তারেক রহমান
সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের কোটা সংস্কারের আন্দোলন রাজনৈতিক আন্দোলনে রূপ দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে। ইতিমধ্যে এ দিকে ইঙ্গিত করে কথাও বলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গত ১৬ জুলাই মঙ্গলবার ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা’র রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ আনেন। তিনি বলেন,‘এই আন্দোলনকারীদের একটা অংশ রাজাকারের পক্ষে কথা বলছে। এটা স্পষ্ট এর পেছনে রয়েছে তারেক রহমান। এ জন্যই এর পক্ষ নিয়েছে বিএনপি-জামায়াত।’
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে বিনা উস্কানিতে সাধারণ শিক্ষার্থীসহ ছাত্রলীগের ওপর নির্বিচার হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধকে টার্গেট করে যে আন্দোলন তা প্রতিহত করা হবে। ধৈর্য ধারণ করা মানে নীরবতা নয়, সময় মতো ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, ১৫ জুলাই সোমবার বিনা উসকানিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। ছাত্রলীগের ওপর দোষ চাপানো একটা ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। আমাদের (ছাত্রলীগের) ৫০০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। ছাত্রলীগের বিভিন্ন নেতার ভুয়া ছবি ব্যবহার করে বিভিন্ন পেজে অপপ্রচার করছে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে ১৪ জুলাই রোববার রাতে শিক্ষার্থীদের অনেকের রাজনৈতিক বক্তব্য ও কুৎসিত স্লোগান আমরা শুনেছি। এতদিন আমরা যে আশঙ্কা করেছি, তারা কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে সরকারবিরোধী আন্দোলনই করতে যাচ্ছে। এর সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতসহ সরকারবিরোধী বিভিন্ন দলের অংশগ্রহণ আছে। সমর্থন তারা প্রকাশ্যেই করেছে। আমাদের যে আশঙ্কা, তা তাদের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী স্লোগানে আরও স্পষ্ট হয়েছে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, কোটা আন্দোলনের পেছনে একটি মতলবি মহল আছে। অতীতেও সড়ক আন্দোলন কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে আন্দোলনের ফসল ঘরে তুলতে চেয়েছিলো বিএনপি। তারা অগ্নিসন্ত্রাস করেছে। কিন্তু সে আন্দোলনে তারা সাড়া পায়নি। জনগণের শক্ত অবস্থানের কাছে পরাস্থ হয়। তিনি বলেন, আজকে যে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলছে, এ আন্দোলনেরও নেতৃত্ব নিয়েছে তারেক রহমান। তার দল বিএনপি প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়েছে। একটা অরাজনৈতিক ইস্যুকে রাজনৈতিক আন্দোলনে পরিণত করতে চক্রান্ত করছে। একটা অপশক্তিকে এর পেছনে লেলিয়ে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য বিকৃত করা হচ্ছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি ও জামায়াতের পাশাপাশি তাদের সমমনা দলও এসবে জড়িত। প্রধানমন্ত্রী কোটা আন্দোলনের কাউকে উদ্দেশ্য করে রাজাকার বলেননি।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, তারেক রহমান দন্ডপ্রাপ্ত আসামি। তার দল নির্বাচনে হেরে যাওয়ার ভয়ে অংশ নেয়নি। আন্দোলনে বার বার ব্যর্থ হয়েছে বিএনপি। কোটা আন্দোলনের ওপর ভর করে দলটি আন্দোলনের ফসল তুলতে চেয়েছিল। কোটার বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালত ব্যতিরেকে বা বলপ্রয়োগের কোনো সুযোগ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, কোটা আন্দোলনের মধ্যদিয়ে যারা ক্ষমতায় যাওয়ার আন্দোলনের দিবাস্বপ্ন দেখছেন অচিরেই তাদের স্বপ্ন উড়ে যাবে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যকে আন্দোলনের নেপথ্যে থাকা কুশীলবরা নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য বিকৃত করেছে। প্রধানমন্ত্রী সংবাদকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, কোটা সুবিধা মুক্তিযোদ্ধার নাতি-পুতিরা পাবে না তো রাজাকারের নাতি-পুতিরা পাবে? এ কথা তিনি যথার্থই বলেছেন। ৩০ লাখ শহিদের রক্তাক্ত বাংলাদেশে রাজাকারের ঠাঁই হতে পারে না। আমরা বলতে চাই, মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান বাঙালি সহ্য করবে না। পরাজিত শক্তির আস্ফালন মেনে নেব না। আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রাষ্ট্র পরিচালনা করছি। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীতে যে কোনো অপশক্তিকে আমরা কঠোরভাবে প্রতিরোধ করব। এটাই আমাদের অঙ্গীকার।’
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ড.আব্দুর রাজ্জাক ও জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ও আ ফ ম বাহা উদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক ও এস এম কামাল হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
