৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ৬:২২:১০ অপরাহ্ন


বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ কবে?
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩০-০৪-২০২৫
বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ কবে?


পুলিশ প্রশাসন আস্থাহীন, বেসরকারি প্রশাসন অগোছালো অনেকটাই নিষ্ক্রিয়, সমাজ জীবন অস্থির, নিরাপত্তাহীন। কথায় কথায় ঘেরাও অবরোধ ও ভাঙচুর। অন্তর্বর্তী সরকার সার্বিক নিয়ন্ত্রণ নিতে পেরেছে বলে মনে হয় না। একটি সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজন হবে শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন, স্বাধীন নিরপেক্ষ বিচারব্যবস্থা এবং দক্ষ আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা। এমন না যে ৩-৬-৯ মাস সময় পেলেই অন্তর্বর্তী সরকার সবকিছু পাল্টে ফেলবে। সরকার আর যাই করুক ভঙ্গুর অর্থনীতিকে অনেকটাই সামলে নিয়েছে, বাজার সিন্ডিকেটকে নিয়ন্ত্রণে এনেছে, গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছে। মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কার কার্যক্রম চালু থাকার পাশাপাশি ডিসেম্বর ২০২৫-এর মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জোর দাবি জানাচ্ছে। সরকার এখনো দ্বিধাগ্রস্ত। তবে সরকার প্রধান ইঙ্গিত দিয়েছেন ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে জুন ২০২৬-এর মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে অতি আগ্রহী দলগুলোর উচিত নির্বাচন অনুকূল পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য সরকারকে সহায়তা প্রদান। 

বিশ্ব পরিস্থিতি কিন্তু পরাশক্তিগুলোর দ্বন্দ্বে টালমাটাল। ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন যুক্তরাষ্ট্র সরকার চীনকে নিশানা বানিয়ে বিশ্বজোড়া রফতানি শুল্ক যুদ্ধের নাম বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেছে। এমনিতেই নানা কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি সংকটে, ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট, বিনিয়োগ শূন্যের কোঠায়, জ্বালানি সংকট, পুঁজি সংকটে বন্ধ হয়েছে অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান, বেকার সমস্যা প্রকট হচ্ছে, জুলাই-আগস্ট সরকার পটপরিবর্তনকালে অনেক দাগি আসামি জেল থেকে পালিয়েছে, লুটপাট হয়েছে থানার অস্ত্র ভান্ডার। নির্বাচনের সময় অস্ত্র, কালো অর্থ, পেশিশক্তির অপব্যবহার রোধ করা সহজ হবে না। তারপর পার্শ্ববর্তী মায়ানমারের চলমান সংকটের প্রতিক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে বাংলাদেশ ভূরাজনীতির চারণভূমিতে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রভাবশালী প্রতিবেশী ভারত একতরফাভাবে কিছু ব্যবস্থা নেওয়ায় বাংলাদেশকে নানা বিকল্প পন্থা অবলম্বন করতে হচ্ছে। বর্তমান সরকারের প্রভাবমুক্ত বিদেশি নীতি বিশেষত চীনের সঙ্গে বাড়তি সহযোগিতা এবং পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন ভালো চোখে দেখছে না ভারত। বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের কিছু সংবাদ মাধ্যমে অপপ্রচার চলছে। 

এ কথাও অস্বীকার করা যাবে না নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার ছাড়া বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ঘরোয়া এবং আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জসমূহ অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে দীর্ঘদিন সামাল দেওয়া সম্ভব হবে না। 

সবাই জানে বাংলাদেশে তৃণমূলে দুই ধারার রাজনীতি বিদ্যমান। একটি আওয়ামী লীগ এবং সমমনা দলগুলোর প্রভাবিত ধর্মনিরপেক্ষ ধারা, উন্নতি বিএনপি প্রভাবিত জাতীয়তাবাদী ভাবধারা, এর বাইরে আছে জামাতের বলয় এবং শহরকেন্দ্রিক কয়েকটি প্রান্তিক দল। জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসল এনসিপি দল গঠিত হয়েছে। দলটির প্রতি তরুণসমাজের একটি অংশের সহানুভূতি থাকলেও দেশব্যাপী রাজনৈতিক প্রভাব সৃষ্টি এখনো আওতার বাইরে। আওয়ামী লীগ এবং সমমনা দলগুলো কোণঠাসা। আন্তর্জাতিক চাপে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের বিশাল ভোট ব্যাংক নিঃসন্দেহে নির্বাচনে জয়-পরাজয় নির্ধারণে ভূমিকা রাখবে। যত চাপ থাকুক সরকার আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার মতো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেবে বলে মনে হয় না। 

যাহোক নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে হওয়া সুবিধাজনক হবে। ফেব্রুয়ারি শেষ থেকে মার্চব্যাপী রোজা, এপ্রিল-মে ঝড় বৃষ্টির সময়। তবে দ্রুত নির্বাচন অনুকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে হলে সব দলকে সরকারের পাশে দাঁড়াতে হবে। সংস্কার বিষয়ে সম্মত কাজগুলো দ্রুত সমাধান করতে হবে। সরকারে থাকা পক্ষপাতদুষ্ট ব্যক্তিদের পরিবর্তন করে অন্তর্বর্তী সরকারকে সত্যিকারের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপ দিতে হবে। যে দলগুলো নির্বাচন করবে তাদের উচিত কীভাবে দেশের মৌলিক সমস্যাগুলো সমাধান করবে সেই বিষয় জনতার সামনে উপস্থাপন। এবার কিন্তু তরুণ সমাজের একটি বিশাল অংশ ভোটে অংশগ্রহণ করবে। ছলচাতুরি করে এবার পার পাওয়া যাবে না। আমজনতা চায় সত্যিকারের সৎ, নিবেদিত, তৃণমূল জনদরদি মানুষ দেশ শাসনের সুযোগ পাক। 

বর্তমানে কিন্তু অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ-পরিস্থিতি নেই। পরিস্থিতি সৃষ্টিতে সব অংশীজনকে সক্রিয় হতে হবে। সরকার সব পক্ষকে সাথি করে দ্রুত পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।

সংঘাতের পথে দক্ষিণ এশিয়া ভারত শাসিত কাশ্মীরে জঙ্গি আক্রমণ ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দক্ষিণ এশিয়া। ভারত পাকিস্তান পাল্টাপাল্টি ব্যবস্থা গ্রহণের পরিপ্রেক্ষিতে যুদ্ধ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। পারমাণবিক শক্তিধর দেশ দুটির মধ্যে যুদ্ধ লেগে গেলে গোটা দক্ষিণ এশিয়া অস্থির হবে সন্দেহ নেই। পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসী সংগঠন লস্করে তৈয়্যবা জঙ্গি আক্রমণের দায়িত্ব ঘোষণা দিলেও ভারত কালবিলম্ব না করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করে। প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান একই ধরনের ব্যবস্থা ঘোষণা দেওয়ায় সীমান্ত পরিস্থিতি এখন নাজুক। কাশ্মীর নিয়ে ভারত পাকিস্তান কয়েকবার যুদ্ধ করেছে। কিন্তু এবার সীমিত সময়ের যুদ্ধ হলেও পরিণতি হবে ভয়াবহ। এমনিতেই দক্ষিণ এশিয়ায় মিয়ানমারে সেনাভানীর সঙ্গে বিদ্রোহী বাহিনীগুলোর যুদ্ধ সীমানা পেরিয়ে বিস্তৃত হওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। অঞ্চলটি পরাশক্তির ভূরাজনীতির লীলাভূমিতে পরিণত হতে পারে। পাক-ভারত যুদ্ধ হলে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়ার কি ভূমিকা হবে আন্দাজ করা কথন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। ভারত চিকেন নেক নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে। 

ভারতের উচিত ছিল ঘটনার পর পরই দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ না করে অনুসন্ধান করা এবং নিশ্চিত হয়ে কিছু করা। ঘটনা মাত্র দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। আশা করে পরাশক্তিগুলো উত্তেজনা প্রশমনে কাজ করবে। দুই দেশ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে বিশ্বশান্তি বিনষ্ট হবে। প্রতিক্রিয়াশীল চক্র ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার সুযোগ পাবে। ইসরাইল যুদ্ধের সময় ভারতের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। এখান থেকেও সন্দেহের উদ্রেক হয়। 

দুঃখের বিষয় সার্ক এখন মৃতপ্রায়। আমি জঙ্গি আক্রমণকে কঠোর ভাষায় নিন্দা জানাই। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে বিচার অনুষ্ঠানের আহ্বান জানাচ্ছি। যুদ্ধ সংঘাত বাড়াবে। ভারত পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

শেয়ার করুন