নিউইয়র্ক স্টেট ১৬ বছরের কম বয়সী শিশুদের স্মার্টফোনে অ্যাপ ডাউনলোডের আগে অভিভাবকদের সম্মতি বাধ্যতামূলক করার আইনের প্রতি প্রবল সমর্থন জানিয়েছেন অভিভাবকরা। নতুন এক জরিপে দেখা গেছে, ৮০ শতাংশেরও বেশি অভিভাবক এমন একটি আইনের পক্ষে রয়েছেন যা তাদের সন্তানদের অনলাইন নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং প্রযুক্তি ব্যবহারে পিতামাতার অংশগ্রহণ বাড়াবে। তাদের সন্তানদের ডিজিটাল নিরাপত্তা রক্ষা করবে এবং অনলাইন ঝুঁকি হ্রাস করবে। গবেষণাটি পরিচালনা করেছে গ্লোবাল স্ট্র্যাটেজি গ্রুপ এবং প্রকাশ করেছে ব্ল্যাক ইনস্টিটিউট, যেখানে অভিভাবকরা তাদের উদ্বেগ, প্রত্যাশা ও সম্ভাব্য সমাধানের দিক নির্দেশ করেছেন। এতে নিউইয়র্কের ৬০০ অভিভাবকের মতামত নেওয়া হয়, যাদের সন্তানের বয়স ১৮ বছরের নিচে। এর মধ্যে ২০৬ জন কৃষ্ণাঙ্গ অভিভাবকের মতামত অতিরিক্তভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যাতে জাতিগতভাবে সুনির্দিষ্ট চিত্র পাওয়া যায়। জরিপের ফলাফলে চারভাগ মার্জিন অব এরর রয়েছে।
জরিপে অংশ নেওয়া ৪৬ ভাগ কৃষ্ণাঙ্গ অভিভাবক শক্তভাবে এই আইনের পক্ষে মত দেন এবং সামগ্রিকভাবে ৪১ ভাগ অভিভাবকও এ বিষয়ে শক্ত সমর্থন জানান। জরিপে আরো দেখা গেছে, বেশির ভাগ অভিভাবক এমন একটি কেন্দ্রীয় অ্যাপ অনুমোদন ব্যবস্থা চান, যেখানে একটি নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্ম থেকে সব অ্যাপের ডাউনলোড নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। তারা মনে করেন, একক ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা অভিভাবকদের পক্ষে তাদের সন্তানদের জন্য নিরাপদ ডিজিটাল পরিবেশ নিশ্চিত করার কাজ সহজ করে তোলে।
‘দ্য ব্ল্যাক ইনস্টিটিউট’-এর নির্বাহী পরিচালক তুলিকি রবার্টসন বলেন, ‘নিউ ইয়র্কের অভিভাবকরা স্পষ্ট করে জানিয়েছেন- তারা চান সন্তানরা কী অ্যাপে প্রবেশ করছে, তার ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ থাকুক। এই গবেষণা আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তাকে আরো জোরালো করে তুলেছে। জরিপে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে আসে- ৭৬ ভাগ অভিভাবক অ্যাপ স্টোরগুলো যেমন- অ্যাপল অ্যাপ স্টোর ও গুগল প্লে স্টোরের ওপর তাদের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখার ক্ষেত্রে আস্থা রাখেন। তবে মাত্র ২৪ ভাগ অভিভাবক একক অ্যাপগুলোর ওপর বেশি আস্থা রাখেন।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে দুটি অঙ্গরাজ্যে এমন আইন পাস হয়েছে-ইউটাহ এবং আলাবামা। ইউটাহ মার্চে ‘অ্যাপ স্টোর অ্যাকাউন্টেবিলিটি অ্যাক্ট’ পাস করে, যেখানে শিশুদের অ্যাপ ব্যবহারের আগে তাদের বয়স যাচাই, পিতা-মাতার অ্যাকাউন্টের সঙ্গে লিঙ্ক করা এবং অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক। আলাবামা সদ্য দুটি আইন পাস করেছে, যার মধ্যে একটি হলো নতুন স্মার্টফোন ও ট্যাবলেটে ফিল্টার বাধ্যতামূলক করা এবং অন্যটি অ্যাপ ডাউনলোডের জন্য বয়স যাচাইয়ের নিয়ম চালু করা। আলাস্কা, সাউথ ক্যারোলিনা ও টেক্সাসেও এমন আইনের খসড়া প্রণয়ন হচ্ছে।
তবে বড় প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর মধ্যে এই নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। মেটা, এক্স (ঢ) ও স্ন্যাপ ইনক ইউটাহর আইনকে সমর্থন জানিয়েছে এবং কংগ্রেসকে অনুরোধ জানিয়েছে সারাদেশে এ ধরনের উদ্যোগ নিতে। তাদের মতে, অ্যাপ স্টোরই পারিবারিক নিয়ন্ত্রণ ও অনুমোদনের জন্য সবচেয়ে কার্যকর জায়গা। অন্যদিকে অ্যাপল ও গুগল এ ধরনের আইনকে ব্যক্তিগত গোপনীয়তায় হস্তক্ষেপ বলে মনে করছে এবং এর বিরোধিতা করেছে। অ্যাপল লুইজিয়ানার এক অনুরূপ আইন ঠেকাতে সক্রিয়ভাবে লবিং করেছে।
এই গবেষণার ফলাফল স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দেয় যে, নিউ ইয়র্কের অভিভাবকরা চান তাদের সন্তানদের ডিজিটাল জগতে প্রবেশের আগে যেন তারা সক্রিয়ভাবে ভূমিকা রাখতে পারেন। অ্যাপ ডাউনলোডের ক্ষেত্রে অভিভাবকের সম্মতি বাধ্যতামূলক করার আইন শুধু প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা নয় বরং পরিবারের সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকারকেও শক্তিশালী করে তোলে। বর্তমানে ইউটাহ ও আলাবামার মতো কিছু রাজ্যে এমন আইন কার্যকর হলেও নিউইয়র্কসহ আরো অনেক রাজ্যে এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের দাবি ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য থাকলেও অভিভাবকদের কণ্ঠস্বর এবং উদ্বেগ আজকের বাস্তবতায় আইনপ্রণেতাদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করছে- শিশুদের ডিজিটাল সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার সময়।