৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০২:০৫:৫৫ অপরাহ্ন


প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিরোধে না জড়াতে বিএনপিকে নির্দেশ খালেদা জিয়ার
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-০৬-২০২৫
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিরোধে না জড়াতে বিএনপিকে নির্দেশ খালেদা জিয়ার খালেদা জিয়া ও ড. মুহাম্মদ ইউনূস


প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দলের সিনিয়র নেতাদের ‘দ্বন্দ্বে না জড়ানোর’ পরামর্শ দিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গত ৭ জুন শনিবার ঈদুল আজহার সন্ধ্যায় স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সৌজন্য সাক্ষাতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী তার রাজনৈতিক সহকর্মীদের এই পরামর্শ দেন বলে জানা গেছে। সাক্ষাৎকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের কাছে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণের বিষয়ে বেগম জিয়া ইতিবাচক অবস্থান ব্যক্ত করেন। আগামী ১৩ জুন লন্ডনের একটি হোটেলে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তারেক রহমানের সাক্ষাতের কথা রয়েছে।

স্থায়ী কমিটির অন্তত পাঁচজন সদস্যের সঙ্গে ঈদের দিনের সাক্ষাতের বিষয়ে এই ঢাকাস্থ একটি মিডিয়ার সঙ্গে আলাপ করে নিশ্চিত হওয়া গেছে বিষয়টি। এদের মধ্যে কেউ কেউ উদ্ধৃত হতে সরাসরি মানা করেন। তবে উল্লেখ করেন যে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ পাওয়ার পর তারেক রহমান বিভিন্ন সোর্সে মতামত গ্রহণ করেন। সাক্ষাতের সম্ভাব্যতা, আলাপের বিষয়, দেশ ও দলের অবস্থানসহ নানা ইস্যুতে তারেক মতামত সংগ্রহ করেন। এক্ষেত্রে তার অ্যাডভাইসরি পরিষদের সদস্যরাও ভূমিকা রাখেন।

শনিবার (৭ জুন) শুভেচ্ছা বিনিময়কালে ফিরোজায় ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান। মঙ্গলবার (১০ জুন) দুপুরে তিনি ওই মিডিয়াকে বলছিলেন, ‘আসলে আমরা ঈদের দিন যাই শুধু শুভেচ্ছা বিনিময়ে। আর ম্যাডামের সঙ্গে সাধারণত এত ভিড় থাকে, লোকজন থাকে, যে কারণে আমরা অন্য কোনও আলোচনা করি না। সে কারণে সেটা সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎ, শুভেচ্ছা। দুয়েকটা ছুটকা কথাবার্তা হয়তো হয়।’

ঈদের দিন খালেদা জিয়ার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সেলিমা রহমান ঈদের দিন খালেদা জিয়ার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সেলিমা রহমান। ‘এমনি আমাদের যদি প্রয়োজন হয় তার সঙ্গে দু-একটা কথা বলার, সেটা হয়তো বলে কেউ। আর এই সিচুয়েশন ক্রিয়েট হয়েছে (প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেক রহমানের সাক্ষাৎ) সেটা তো ঈদের পরে’, যোগ করেন সেলিমা রহমান।

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দূরত্ব বা দ্বন্দ্বে না যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, ‘ম্যাডাম জিয়া প্রধান উপদেষ্টার ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে। তার এমন অবস্থান স্বাভাবিক।’

‘সহনীয় পর্যায়ে তো অবশ্যই আসতে হবে’

নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময়সীমা নিয়ে সরকারের সঙ্গে বিএনপির যে দূরত্ব সে বিষয়ে বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থান নিয়ে জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির নেতা সেলিমা রহমানের জবাব, ‘ওইটা নিয়ে ওইভাবে ম্যাডামের সঙ্গে...। আমি প্রথমেই বলেছি, এটা নিয়ে ম্যাডামের সঙ্গে আলোচনা হয়নি। এটা নিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে ম্যাডামের কথা হতে পারে কিনা, এটা তো আমরা জানি না। আমাদের সঙ্গে সেভাবে... মহাসচিবের সঙ্গে হয়তো... (থেমে), সেটা আমি জানি না।’

এক্ষেত্রে নির্বাচনের বিষয়ে সরকারের যে দৃশ্যমান দূরত্ব, সেটা কি সহনীয় পর্যায়ে আসতে পারে- এমন প্রশ্নের উত্তরে বিএনপির সিনিয়র নেতা সেলিমা রহমান বলেন, ‘দেখুন, সহনীয় পর্যায়ে তো অবশ্যই আসতে হবে। তা না হলে তো শুধু দল তো না; আমাদের দল জনগণের প্রতিনিধিত্ব করি, একটি দেশের প্রতিনিধিত্ব করি, দেশেরও একটা ক্ষতি হবে। জনগণের ক্ষতি তো অবশ্যই হবে। সেই লক্ষ্যে সহনীয় পর্যায়ে তো অবশ্যই আসতে হবে। সেজন্য মুখোমুখি অবস্থানে আমরা এখনও যাইনি।’ ‘তবে এটা যত আলাপ-আলোচনা হবে (আমাদের মধ্যে আলোচনা হয় না), আলোচনা দরকার। আলোচনার মধ্য দিয়ে একটা সমঝোতায় তো আসতে হয়, এটাই হচ্ছে কথা’, বলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী সেলিমা রহমান।

‘সবার অবস্থান এক, কোনও দ্বন্দ্ব নেই’

জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আজকে যথারীতি আমাদের মহাসচিব আমাদের দলের অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। আমাদের দলের স্থায়ী কমিটির অবস্থান এটাই যে আমরা এই সাক্ষাৎকে পজিটিভভাবে দেখছি। আমাদের সঙ্গে সরকারের কোনও দ্বন্দ্ব নেই। আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বাস্তবতার নিরিখে নির্বাচনের বিষয়ে মত দিয়েছেন।’

‘৫৪ বছরে যার ওপর ভিত্তি করে আমাদের দেশ দাঁড়িয়ে আছে, সেই নিরিখে তিনি বলেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তি থাকতে পারে, কিন্তু আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশের রাজনৈতিক স্বার্থ, দেশের গণতন্ত্রের, জনগণের স্বার্থের নিরিখে মতামত দিয়েছেন। তিনি ইতোমধ্যে বলেছেন, সবার আগে দেশ।’ ‘বাংলাদেশের স্বার্থের জন্য আমাদের দলের নেতা এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠক থেকে সেটাই আশা করছি আমরা। আমরা মনে করি, দুজনের আলাপের মধ্য দিয়ে ইতিবাচক অবস্থান উঠে আসবে’, উল্লেখ করেন জাহিদ হোসেন।

এক্ষেত্রে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অবস্থান কী? এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, ‘ম্যাডামের অবস্থান, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের অবস্থান, দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের অবস্থানও এটাই। এখানে কোনও ধরনের দ্বন্দ্ব বা বিরোধ নেই।’ ঈদের দিন বেগম জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের পর অপেক্ষমান সাংবাদিকদের সামনে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা ঈদের দিন বেগম জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের পর অপেক্ষমান সাংবাদিকদের সামনে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা 

ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে স্থায়ী কমিটি ‘সর্বসম্মত একমত’ সোমবার (৯ জুন) রাতে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের অনুষ্ঠিত বৈঠকে সদস্যদের কাছে মতামত জানতে চান তারেক রহমান। স্থায়ী কমিটির সূত্রগুলো জানায়, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সবার মতামত জানতে চাইলে সদস্যরা মোটামুটি ইতিবাচক মত দেন। একজন সদস্যের ভাষ্য, ‘মোটামুটি সর্বসম্মতভাবে সাক্ষাতের বিষয়ে মত দেওয়া হয়েছে। কেউ না করে নেই।’

১৩ জুন অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে তারেক রহমানের সাক্ষাতে কেবল নির্বাচনই নয়, দেশের আরও অন্যান্য বিষয়ও থাকবে বলে জানান একজন সদস্য। সৌজন্য: বাংলা ট্রিবিউন 

শেয়ার করুন