৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৯:২৯:০২ পূর্বাহ্ন


মেয়র পদপ্রার্থী জোহরান মামদানির ন্যূনতম মজুরির পরিকল্পনা ঘোষণা
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-০২-২০২৫
মেয়র পদপ্রার্থী জোহরান মামদানির ন্যূনতম মজুরির পরিকল্পনা ঘোষণা মেয়র পদপ্রার্থী জোহরান মামদানি


নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদপ্রার্থী ও বর্তমান অ্যাসেম্বলি সদস্য জোহরান মামদানি শহরের জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের চাপ মোকাবিলা করতে ২০৩০ সালের মধ্যে ন্যূনতম মজুরি ৩০ ডলারে উন্নীত করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। বর্তমানে নিউইয়র্ক সিটিতে ন্যূনতম মজুরি ১৬.৫০ ডলার। মামদানি চান, এই মজুরি ধাপে ধাপে বাড়িয়ে ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ ডলারে উন্নীত করতে। তার পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৭ সালে ন্যূনতম মজুরি ২০ ডলার, ২০২৮ সালে ২৩.৫০ ডলার, ২০২৯ সালে ২৭ ডলার এবং ২০৩০ সালে ৩০ ডলার করা হবে। এরপর থেকে এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বার্ষিক ভিত্তিতে বৃদ্ধি পাবে, যা জীবনযাত্রার ব্যয় বা উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির ওপর নির্ভর করবে-যেটি বেশি হবে, সেটিই মজুরি বৃদ্ধির মানদণ্ড হিসেবে বিবেচিত হবে। এই দুটি সূচক যুক্তরাষ্ট্রের ব্যুরো অব লেবার স্ট্যাটিসটিক্স (বিএলএস) দ্বারা নির্ধারিত হবে। নিউইয়র্ক শহরে বসবাস করা ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠছে, বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের মানুষের জন্য। ফাইভ বরো ইনস্টিটিউটের সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা অনুযায়ী, শহরের ৪৮ শতাংশ বাসিন্দা উচ্চ জীবনযাত্রার ব্যয়ের কারণে নিউইয়র্ক ছাড়ার কথা ভাবছেন। এর মধ্যে ৬১ শতাংশ নিউইয়র্কার বলেছেন, তারা তাদের মৌলিক চাহিদা মেটাতে সমস্যায় পড়ছেন।

নিউইয়র্ক বহুদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য শহরের তুলনায় ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনে অগ্রগামী। ২০১৬ সালে শহরটি প্রথমবারের মতো ন্যূনতম মজুরি ১৫ ডলারে উন্নীত করেছিল। পরবর্তী সময়ে ২০২৩ সালে নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলি ও গভর্নর ক্যাথি হোকুল ঘোষণা করেন যে ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে এটি ১৬.৫০ ডলার হবে। কিন্তু মামদানি মনে করেন, এটি যথেষ্ট নয়। ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি)-এর হিসাব অনুযায়ী, নিউইয়র্ক সিটিতে একজন ব্যক্তির উপযুক্ত জীবনযাত্রার জন্য বর্তমান ন্যূনতম মজুরি হওয়া উচিত ৩০ ডলার। এ হিসাব অনুযায়ী, বর্তমান মজুরি কর্মজীবী মানুষের জন্য পর্যাপ্ত নয় এবং এটি অর্থনৈতিক বৈষম্য আরো বাড়িয়ে তুলছে।

নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলি ঐতিহাসিকভাবে সিটির ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের একমাত্র কর্তৃপক্ষ হিসেবে কাজ করে আসছে। তবে মামদানি এবং তার দল বিশ্বাস করেন যে, ‘হোম রুল’ নীতির আওতায় নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিল নিজেই ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করতে পারে। এর আগে টম্পকিন্স কাউন্টি রাজ্যের কাছে অনুরোধ করেছিল যেন কাউন্টিগুলো নিজেদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের ক্ষমতা পায়। মামদানি চান, নিউইয়র্ক সিটিও একই পথ অনুসরণ করুক এবং রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় এই ক্ষমতা অর্জন করুক। তিনি বলেন, যখন শ্রমজীবী মানুষের হাতে বেশি অর্থ থাকে, তখন সামগ্রিক অর্থনীতি সমৃদ্ধ হয়। কিন্তু বর্তমানে নিউইয়র্কের ন্যূনতম মজুরিতে কাজ করে এই শহরে টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব। আমাদের এই বাস্তবতাকে বদলাতেই হবে।

ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির বিরোধীরা দাবি করেন, এটি ব্যবসাগুলোর জন্য আর্থিক চাপ সৃষ্টি করবে, কর্মসংস্থান কমাবে এবং মূল্যস্ফীতি বাড়াবে। অনেক ব্যবসায়ী যুক্তি দেন যে, যদি শ্রমিকদের মজুরি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করা হয়, তাহলে তারা কম কর্মী নিয়োগ দেবে, ফলে বেকারত্ব বাড়তে পারে। তবে মামদানি এই সমালোচনাকে প্রত্যাখ্যান করে বলেন, কর্মজীবী মানুষের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা শুধু নৈতিক দায়িত্ব নয়, এটি একটি কার্যকর অর্থনৈতিক নীতি। মানুষ যদি বেশি আয় পায়, তাহলে তারা বেশি ব্যয় করবে, যার ফলে অর্থনীতি আরো শক্তিশালী হবে। এর আগেও বেশ কয়েকটি শহর উচ্চ ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নের পথে এগিয়েছে। বোল্ডার কাউন্টি, কলোরাডো ২০৩০ সালের মধ্যে ন্যূনতম মজুরি ২৫ ডলার এবং লস অ্যাঞ্জেলেস ২০২৮ সালের মধ্যে পর্যটন খাতের কর্মীদের জন্য ন্যূনতম মজুরি ৩০ ডলার নির্ধারণ করেছে। ওই উদাহরণগুলো দেখায় যে উচ্চ ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন শুধু সম্ভবই নয়, বরং এটি একটি কার্যকর অর্থনৈতিক নীতি হতে পারে।

ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি ছাড়াও মামদানির নির্বাচনী প্রচারণায় শ্রমজীবী ও মধ্যবিত্ত মানুষের জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম- (১) ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা, যাতে সাধারণ মানুষ নিউইয়র্কে বসবাস করতে পারেন। (২) বাসভাড়া বিনামূল্যে করা, যাতে পরিবহনব্যয় কমানো যায়। (৩) সর্বজনীন শিশু যত্নের ব্যবস্থা করা, যাতে কর্মজীবী অভিভাবকদের জন্য শিশুদের যত্ন নেওয়া সহজ হয়। (৪) পরবর্তী এক দশকে ২ লাখ সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন নির্মাণ করা, যাতে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের জন্য বাসস্থান সহজলভ্য হয়। (৫) নগর কর্তৃক পরিচালিত মুদি দোকান চালু করা, যাতে খাদ্য ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

জোহরান মামদানি মনে করেন, বর্তমান প্রশাসন নিউইয়র্কবাসীর জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর জন্য যথেষ্ট উদ্যোগ নিচ্ছে না। তার মতে, উচ্চ জীবনযাত্রার ব্যয় নিউইয়র্কবাসীদের শহর ছাড়তে বাধ্য করছে, যা শহরের ভবিষ্যৎ অর্থনীতির জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। তিনি বলেন, প্রায়ই আমাদের বলা হয় যে শ্রমিকদের জন্য লড়াই করা অবাস্তব, যে এটি একটি উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা যা বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। কিন্তু আমরা জানি, এ মুহূর্তে নিউইয়র্কবাসীরা এটিই ন্যূনতম পাওয়ার যোগ্য। জোহরান মামদানির লক্ষ্য নিউইয়র্ক সিটিকে আরো বাসযোগ্য ও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করা। তার পরিকল্পনা যদি বাস্তবায়িত হয়, তাহলে এটি কেবল শহরের শ্রমজীবী মানুষের জন্যই নয়, বরং সামগ্রিক অর্থনীতির জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন বয়ে আনতে পারে।

শেয়ার করুন