৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ৬:৪৪:৩৭ অপরাহ্ন


২৪ দফার ইশতেহার ঘোষণা এনসিপির
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-০৮-২০২৫
২৪ দফার ইশতেহার ঘোষণা এনসিপির বক্তব্য রাখছেন নাহিদ ইসলাম


নতুন বাংলাদেশের ২৪ দফা সংবলিত ইশতেহার ঘোষণা করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপি। গত ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই ইশতেহার ঘোষণা করেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। এতে নতুন বাংলাদেশকে সেকেন্ড রিপাবলিক আখ্যা দিয়েছেন নাহিদ।

তিনি বলেন, আমাদের দলের জন্ম, এনসিপির জন্ম, আমাদের সব শ্রম আপনাদের স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য। আপনাদের অভিযোগ-অনুযোগ, প্রত্যাশা আমাদের ভাবনাকে করেছে গভীর, আমাদের লক্ষ্যকে করেছে সমৃদ্ধ। তাই ঠিক এক বছর পর আমরা আবার শহীদ মিনারে আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে, একটি নতুন বাংলাদেশের, আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিকের ২৪ দফা ইশতেহার ঘোষণা করছি।

এর আগে এনসিপির অন্যন্য নেতৃবৃন্দ বক্তব্য দেন। এরা হলেন, সামান্তা শারমিন, আখতার হোসেন, সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ, হান্নান মাসউদ, ডা. তাসনিম জারা প্রমুখ। 

২৪ দফার ইশতেহারের যা আছে

১। নতুন সংবিধান ও সেকেন্ড রিপাবলিক

ঔপনিবেশবিরোধী লড়াই, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানে জনগণের সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের আকাক্সক্ষার ভিত্তিতে আমরা বহু ভাষা ও সংস্কৃতি ও জাতির নতুন বাংলাদেশ তৈরি করবো। পুরোনোকে ঝেড়ে ফেলে, আমাদের রাষ্ট্রের নতুন যাত্রায়, আমাদের প্রথম অঙ্গীকারই হচ্ছে গণপরিষদের মাধ্যমে একটি নতুন সংবিধান। জুলাইয়ের আকাক্সক্ষা পূরণে, আমাদের এ নতুন সংবিধান, একনায়কতন্ত্র, পরিবারতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদী কাঠামোর বিলোপ করে একটি বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও জনকল্যাণমুখী সেকেন্ড রিপাবলিক গঠন করবে। আমাদের নতুন রাষ্ট্র ব্যক্তির জীবন, জীবিকা, মর্যাদা ও অধিকার সংরক্ষণ করবে। এ নতুন সংবিধান আমাদের রাষ্ট্রের আইন, বিচার ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার সুনির্দিষ্ট বিভাজন ও ভারসাম্য নিশ্চিত করবে। আমরা জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি নিশ্চিত করবো।

২। জলুাই অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি ও বিচার

এ জনপদের মানুষের উপনিবেশবিরোধী সংগ্রাম, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের কাক্সিক্ষত সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠার লড়াই এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানে একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গঠনের প্রত্যয়ই আমাদের প্রেরণা। আমরা জুলাইয়ে সংঘটিত গণহত্যা, শাপলা গণহত্যা, বিডিআর হত্যাকাণ্ড, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সময়ে সংঘটিত সব মানবতাবিরোধী অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করবো। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের পরিপূর্ণ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, আহতদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করে আজীবন তাদের পাশে দাঁড়াবো। জুলাইয়ের জাতীয় ঐক্য ও হাজারো শহিদের আত্মত্যাগের মহিমাকে ধারণ করার জন্য আমরা জুলাইয়ের স্মৃতি রক্ষা করবো এবং সব সময় ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ের সহযোদ্ধাদের পাশে থাকবো।

৩। গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সংস্কার

আমরা এমন একটি ইনসাফের রাষ্ট্র গড়ে তুলতে চাই যেখানে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো হবে জাতি-ধর্মবর্ণনির্বিশেষে পক্ষপাতহীন, নৈর্ব্যক্তিক, মানবিক ও গণমুখী। জনসেবাই হবে তাদের মূলমন্ত্র। একই সঙ্গে রাষ্ট্রের সব সাংবিধানিক ও বিধিবদ্ধ জবাবদিহি নিশ্চিতকারী প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে, যেন এ প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাধীন কাজ করে নির্বাহী বিভাগের কর্তৃত্বপরায়ণ হওয়ার প্রবণতাকে প্রতিহত করতে পারে। আমরা এমন একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই, যেখানে জনগণ শুধু নির্বাচনের দিন সব ক্ষমতার উৎস হবে না, বরং রাষ্ট্রপরিচালনার প্রতিটি ক্ষেত্রে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে। আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন আইন ও এর গঠন প্রক্রিয়ার মৌলিক পরিবর্তন সাধন করবো এবং রাষ্ট্র-কর্তৃক নির্বাচনী ব্যয় নির্বাহের আইন করার মাধ্যমে নির্বাচনে কালোটাকার প্রভাব হ্রাস করবো এবং সৎ ও যোগ্য প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ সৃষ্টি করবো।

৪। ন্যায়ভিত্তিক বিচারব্যবস্থা ও আইন সংস্কার

আমাদের রাষ্ট্রে স্বাধীন বিচারবিভাগ ক্ষমতাবানদের পক্ষে অন্ধ অবস্থান নিবে না, বরং মজলুমকে তার প্রাপ্য ন্যায়বিচার বুঝিয়ে দেবে। এছাড়া একটি সত্যিকারের জনগণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ে তুলতে আমরা ঔপনিবেশিক আমলের সব আইনকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের ভিত্তিতে যুগোপযোগী করবো। মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘন করবে এমন কোনো আইন তৈরি করা হবে না। আমরা বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয়কে পরিপূর্ণ আর্থিক স্বাধীনতা প্রদানসহ সম্পূর্ণভাবে ক্রিয়াশীল করবো। মামলার জট ও দীর্ঘসূত্রতা কমাতে আমরা বিচারক এবং আদালতের সংখ্যা বাড়াবো। আমরা মামলার নথিপত্রগুলোকে ডিজিটাল করা এবং মামলার অগ্রগতি অনলাইনে ট্র্যাকিংয়ের ব্যবস্থা করবো। আমরা দেওয়ানি দায় (ঈরারষ ষরধনরষরঃু)-এর ক্ষেত্রে আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তির বিষয়ে একটি আইনগত কাঠামো প্রণয়ন করবো। মানহানির মামলায় শুধু ভুক্তভোগী ব্যক্তিই আইনগত প্রতিকার চাইতে পারবেন এ বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করবো। আমরা গরিবদের জন্য বিনামূল্যে আইনগত সহায়তার ব্যাপ্তি বৃদ্ধি করবো। কিশোর সংশোধনী ব্যবস্থার মানবিকীকরণ ও সমাজে পুনর্বাসনের সুব্যবস্থা করবো।

৫। সেবামখুী প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন

বাংলাদেশে আমলাতন্ত্রকে দলীয়করণের মাধ্যমে শোষণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে; আমরা প্রশাসনে সব ধরনের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করবো। আমলাতন্ত্রকে সুদক্ষ ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে আমরা উন্নত প্রশিক্ষণ এবং বিভিন্ন খাতের যোগ্য ও বিশেষজ্ঞদের সরকারে অধিকতর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবো। নিয়োগ, বদলি, পদায়ন ও প্রমোশনের ক্ষেত্রে মেধা ও যোগ্যতাই হবে একমাত্র মানদণ্ড। সরকারি কর্ম কমিশনের সব প্রশাসনিক নিয়োগের ক্ষেত্রে সততা, নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে যথাযথ নিয়োগ-কাঠামো তৈরি করবো। সরকারি সেবায় কাগজ, সময় এবং সশরীরে উপস্থিতির প্রয়োজন কমিয়ে ডিজিটাল গভর্ন্যান্স চালুর প্রতি আমরা বিশেষ গুরুত্ব দেবো। রাষ্ট্রীয় সম্পদ চুরি-দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি ও দলীয়করণের মচ্ছব, বিচারহীনতা ও বিচারে দীর্ঘসূত্রতা পরিহার করে আমরা যে কোনো দুর্নীতির দ্রুত বিচার ও সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান করবো। সরকারের যে কোনো দাফতরিক দুর্নীতি প্রকাশ করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে বিশেষ আইনি সুরক্ষা দিতে আমরা ডযরংঃষবনষড়বিৎ চৎড়ঃবপঃরড়হ আইন প্রণয়ন করবো এবং এ লক্ষ্যে বিদ্যমান সব আইনি কাঠামোর যথাযথ সংস্কার করা হবে। এছাড়া পরিবার ও সমাজে দুর্নীতিবিরোধী মূল্যবোধ তৈরি ও সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে আমরা শিক্ষা কারিকুলামে আমূল পরিবর্তন আনবো এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশেষ কর্মসূচি চালু করবো।

বিস্তারিত ই-পেপারে দেখুন

শেয়ার করুন