৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৪:০৪:৩৪ পূর্বাহ্ন


নিষিদ্ধ সংগঠনের ঝটিকা মিছিল নিয়ে সরকার কঠোর অবস্থানে
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-০৯-২০২৫
নিষিদ্ধ সংগঠনের ঝটিকা মিছিল নিয়ে সরকার কঠোর অবস্থানে


আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঢিলেঢালা ভাবের সুযোগে প্রায়ই ঝটিকা মিছিল বের করে জনমনে আতঙ্ক তৈরি করছে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও সব ধরনের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞায় থাকা আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠন। ক্রমশ এ সংখ্যা বাড়ছে। তবে প্রতিটা মিছিল শেষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দু-চারজন অথবা এর বেশি আটক করলেও প্রভাব পড়ে না মিছিকারীদের মধ্যে। কোথাও মিছিল হতে পারে এমন কোনো আগাম গোয়েন্দা তথ্য না থাকায় অহরহ ঘটছে এটা।

এ নিয়ে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। কারণ যারা মিছিল করেন, তারা খুব দ্রুত কিছুক্ষণ মিছিল করে সটকে পড়েন। ওই সব মিছিলে ব্যানার ফেস্টুনও থাকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এসব রহস্য উদঘাটনে ব্যর্থ। বিগত সরকারের আমলেও এমনটা ঘটাতো সে সময়ে নিষিদ্ধ থাকা সংগঠন। কিন্তু সে সময় পুলিশ দিনে ও রাতে ওইসব এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রায় প্রতিটা সদস্যকে আটকে সমর্থ হতেন। থানায় নিয়ে তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ, এসবের উৎসসহ সব কার্যক্রমের রহস্য উদঘাটনে আপ্রাণ চেষ্টা চালাতেন। সেসব এখন নেই বললেই চলে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন। এমনি মুহূর্তে নিষিদ্ধ সংগঠনের তৎপরতা বৃদ্ধির অর্থ এর প্রভাব নির্বাচনে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। 

শুরু থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের আটক বা তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তাদের আইনের আওতায় নেওয়ার ব্যাপারে কিছুটা নমনীয় বিভিন্ন অঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবারী বাহিনী। এতে করে ক্রমশ তারা এভাবে রাস্তায় নামার সুযোগ পাচ্ছে বলে অনেকেই মনে করেন। 

বিষয়টা নিয়ে সরকারও উদ্বিগ্ন। গত ৭ সেপ্টেম্বর বিষয়টি নজরে এনে এ ব্যাপারে করণীয় কী সে ব্যাপারে আলোচনা করেছে সরকারের শীর্ষ মহল। ফলে এখন থেকে ঝটিকা মিছিলসহ বেআইনি সমাবেশের বিষয়ে মনিটরিং (নজরদারি) জোরদার করবে সরকার। এছাড়া এর নেপথ্যে যারা সক্রিয় রয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ওইদিন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্তসহ আরো বিভিন্ন বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় এ বৈঠক হয়।

পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। বৈঠকে ৯ জন উপদেষ্টা উপস্থিত ছিলেন। তারা হলেন-অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও শ্রম উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। এছাড়াও বৈঠকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে) খোদা বকশ চৌধুরী, পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

শফিকুল আলম বলেন, বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে ঝটিকা মিছিলসহ বেআইনি সমাবেশের বিষয়ে মনিটরিং জোরদার করতে হবে। এর নেপথ্যে যারা সক্রিয় রয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এক ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক সদস্য ছাগল কাণ্ডে আলোচিত মতিউর রহমানকে ঢাকার আদালত থেকে কিশোরগঞ্জ কারাগারে ফেরত নেওয়ার সময় ‘অনৈতিক সুবিধা’ নেওয়ার অভিযোগে পুলিশের ১১ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একজন এসআইসহ ১০ জন কনস্টেবলের বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নেওয়ার তথ্য ৬ সেপ্টেম্বর রাতে দিয়েছেন কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী। তিনি বলেন, আমাদের যে কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপিত হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে, এটাও তেমনি।

সাময়িক বরখাস্ত হওয়া পুলিশ সদস্যরা হচ্ছেন-এসআই আবুল কাশেম, কনস্টেবল মনিরুজ্জামান, মো. কবির হোসেন, ইমরান, নির্জন খান, শামীম আলম, মো. রনি হোসেন, শরীফুল ইসলাম, তানভির রহমান, মো. আবু সাইদ মিয়া ও রবীন্দ্র দাস।

পুলিশের এ বিষয়ক তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে গত ১২ আগস্টের এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে ‘উৎকোচ গ্রহণসহ’ বিভাগীয় নিয়ম-শৃঙ্খলার পরিপন্থী কাজের জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছিল।

ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জে যাওয়ার পথে ওইদিন মতিউর রহমানকে বহনকারী প্রিজন ভ্যানটি একটি রেস্তোরাঁর সামনে থামে। ভ্যান থেকে নেমে রেস্তোরাঁয় ঢুকে মতিউরের অবস্থান নেওয়া, আগে থেকে সেখানে থাকা একজনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কথা বলার একটি ভিডিও ভাইরাল হলে পুলিশ তদন্ত কমিটি গঠন করে।

গত ১২ অগাস্ট ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে মতিউর রহমান হাজিরা দিয়ে ফেরার সময় তাকে বহনকারী প্রিজন ভ্যানটি নরসিংদীর নিরালা হাড্ডি হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের সামনে থামে। বিকাল সোয়া ৫টা থেকে প্রায় এক ঘণ্টা সেখানে তিনি অবস্থান করেন। এ সময় প্রিজন ভ্যানকে পাহারা দিয়ে নিয়ে যাওয়া পুলিশের গাড়িও সেখানে ছিল।

প্রায় এক ঘণ্টা রেস্তোরাঁয় অবস্থান, বিশেষ কক্ষে খাওয়া-দাওয়া এবং পুলিশের স্বাভাবিক আচরণের পাশাপাশি সাদা পোশাকের এক ব্যক্তির সঙ্গে মতিউরের ঘনিষ্ঠভাবে ঘাড়ে হাত দিয়ে কথা বলতে এবং হাঁটাচলা করতে দেখা যায়। এ ভিডিও প্রকাশ হওয়ার পর এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরে কমিটি তদন্ত প্রতিবেদনে ১১ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ‘উৎকোচ গ্রহণ করাসহ’ বিভাগীয় নিয়ম শৃঙ্খলার পরিপন্থী, অসৎ উদ্দেশ্য, অসদাচরণ ও জনসম্মুখে পুলিশের ভাবমূর্তিকে চরমভাবে ক্ষুণ্ন করার কথা তুলে ধরে।

এ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তাদের সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেয় জেলা পুলিশ, বলছেন কর্মকর্তারা।

শেয়ার করুন