নীতি যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে। এটি শুধু অবৈধ অভিবাসীদের নয়, বৈধভাবে অবস্থানরত ভিসাধারীদের ক্ষেত্রেও নজরদারি ও চাপ বাড়াচ্ছে। এর প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতি, শিক্ষা, বৈদেশিক সম্পর্ক ও মানবাধিকারের ওপর।

শেয়ার করুন