রামনাবাদ চ্যানেলের নাব্য সংকটে পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ নির্মাণাধীন এবং উৎপাদনের জন্য অপেক্ষারত সব বিদ্যুৎকেন্দ্র ক্ষমতা অনুযায়ী, পরিচালনা করা গভীর সংকটে পড়তে চলেছে। সবার জানা আছে কয়েকটি নদীর মোহনায় অতিরিক্ত পলি সঞ্চিত হওয়ার কারণে পায়রায় কয়লা বন্দর অথবা এলএনজি টার্মিনাল কারিগরিভাবে সম্ভব নয়, সেটি জানা গিয়েছিল জাপানিজ সংস্থা জাইকার ফিজিবিলিটি প্রতিবেদন থেকে। কিন্তু ততদিনে পায়রায় বন্দর স্থাপন এবং কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কারখানা গড়ার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গেছে। বলা হলো, রামনাবাদ চ্যানেল ক্যাপিটাল ড্রেজিং করে গভীরতা অন্তত ৬ মিটারের বেশি রাখা হবে এবং প্রতি বছর রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিং করা হবে।
এজন্য যে বিপুল ব্যয়, সেটির কথা জানা থাকলেও কেউ গুরুত্ব দেয়নি। যার ফলে ক্যাপিটাল ড্রেজিং হলেও রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিং হয়নি। প্রাকৃতিক নিয়মে পলি জমে এখন রামনাবাদ চ্যানেলের গভীরতা কমে গাছে। এমতাবস্থায় এতোদিন মাঝারি ক্ষমতার কয়লাবাহী জাহাজ অর্ধেক পূর্ণ করে কয়লা এনে পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনা করা হলেও এবারের শীত মৌসুমে সেই কাজটিও কঠিন হয়ে পড়বে। এখন সেখনে একটি ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু আছে।
ডিসেম্বর ২০২৪ নাগাদ আরো একটি ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে। একই ক্ষমতার একটি তৃতীয় বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ চলছে। পায়রা বা পটুয়াখালী অঞ্চলে উপকূলের প্রয়োজনীয় গভীরতা না থাকায় সেখানে এই ধরনের একাধিক আমদানিকৃত বিদ্যুৎ উৎপাদন প্ল্যান্ট স্থাপন না করার পরামর্শ বহুবার দেওয়া হলেও বিগত সরকার বিশেষজ্ঞদের কোনো পরামর্শ শোনেনি। শুধু পায়রা বা পটুয়াখালী অঞ্চল কেন বাগেরহাটের রামপালেও কয়লা পরিবহনে সংকট আছে। একমাত্র মাতারবাড়ী ছাড়া কোথাও কয়লা আমদানির জন্য বড় জাহাজ বন্দরে আসার সুযোগ নেই।
সেখানেও একটি মাত্র ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র ছাড়া দ্বিতীয় ইউনিটসহ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়েছে। বাংলাদেশের আমলা প্রভাবিত জ্বালানি বিদ্যুৎ পরিকল্পনা দেশকে একটি গভীর জ্বালানি নিরাপত্তা সংকটে ফেলেছে যা থেকে পরিত্রান পেতে জরুরি ভিত্তিতে লাগসই পরিকল্পনা গ্রহণ অত্যাবশ্যক। পায়রায় এই মুহূর্তে প্রতি বছর রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিং করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। এমনিতেই প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে কয়লা আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। চালু থাকা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পূর্ণ ক্ষমতায় চালানো যাচ্ছে না।
মানসিকতা উপযোগী না থাকায় নিজেদের উন্নত মানের কয়লা সম্পদ মাটির নিচে পড়ে আছে। মাতারবাড়ীতে অন্তত ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দ্বিতীয় ইউনিট করার বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা উচিত।