৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ৬:৩১:৪২ অপরাহ্ন


মিশিগানে দুই দিনব্যাপী প্রাণের মহোৎসব
শাহ্‌ বদরুজ্জামান রুহেল
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-০৮-২০২৫
মিশিগানে দুই দিনব্যাপী প্রাণের মহোৎসব মিশিগানে বাংলাদেশী আমেরিকান মেলায় মানুষের উপচেপড়া ভিড়


মিশিগানের ওয়ারেন সিটিতে অনুষ্ঠিত হলো দুই দিনব্যাপী ১৬তম বাংলাদেশি আমেরিকান ফেস্টিভ্যাল, যা এ বছর ২৫ হাজারেরও বেশি দর্শকের অংশগ্রহণে এক নতুন ইতিহাস তৈরি করেছে। গত ২ ও ৩ আগস্ট অনুষ্ঠিত এই উৎসবে মিশিগানের বাংলাদেশি কমিউনিটির সদস্যরা ছাড়াও বহু আমেরিকান এবং অন্যান্য কমিউনিটির মানুষ যোগ দিয়েছিলেন। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব মিশিগান (বাম) কর্তৃক আয়োজিত এই প্রাণের মেলা মিলনমেলায় পরিণত হয়।

দুই দিনব্যাপী ফেস্টিভ্যালে বাংলাদেশের খ্যাতনামা শিল্পীদের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা দর্শকদের মাতিয়ে তোলে। প্রথম দিনে মঞ্চ মাতান জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী শাহনাজ বেলি এবং লোকগানের প্রাণপুরুষ বাউল কালা মিয়া, তরুণ সংগীতশিল্পী অনিক রাজসহ স্থানীয় শিল্পীবৃন্দ।

দ্বিতীয় দিনে জনপ্রিয় পপ তারকা প্রীতম হাসান ও প্রতীক হাসান ভ্রাতৃদ্বয়ের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স উপহার দেন হাজার হাজার দর্শকদের। এছাড়াও পরিবেশনায় ছিল স্থানীয় ব্যান্ড টেন এন হাফ মাইল ও হৃদম অব বাংলাদেশ । হাওয়াই গীটারে দেশের গান বাজিয়ে দর্শকদের মন জয় করেন কামাল উদ্দিন।

এ উৎসবে গেস্ট অব অনার হিসাবে উপস্থিত ছিলেন-মিশিগানের সেক্রেটারি অব স্টেট জোসেলিন বেনসন, স্টেট সিনেটর ম্যালোরি ম্যাকমোরো, স্টেট রিপ্রেজেন্টেটিভ মাইক ম্যাকফল, স্টেট রিপ্রেজেন্টেটিভ রন রবিনসন ও ওয়ারেন সিটির মেয়র লরি স্টোন। আমন্ত্রিত অতিথির মধ্যে ছিলেন নিউইয়র্ক থেকে আগত বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম, বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক ট্রাস্টি ও বাংলাদেশি আমেরিকান কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন-বাকার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আব্দুল হাসিম হাসনু, বাংলাদেশ এসোসিয়েশন ট্রাস্টি জুনেদ চৌধুরী, বাকার সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান রুহেল, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক রায়হান জামান রানা, অরল্যান্ডো থেকে আগত নর্থ আমেরিকার প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি জুয়েল সাদত। এছাড়াও উপস্থিতি ছিলেন হেমট্রামিক সিটির মেয়র পদপ্রার্থী কাউন্সিলর মুহিত মাহমুদ, ট্রয় সিটি কাউন্সিল পদপ্রার্থী সাদেক রহমান সুমন, মিশিগান ডেমোক্রেটিক পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান শাহিন, এমআইবিএডিসি'র প্রেসিডেন্ট সুলেমান বাহার।

উৎসবে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন কাউন্সিলম্যান জনাথন লেফার্টি, তোফায়েল হোসেন, সানী জায়গীরদার, গিয়াস তালুকদার, বাম উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল আহাদ, ট্রাস্টি মেম্বার আহাদ মোহাম্মদ, সাবেক সভাপতি ও ট্রাস্টি মেম্বার মতিন চৌধুরী, ফিটজেরাল্ড স্কুলের সাবেক ফুটবল কোচ গ্যারি স্কোপ, ওয়ারেন পুলিশ ডিপার্টমেন্টের ক্যাপ্টেন ম্যাথিউ ডিলেনবেক, ডেপুটি পুলিশ কমিশনার চার্লস রাস্টন, বাম উপদেষ্টা লুৎফুর বারী নিয়ন, ক্রাইম কমিশনার ও বাম উপদেষ্টা সুমন কবির প্রমুখ।

উৎসবের উদ্বোধনী পর্বে সভাপতিত্ব করেন বামের সভাপতি জাবেদ চৌধুরী। সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুমন কবির ও প্রচার সম্পাদক তাহমিদ চৌধুরীর যৌথ সঞ্চালনায় বাংলাদেশ ও আমেরিকার জাতীয় সঙ্গীতের সাথে শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে ফেস্টিভ্যালের উদ্বোধন হয়।

শুরুতে মাইলস্টোন স্কুল ট্র্যাজেডিতে নিহতদের ও নিউইয়র্কে আঁততায়ীর গুলিতে নিহত পুলিশ অফিসার দিদারুল আলম স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। উল্লেখ্য, র‌্যাফেল ড্র থেকে প্রাপ্ত আয়ের একটা অংশ মাইলস্টোন স্কুলে আহতদের এবং নিহত পুলিশ অফিসার দিদারুল ইসলামের পরিবারের সহায়তায় প্রদান করা হবে। উৎসবের সমাপনী পর্বে র‌্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হয়। সব শেষে সভাপতি জাবেদ চৌধুরী দুই দিনের ফেস্টিভ্যাল সফলভাবে সম্পন্ন করায় মিশিগানবাসী ও সকল স্পন্সর, সংগঠক এবং ফেস্টিভ্যালের সাথে সম্পৃক্ত সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ১৬তম বাংলাদেশি আমেরিকান ফেস্টিভ্যালের পর্দা টানেন।

দুই দিনের সাংস্কৃতিক পর্ব সঞ্চালনায় ছিলেন- শারমীন তানিম, অদ্বিতি বর্ণা ও রাহি এহিয়া। নৃত্য পরিবেশন করেন মহুয়া দাস ও নিবেদিতা বড়ুয়া।

উৎসব উপলক্ষে বাম তিনটি গৌরবজনক সরকারি প্রোক্লেমেশন (ঘোষণাপত্র) লাভ করে। এগুলো হলো-মিশিগান রাজ্য সরকার কর্তৃক গভর্নর প্রোক্লেমেশন, স্টেট সিনেটর ও স্টেট রিপ্রেজেন্টেটিভদের স্বাক্ষরিত একটি প্রোক্লেমেশন, মার্কিন সিনেটর এলিসা সটকিন কর্তৃক প্রদত্ত একটি প্রোক্লেমেশন, যা বাংলাদেশি-আমেরিকান কমিউনিটির অবদানের স্বীকৃতি দেয় এবং ওয়ারেন সিটির মেয়র লরি স্টোন প্রদত্ত একটি প্রোক্লেমেশন, যা এই উৎসবের অব্যাহত ঐতিহ্য ও সাফল্যকে সম্মান জানায়।

বাম-এর সভাপতি জাবেদ চৌধুরী বলেন,“এই বছরের উৎসব আমাদের জন্য একটি ইতিহাস তৈরি করেছে। হাজার হাজার মানুষের অংশগ্রহণ, প্রখ্যাত শিল্পীদের পরিবেশনা এবং রাষ্ট্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিতি-সব মিলিয়ে এটি ছিল এক অবিস্মরণীয় সংস্কৃতিক মহামিলন। এবারের ফেস্টিভ্যালে ছিল- ৫৪টি ভেন্ডর স্টল, যেগুলোতে ছিল খাবার, পোশাক, হস্তশিল্প ও অন্যান্য পণ্য। এছাড়াও কমিউনিটি রিসোর্স বুথ, ভিআইপি আসন এবং পরিবারসহ আগতদের জন্য নানা সুবিধা ছিল। এই উৎসবকে সফল করায় বামের পক্ষ থেকে সকল অংশগ্রহণকারী, শিল্পী, স্বেচ্ছাসেবক, স্পন্সর, নিরাপত্তাবাহিনী এবং ওয়ারেন সিটি প্রশাসনকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানানো হয়।

শেয়ার করুন