তরুণ প্রজন্মের জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী আতিফ আসলামের নাচে-গানে মুগ্ধ হলো নিউইয়র্ক প্রবাসী। গত ৬ সেপ্টেম্বর শনিবার বাংলাদেশি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান শাহ নেওয়াজ গ্রুপের আমন্ত্রণে নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ড নাসাউ কলোসিয়ামের বিশাল অডিটরিয়ামে হাজার হাজার দর্শক শ্রোতাকে দুই ঘন্টা ধরে গান গেয়ে মুগ্ধ করেন পাকিস্তানের এই সঙ্গীত শিল্পী।
নির্ধারিত সময়ের অনেক আগে থেকেই তুমুল বৃষ্টি উপক্ষো করে দলে দলে শ্রোতারা অডিটরিয়ামের বাইরে হাজির হতে থাকে। নিরাপত্তা চেকআপরে পর চারটি লেনে তরুণ-তরুণীসহ নানা বয়সের মানুষ ভেতরে প্রবেশ করতে থাকে। এ সময় ভেতরে দাঁড়িয়ে দর্শকরা যাতে ঝামেলামুক্তভাবে ভেতরে প্রবেশ করতে পারেন তা পর্যবেক্ষণ করেন শাহ নেওয়াজ গ্রুপের কর্ণধার শাহ নেওয়াজ ও এই গ্রুপের ভাইস প্রেসিডেন্ট রানো নেওয়াজ।
পুরো শো’র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দুই শতাধিক নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ দেয়া হয়। পাশাপাশি ভেতরে একাধিক স্টলে ছিলো হালকা খাবারের ব্যবস্থা। শ্রোতারা অনেকেই শো শুরুর আগে হালকা নাস্তা বা পানীয় খেয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন। বিকেল থেকেই শ্রোতারা অডিটরিয়ামের বাইরে ভীড় করতে থাকলেও সন্ধ্যা ৭টা থেকে তারা ভেতরে প্রবেশের সুযোগ পান। নিরাপত্তা আর্চওয়ে পেরিয়ে টিকিট স্ক্যান করে সবাইকে ভেতরে প্রবেশ করতে দীর্ঘ লাইন দেখা গেলেও কারো চোখেমুখে হতাশার ছাপ ছিলো না। সবারই চোখেমুখে ছিলো নতুন কিছু দেখার বা শোনার এক তীব্র আকাঙ্ক্ষা।
রাত নয়টার দিকে আতিফ আসলাম যখন মঞ্চে উঠেন সে সময় হাজার হাজার শ্রোতার করতালি আর উল্লাসে কেপে উঠে পুরো অডিটরিয়াম। শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর পরই কোনো বিরতি ছাড়াই টানা দুই ঘন্টা গান গেয়ে নেচে মাতিয়ে রাখেন সবাইকে। বিশাল আকারের অডিটরিয়ামে কানায় কানায় ভরা শ্রোতা থাকায় আতিফ আসলাম চারিদিকে ঘুরে ঘুরে অনেকের সাথে হাত মিলান। একই সাথে গানও করেন। অডিটরিয়ামের দুইপাশে ছোট বড় দুটো মঞ্চ তৈরি করা ছিলো তার জন্য। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে শুধুমাত্র বাংলাদেশি দর্শকরাই নয়, এই শো’তে হাজার হাজার পাকিস্তানী ও ভারতীয় প্রবাসীরাও উপভোগ করেন। তবে তরুণীদের সংখ্যা ছিলো চোখে পড়ার মতো।
সেন্ট জোনস কলেজের শিক্ষার্থী দিবা আলী ও আলেয়া খান জানান, এর আগেও তারা পাকিস্তানে আতিফ আসলামের শো লাইভ দেখেছে বা শুনেছে কিন্তু আজকের এই শো’র মতো আতিফ আসলামকে নাচানাচি করতে দেখেনি। টেক্সাস থেকে তার ভাইয়ের সাথে আনজুমান আরা এসেছিলেন প্রথমবারের মতো আতিফ আসলামের গান শুনতে। তার বয়স এখন ২০। আতিফের গান শুনে সে এতই খুশি যে আগামীতে যেখানেই শো হবে সেখানেই যেতে চায় সে।
নাদিয়া বকর আতিফ আসলামকে তার ভালোবাসা আর ভালো লাগার কথা জানাতে ছুটে এসেছিলেন ফ্লোরিডা থেকে। সাথে তার বাবা মা ছিলো। ছিলো তার স্বামী ইফতিখার খান। তারপরও কাগজে লিখে নিয়ে এসছিলেন , ‘আই লাভ ইউ আতিফ।’ সেটা আতিফ হাতে নিয়েছে এবং ফিরতি ভালোবাসাও প্রকাশ করেছে উন্মুক্ত মঞ্চে। তাদের আরও শত শত মেয়ের আবদার ছিলো আতিফ আসলামের সাথে হাত মেলানোর, হাতে স্পর্শ করার। সবাইকে খুশি করতে না পারওে পুরো অডিটরিয়াম ঘুরে ঘুরে অনেকের সাথে হাত মিলিয়েছে। সেলফি তোলার সুযোগ দিয়েছে।
সবকিছু মিলিয়ে এই শো ছিলো এক অভূতপূর্ব আনন্দ সন্ধ্যা। সবাই ফিরে যাবার আগে একবুক আনন্দ আর সুখানুভূতি নিয়ে ফিরে গেছে আবারও আতিফ আসলামের গান শোনার আশা নিয়ে।
নিউইয়র্কে কোনো বাংলাদেশী ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের আয়োজনে এতবড় বাজেটের আয়োজন ছিলো এটাই প্রথম। আয়োজক প্রতিষ্ঠান শাহ নেওয়াজ গ্রুপের প্রেসিডেন্ট শাহ নেওয়াজ জানিয়েছেন, খুব শিগগিরই তারা আরও বড় পরিসরে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে প্রবাসীদের বিনোদনের জন্য বিশ্বখ্যাত আরও কয়েকজন শিল্পিকে নিয়ে একটি গ্রান্ড শো’র আয়োজন করবেন। আতিফ আসলাম নিজেও খুশি এত বড় আয়োজনের জন্য। আতিফ নিজেই শাহ নেওয়াজ পরিবারের সাথে কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করে স্থানীয় ও ন্যাশনাল প্রমোটারের কাছে খবর পাঠান। অনুষ্ঠান শেষে শাহ নেওয়াজকে আতিফ আসলাম ধন্যবাদ জানান এতবড় হলভর্তি একটি সফল অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য। তিনি আবার তার আমন্ত্রণে নিউইয়র্কে আরও শো করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। শাহ নেওয়াজ আতিফ আসলামকে বলেন, তিনি খুব শিগগিরই আরও একটি শো করবেন তাকে নিয়ে। কিছু সময় শাহ নেওয়াজ পরিবারের সাথে আড্ডা দেয়ার পর একসাথে ক্যামেরাবন্ধি হন আতিফ আসলাম ও শাহ নেওয়াজ পরিবার।