৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ৬:০০:৬ অপরাহ্ন


বাইডেনের মানবিক প্যারোল বাতিলের প্রস্তুতি ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-০২-২০২৫
বাইডেনের মানবিক প্যারোল বাতিলের প্রস্তুতি ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের দক্ষিণ ফ্লোরিডায় ইমিগ্রেশন অধিকারকর্মীরা ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) অফিসের বাইরে অভিবাসীদের অধিকার রক্ষায় দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেন


প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন সাবেক প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রশাসনের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রে আসা বহু অভিবাসীর আইনি মর্যাদা বাতিল করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই পদক্ষেপটি মূলত নিকারাগুয়া, কিউবা, ভেনেজুয়েলা এবং হাইতির অভিবাসীদের ওপর প্রভাব ফেলবে, যারা বাইডেন প্রশাসনের অধীনে মানবিক প্যারোল প্রোগ্রামের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছিলেন এবং তাদের সাময়িকভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস ও কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। মোট ৫ লাখ ৩০ হাজারের বেশি কিউবান, হাইতিয়ান, নিকারাগুয়ান এবং ভেনেজুয়েলান অভিবাসী এই প্রোগ্রামের আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন। ফলে অভিবাসীদের বিরুদ্ধে বহিষ্কারের পদক্ষেপ আরো কঠোর হতে পারে। তাদের মধ্যে কিছু অভিবাসী অন্যান্য প্রোগ্রামের আওতায় রয়েছেন এবং তারা বহিষ্কার থেকে রক্ষা পেতে পারেন, তবে যদি তারা অন্য কোনো আইনি পদ্ধতি অনুসরণ না করে থাকে, তবে তাদের বহিষ্কারের জন্য যোগ্য হবেন। 

এটি ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসীদের জন্য অস্থায়ী সুরক্ষা বাতিল করার পদক্ষেপগুলোর মধ্যে সর্বশেষ উদ্যোগ। রিপাবলিকানরা সাবেক প্রেসিডেন্ট বাইডেনের মানবিক প্যারোল প্রোগ্রামের ব্যবহারকে তীব্রভাবে সমালোচনা করেছেন, দাবি করেছেন যে তার প্রশাসন এই প্রোগ্রামের ব্যবহার করে তার ক্ষমতার সীমা অতিক্রম করেছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রথম কর্মদিবসে এক্সিকিউটিভ অর্ডারের মাধ্যমে প্যারোল পর্যালোচনা করার নির্দেশ দেন। 

বাইডেন প্রশাসন যুক্তি দিয়েছে যে মানবিক প্যারোল প্রোগ্রামটি অবৈধ সীমান্ত অতিক্রমের সংখ্যা কমাতে সহায়ক ছিল, কারণ এটি মানুষের জন্য একটি আইনি পথ প্রদান করেছিল। এ প্রোগ্রামের অধীনে অভিবাসীদের একটি স্পনসর থাকতে হতো, যারা তাদের আর্থিক সহায়তা করতে রাজি ছিল এবং তাদের স্ক্রিনিং ও ভেটিং সম্পন্ন করা হতো। 

যারা এ প্রোগ্রামের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন, তারা অনেকেই দুই বছরের কম সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন একটি পদ্ধতি তৈরি করেছে, যা দ্রুততর বহিষ্কারের প্রক্রিয়া সম্প্রসারণ করেছে, যা ওইসব অভিবাসীর ওপর প্রযোজ্য হবে, যারা দুই বছর বা তার বেশি সময় ধরে দেশে বসবাস না করে থাকেন এবং যারা তাদের অবস্থান আইনি করতে পারেননি। এ দ্রুততর বহিষ্কারের প্রক্রিয়া, যার নাম ‘এস্কেপড রিমুভাল’, অভিবাসন কর্তৃপক্ষকে একটি শুনানির প্রয়োজন ছাড়াই অভিবাসীকে দেশে ফেরত পাঠানোর সুযোগ দেয়। প্যারোল বাতিল হলে তারা দ্রুত বহিষ্কারের জন্য যোগ্য হতে পারে। 

ট্রাম্প প্রশাসন আসন্ন পদক্ষেপে সেসব অভিবাসীর প্যারোল স্ট্যাটাস বাতিল করবে, যারা বাইডেন প্রশাসনের মানবিক প্যারোল কর্মসূচির আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন এবং যারা অন্য কোনো অভিবাসন সুবিধা যেমন আশ্রয়, গ্রিনকার্ড বা টেম্পোরারি প্রটেকটেড স্ট্যাটাস (টিপিএস) প্রাপ্তি চেষ্টা করেননি। তবে এখন পর্যন্ত কতজন এ উদ্যোগের আওতায় এসেছেন এবং তারা কি অন্য কোনো আইনি সুবিধার জন্য আবেদন করেছেন, তা স্পষ্ট নয়। ট্রাম্প প্রশাসনের এ পরিকল্পনা কখন চূড়ান্ত হবে তা-ও এখনো নিশ্চিত নয়। যারা প্যারোল বাতিল হওয়ার পর অন্য কোনো আইনি মর্যাদা লাভ করতে ব্যর্থ হবে, তারা যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে কাজ করতে অযোগ্য হবে এবং তাদের অভিবাসন আদালতে উপস্থিত হওয়ার জন্য নোটিশ দেওয়া হবে, যা বহিষ্কারের প্রথম পদক্ষেপ। ট্রাম্প প্রশাসন ইতিমধ্যে অভিবাসন কর্তৃপক্ষকে এই ধরনের অভিবাসীদের দ্রুত বহিষ্কারের জন্য নির্দেশ দিয়েছে। 

এ ছাড়া বেশ কিছু হাইতিয়ান এবং ভেনেজুয়েলান অভিবাসী টেম্পোরারি প্রটেকটেড স্ট্যাটাস প্রোগ্রামের আওতায় আছেন, যা তাদের সাময়িকভাবে বহিষ্কারের হাত থেকে রক্ষা করে এবং কাজের অনুমতি প্রদান করে। তবে ট্রাম্প প্রশাসন এ প্রোগ্রামটিকেও বিতর্কিত মনে করছে এবং এর ব্যবহারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসন ভেনেজুয়েলানদের জন্য সাবেক প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সম্প্রসারণ বাতিল করেছে, যা কিছু ভেনেজুয়েলান অভিবাসীর জন্য সে আইনি মর্যাদা খর্ব করতে পারে। 

এছাড়া কিউবার অভিবাসীদের জন্য একটি বিশেষ আইনি প্রক্রিয়া রয়েছে। এই আইনি প্রক্রিয়া সেই সময়ের কোল্ড ওয়ার আইন অনুযায়ী তাদের স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার সুযোগ দেয়। অন্যান্য জাতীয়তার অভিবাসীরা আশ্রয়ের জন্য আবেদন করতে পারেন, তবে তা করার জন্য তাদের নির্দিষ্ট কিছু শর্ত প্রমাণ করতে হবে, যেমন ধর্মীয় বা রাজনৈতিক কারণে নির্যাতনের শিকার হওয়া। বাইডেন প্রশাসনের সাবেক একজন কর্মকর্তা টম জাওয়েটজ এ পরিকল্পনাটিকে নিন্দা করেছেন। তিনি বলেছেন, যারা যুক্তরাষ্ট্রে স্পনসরের মাধ্যমে আইনি পথে এসেছেন এবং নিয়ম মেনে চলছেন, তাদের লক্ষ করা কেবল অকারণ অমানবিকতা এবং এটি আমাদের ব্যবস্থা আরো বিশৃঙ্খল করবে। 

এ পদক্ষেপটি যদি বাস্তবায়িত হয়, তবে যুক্তরাষ্ট্রে মানবিকভাবে বসবাসরত হাজার হাজার অভিবাসীকে গুরুতর ঝুঁকির মুখে ফেলে দিতে পারে। যারা আইনি মর্যাদা হারিয়ে বহিষ্কৃত হবেন, তাদের জীবন ও নিরাপত্তা শঙ্কায় পড়বে। অধিকাংশ অভিবাসী তাদের দেশ থেকে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে ভয়, নির্যাতন, রাজনৈতিক বা ধর্মীয় নিপীড়ন থেকে বাঁচতে। তাদের বহিষ্কার করলে, তা শুধু তাদের জন্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণ হবে না, বরং তাদের জীবনের নিরাপত্তা ও মর্যাদাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মানবিক কারণে আশ্রয়ের জন্য আসা এ ব্যক্তিদের পুনরায় তাদের জন্মভূমিতে ফিরিয়ে দেওয়া, যেখানে তারা নিরাপদ নন, একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। এসব পদক্ষেপ মানবাধিকার, সুরক্ষা এবং ন্যায়ের মৌলিক নীতির বিপরীতে দাঁড়িয়ে রয়েছে এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনও এ ধরনের অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে বহিষ্কারের বিপক্ষে। 

শেয়ার করুন