যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ে উচ্ছ্বসিত হলেও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সাহায্যকারী প্রতিবেশী দেশ ভারতের ভূমিকায় অসন্তুষ্ট আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। খোদ দলের হাইকমান্ড ভারতের ভারতের ভূমিকায় সন্দিহান হয়ে পড়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ঘটনায় ভারতের নিরবতার পাশাপাশি তাৎক্ষণিক ভূমিকা ও মন্তব্যে আওয়ামী লীগ বিপাকে পড়েছে। তাদের সব উচ্ছাসে ভাটা পড়েছে দেশ একটি তাৎক্ষণিক মন্তব্যে। এখন দেখা যাক উচ্ছ্বাস ও তাতে ভাটা পড়ার বিস্তারিত চিত্রটি-
ট্রাম্পের বিজয়ে হাসিনার উচ্ছ্বাস
সম্প্রতি আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে শেখ হাসিনার স্বাক্ষর করা একটি বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছে। এতে শেখ হাসিনা নিজেকে বাংলাদেশের ‘প্রধানমন্ত্রী’ উল্লেখ করে ডোনাল্ড ট্রাাম্পকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। ওই বিবৃতি কেবল এই জায়গায়ই এতোটুকুতেই থেমে থাকেনি। শেখ হাসিনা আরো উল্লেখ করেন, এই বিশাল বিজয় তার অসাধারণ নেতৃত্বের গুণাবলির প্রমাণ এবং আমেরিকার জনগণের ওপর অর্পিত গভীর বিশ্বাসের প্রতিফলন। পোস্টে আরো বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা ডোনাল্ড জে. ট্রাম্প ও মেলানিয়া ট্রাম্পের সঙ্গে তার প্রথম প্রেসিডেন্সির সময় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বিভিন্ন আলোচনার স্মৃতি স্মরণ করেন। এমন খবরে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতাদের পাশাপাশি বাকি কর্মীরাও বিষয়টিতে বেশ উৎফুল্ল বোধ করেন।
ভারতের মন্তব্যে উচ্ছ্বাসে মাটি
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের পর তাঁকে অভিনন্দন জানিয়ে আওয়ামী লীগের দেয়া সে-ই বিবৃতিতে শেখ হাসিনাকে ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী’ উল্লেখ করার প্রসঙ্গ তুলে ধরেছিলেন একজন ভারতীয় সাংবাদিক। তিনি প্রশ্ন করেন, ভারত শেখ হাসিনাকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাকি ‘নির্বাসিত প্রধানমন্ত্রী’ হিসেবে বিবেচনা করছে। তার জবাবে ভারত সরকারের বর্তমান অবস্থানটি স্পস্টভাবে তুলে ধরেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল। তিনি বলেন, ‘আমরা এখান থেকে আগেই বলেছি যে তিনি (শেখ হাসিনা) বাংলাদেশের একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। সুতরাং এ বিষয়ে আমাদের অবস্থান এটাই।’ রণধীর জয়সোয়ালের এমন ক্ষুদ্র অথচ ব্যপক অর্থবহ মন্তব্যে আওয়ামী লীগের নেতাকমীদের সব মুহূর্তে উচ্ছাস মাটি হয়ে যায়..
হিন্দুদের ওপর হামলার পেছনে ভারতের মন্তব্যেও অখুশি
এদিকে ঠিক একিই সময়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়ালকে সম্প্রতি চট্টগ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ও তাদের সম্পদের ওপর হামলার ঘটনার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয়। কিন্তু এতেও রণধীর জয়সোয়াল অত্যন্ত মার্জিতভাবে কূটনৈতিক ভাষায় মন্তব্য করেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বা মাঠের কোনো রাজনৈতিক দলের নাম না নিয়ে রণধীর জয়সোয়াল বলেছেন, বাংলাদেশের চট্টগ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ও তাদের সম্পদের ওপর হামলার পেছনে ‘চরমপন্থীরা’ রয়েছে বলে মনে করে ভারত।’ তবে এটা ঠিক এ ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি সখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে জোরালো পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশটি। ‘আমরা জানতে পেরেছি যে এসব ঘটনার পেছনে চরমপন্থীরা রয়েছে,’ বলেন রণধীর জয়সোয়াল। এর পাশাপাশি তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ যে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের সৃষ্টি করেছিল তা-র প্রতি ইঙ্গিত করে আরেকটি মন্তব্য ছুড়ে দেন রণধীর জয়সোয়াল। স্পষ্ট করেই বলেন, ‘আর এজন্য রণধীর জয়সোয়াল এসব ঘটনা ওই এলাকায় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বাড়াবে এবং সাম্প্রদায়িক পরিস্থ’তিতে ভারসাম্য বিনষ্টে ভূমিকা রাখবে। তিনি এসব হামলার জন্য দায়ী চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।
পাচারকৃত কোটি টাকা উদ্ধারে ভারতের তৎপরতার হতাশা
এদিকে একটি গণমাধ্যমের খবর প্রকাশিত হয়েছে যে,গত ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশ থেকে শত শত আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী বৈধ ও অবৈধ উপায়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। রাতারাতি দেশত্যাগ করলেও ভারতে এসে কেউই নেই অর্থ সংকটে। পরিচিত ও আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে ভারতে আগে থেকে গড়ে তোলা সম্পদ ও বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে নিয়ে যাওয়া টাকায় বহাল তবিয়তেই রয়েছেন তারা। কিন্তু এখানেও বিপত্তি বেধেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে শত শত কোটি টাকা ভারতে পাচারের মাধ্যমে নিয়ে আসার অভিযোগে ভারতের অন্তত ১৭টি জায়গায় সোমবার (১১ নভেম্বর) সকাল থেকে চলছে দেশটির কে›ন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটেরের (ইডি) অভিযান। এবিষয়টিও আওয়ামী লীগের নেতৃাকর্মীদের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার পাশাপাশি হতাশা সৃষ্টি করেছে।
শেষ কথা
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ী হবেই। আর এমনটা হলে বাংলাদেশের ব্যাপারে বাইডেন প্রশাসনের বর্তমান যে নীতিমালা রয়েছে তা-র অনেক পরিবর্তন হবে। বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরেও বের হয় যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানকে ট্রাাম্পের সঙ্গে সখ্য বাড়াতে লবিস্ট ফার্ম হিসেবে নিয়োগ করেছেন। অন্যদিক ট্রাম্পের বিভিন্ন সমাবেশে গুটিকয়েক যে বাংলাদেশিরা যোগ দিয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বিশ্বাসী। এভাবেই আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্য থেকে একটি বিষয় বদ্ধমুল হয় যে, ট্রাম্প বিজয়ী হয়ে এলেই ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট গণভবন ছেড়ে চলে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রীও চট করে ঢুকে পড়বেন নিজ দেশেই। আর এমন পরিস্থিতিতে ভারত তো বাংলাদেশের জনগণ নয়, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরই আপন মনে করে। আর সেজন্য এধরনের পরিস্থিতিতে ভারতও চট করে তাদের ভূমিকা রাখবেই। আমেরিকার নির্বাচনের আগে এমন আশা নিয়েই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দিন যাচ্ছিল। অন্যদিকে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া কিছু সাম্প্রদায়িক ঘটনায় ভারতের সহানুভুতিও আছে মনে করে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড থেকে শুরু করে সর্ব পর্যায়ে একটি উচ্ছাস লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ে উচ্ছসিত হলেও ভারতের ভূমিকায় তা ভেস্তে গেছে, অসন্তুষ্ট হয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তাদের প্রশ্ন কেনো রণধীর জয়সোয়াল বললেন, ‘আমরা এখান থেকে আগেই বলেছি যে তিনি (শেখ হাসিনা) বাংলাদেশের একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। সুতরাং এ বিষয়ে আমাদের অবস্থান এটাই।’ কেনোই বা রণধীর জয়সোয়াল এমন প্রসঙ্গটি চেপে বা পাশ কাটিয়ে গেলেন না?. কেনোই বা সম্প্রতি চট্টগ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ও তাদের সম্পদের ওপর হামলার ঘটনাকে ভারত অতটা গুরুত্ব দিলো না? কেনইবা এসব নিয়ে বর্তমান অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের কিরুদ্ধে কঠোর মন্তব্য করা হলো না ভারতীয় কর্তৃপক্ষ?