৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৯:১৪:২৯ অপরাহ্ন


গণহত্যায় হাসিনার সম্পৃক্ততার প্রতিবেদন যে কোনো মুহূর্তে
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৩-০৪-২০২৫
গণহত্যায় হাসিনার সম্পৃক্ততার প্রতিবেদন যে কোনো মুহূর্তে শেখ হাসিনা


জুলাই ছাত্র-জনতার গণহত্যায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে তদন্তও চূড়ান্ত হচ্ছে। এবার সে তদন্ত দ্রুত দাখিলের দিনক্ষণ গুনছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম। এ বিষয়ে শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের জানান, এ জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডে শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততা থাকার যে তদন্ত প্রতিবেদন, সেটা যে কোনো মুহূর্তে দাখিল হতে পারে। 

তাজুল ইসলাম বলেন, জুলাই-আগস্ট গণহত্যায় যে মামলা দাখিল হয়েছে, তাতে শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততার তদন্ত প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত পর্যায়ে আছি, বলে আমরা আদালতকে জানিয়েছি। তবুও অধিকতর সতর্কতা ও স্বচ্ছতা অবলম্বন করার জন্য আমরা দুই মাস সময় চেয়েছি। আদালত সেটা মঞ্জুর করে আগামী ২৪ জুন তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য করেছেন। কিন্তু আমরা আপনাদের এটা জানাতে পারি, যে কোনো মুহূর্তে প্রতিবেদনটি দাখিল হয়ে যাবে। সেটা আগামী সপ্তাহেও হতে পারে, যে কোনো সময় হতে পারে।

সাংবাদিকদের করা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তদন্তের জন্য আমরা সাক্ষীদের সাক্ষ্য নিয়েছি। বিভিন্ন ধরনের ছবি ও ভিডিও ফুটেজ যেমন সিসিটিভি ফুটেজ, ক্যামেরা কিংবা ড্রোন ফুটেজ আমরা সংগ্রহ করেছি। 

তদন্তের একেবারে শেষপর্যায়ে এসে মোটামুটি এটা বোঝা যাচ্ছে যে, এসব অপরাধ রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে, সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটির মাধ্যমে হাসিনা তার মন্ত্রিপরিষদ, পুলিশ বাহিনীসহ-সবাইকে নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং তারা এই পরিকল্পনা সাজানো থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নে কাজ করেছে।

জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক ১২ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ মোট ১৯ জনকে গত ২০ এপ্রিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

এদের মধ্যে ছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক, ফারুক খান, দীপু মনি, আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, গোলাম দস্তগীর গাজী, আমির হোসেন আমু, কামরুল ইসলাম, সাবেক মন্ত্রী ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী ও সালমান ফজলুর রহমান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার ও জুনাইদ আহমেদ পলক, আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান এবং সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর আলম। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে আজ তাদের মামলায় শুনানি হয়েছে।

উল্লেখ্য, জুলাই গণহত্যার তদন্ত করেছে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক সংস্থাও। নিরপেক্ষ ওই তদন্তেও জুলাই কিলিংয়ে তৎকালীন সরকারের শীর্ষস্থানীয়দের সম্পৃক্ততা ছাড়া সংঘটিত হতে পারে না বলে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। সেখানেও শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রিপরিষদের প্রভাবশালীরা অভিযুক্ত বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জাতিসংঘের প্রতিনিধি জানান দিয়েছে। সে থেকেই বিষয়টি আরো অতিকতর স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ইন্টারনেট বন্ধ করে যে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে তার ভিডিও ফুটেজ, সাক্ষ্যপ্রমাণাদিসহ বহু আলামত জাতিসংঘের তদন্ত কমিশনও নিরপেক্ষভাবে সংগ্রহ করে গেছেন। সে তথ্যাদিও প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যথাযথ সহায়তাও নিতে পারে। 

উল্লেখ্য, শেখ হাসিনা ও তার শীর্ষ নেতৃত্বের অনেকেই বর্তমানে ভারত ও ইউরোপে অবস্থান করছে।

শেয়ার করুন