সেন্ট মার্টিন দ্বীপের সাম্প্রতিক ঘটনায় সরকারের ‘নিশ্চুপ’ ভূমিকা তাদের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির প্রকাশ বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘‘ পত্রিকায় খবরে এসেছে. সেন্টমার্টিন দ্বীপ নিয়ে সংকট, সেখানে আতঙ্ক …… কি দূঃখজনক? মানে এটাকে কি বলব? কত ব্যর্থতা এই সরকারের যে আমার একটা দ্বীপ সেই দ্বীপে আমরা যেতে পারছি না, সেই দ্বীপে গেলেই অন্যদেশ থেকে গুলি করে মেরে ফেলা হচ্ছে এবং মেরেও ফেলা হয়েছে।”
‘‘ অথচ এখন পর্যন্ত সরকার কোনো রকমের কোনো বক্তব্য পর্যন্ত দেয়নি। হোম মিনিস্টার সাহেব বললেন, এখনো এমন কোনো অবস্থা হয়নি যে, এটাতে আমরা স্টেটম্যান্ট দেবো বা কিছু বলব।”
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ এই যে নতজানু… মিয়ারমারের মতো দেশকেও কিছু বলা যাবে না।এটা কতটা দাসসুলভ মনোভাব হতে পারে…. একটা কথা মনে পড়ে যে, দাস্য সুখে হাস্য মুখে। সুখ তো হাস্য সুখ, মুক্ত হাসি।
‘‘ সীমান্তে লোক মারছে একটা কথা বলে না, পানি দেয় না একটা কথা বলে না। আর সেন্ট মার্টিনে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। সেখানে কয়েক লক্ষ মানুষ বিপদগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। অথচ এ্নিয়ে সরকারের কোন মাথা ব্যথা নেই।”
জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বিএনপি সমর্থিত ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের উদ্যোগে ‘১৬ জুন সংবাদপত্রের কালো দিবস’ উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়। আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ পাঠা করেন বিএফইউজের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী।
১৯৭৫ সালের ১৬ জুন চারটি পত্রিকা রেখে বাকিগুলো বন্ধ করে দেয় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। এজন্য সাংবাদিকদের একটি অংশ দিনটিকে কালো দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।
‘সাংবাদিকদের ঐক্যের আহ্বান’
মির্জা ফখরুল বলেন,‘‘ সাংবাদিকরা এক প্লাটফর্মে আসুন। আমি সবার কথা বলছি না, আমি গণতন্ত্রে যারা বিশ্বাস করেন, তারা যদি একই জায়গায় আসেন তাহলে কিন্তু্ আমার মনে হয় আপনারা অনেক বেশি শক্তিশালী হবেন। এখানে আমরা বিভক্তি দেখতে পাই। এই বিভক্তিটাকে এড়িয়ে দেখেন যারা সিনিয়র আছেন তারা চেষ্টা করেন, তরুনরা যারা আছেন তারা চেষ্টা করেন যে, এবার অন্তুত চেষ্টা করে যেন আমরা এক হই।”
‘‘ এই লড়াইটা কিন্তু সহজ লড়াই নয়। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই গণতান্ত্রিক সংগ্রাম খুবই কষ্টকর লড়াই। এই লড়াইটা একদিনে উল্টে যাবে, একদিনে পাল্টে যাবে তা হবে না…এটা হবে না। এর মধ্যে মাঝে মাঝে নেমে যাবে… আবার উঠতে হবে সেভাবে কাজটা আমাদের করতে হবে।”
তিনি বলেন, ‘‘ ঐক্যবদ্ধ হয়ে মানুষকে জাগিয়ে তুলতে হবে। মানুষ ছাড়া গণতান্ত্রিক লড়াই হবে না। আমি রাতারাতি দুই-চারটা বোমটোম ফুটিয়ে দিয়ে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারব না।”
‘‘ বাংলাদেশে সমস্ত মানুষ যেদিন নেমে আসবে যেটা অতীতে আমাদের এদেশে হয়েছে সেই কাজগুলো আমাদের করতে হবে, মানুষকে নামিয়ে আনতে হবে, মানুষকে জাগিয়ে তুলতে হবে, সব জায়গায় যেতে হবে। তরুন-যুবকদের সক্রিয় করতে হবে।”
‘বেনজীরের বেনজীর কাজ’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ জাতির জন্য এর চেয়ে ঘন অমানিষা আর কখনো আসে নাই। সব দিক দিয়ে আমাদের সমস্ত আশা-আকাংখা সব দিক থেকে বিপন্ন করে দেয়া হয়েছে। তারমধ্যে সংবাদ কর্মী যারা আছেন যারা সাহস করে কাজ করছেন তাদেরকে আমি কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই , ধন্যবাদ জানাতে চাই।”
‘‘ এই যে বেনজীরের বেনজীর কাজ এটা তো যেভাবেই হোক গণমাধ্যমের আপনারাই তুলে নিয়ে এসেছেন… আপনারাই বের করেছেন। এর মধ্যে কিন্তু অনেক কিছু বের হচ্ছে কিন্তু। আমি আজকেই একটি পত্রিকায় দেখলাম… সাবেক সেনা প্রধান আজিজ(আজিজ আহমেদ) ঘটনাগুলো কিছু কিছু বের হয়ে আসছে…. যে ঘটনা গুলো ঘটিয়েছে এখন সে কিন্তু কর্মক্ষেত্রের বাইরে। তার ভাইদেরকে পাসপোর্ট পাইয়ে দেয়ার জন্য সে পুরোপুরি জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে। এটা ভাবা যায় না,সেনা বাহিনীর একজন সাবেক প্রধান তিনি এরকম জালিয়াতি করবেন? আমরা চিন্তা করতে পারি না, পুলিশ প্রধান সে এরকম ভয়াবহ ভাবে ডাকাতি করে গোটা দেশে একটা সামাজ্য গড়ে তুলবে… তার দুর্নীতি চিন্তা করা যায় না। কিন্তু এরা সেটাকে সম্ভব করেছে।”
তিনি বলেন, ‘‘ আমি কাল একটা টেলিভিশনে… সংবাদ প্রচারের আগে শেখ মুজিবু্র রহমানের কিছু বানী প্রচার করা হয়। উনি(শেখ মুজিবুর রহমান) বলছেন, যারা সম্পদ লুন্ঠন করে, সম্পদ পাচার করে নিয়ে যায় তাদের এদেশের মাটিতে কোনো জায়গা নেই। আমি বলি, আজকে যারা ক্ষমতায় আছে তারা কি এটা একবারও শুনছে, দেখছে?”
‘‘ কারা সম্পদ লুন্ঠন করছে, কারা সম্পদ পাচার করছে… এটা দেশের প্রত্যেকটা মানুষ জানে। আপনারা(সাংবাদিকরা) হয়ত সব কিছু লিখতে পারেন না। আমরা কিছু কথাটা বলার চেষ্টা করি…. যেমন কয়েকদিন আগে বলেছি যে, ‘নগদ’ টাকা পাচার করছে কিভাবে? প্রতিটি টাকায় তাদের পাঁচ পয়সা করে কমিশন আছে… এই কমিশনের টাকা কোথায় যায়? আমি এই সম্পর্কে কোনো উত্তর পাইনি।”
‘প্রতিরোধ করতে হবে’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ এখানে অনেকে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধবংস কথা বলেছেন। শিক্ষা ব্যবস্থা ধবংস করবেই… এটা তো ওদের রাজনৈতিক লক্ষ্য। ওরা তো আপনাকে নির্ভরশীল করে দিতেই চায়। আপনার কৃষ্টি, আপনার ধর্মবোধ, আপনার রাষ্ট্র চেতনা সব কিছু পরিবর্তন করতে চায় তারা।”
‘‘ সেই জায়গায় আমাদেরকেই প্রতিরোধ করতে হবে, আমাদের দাঁড়াতে হবে। ছাত্রদের তরুনদের অন্য্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। নানা প্রতিকুলতার মধ্যে আমাদেরকে বেরুতে হবে, এর মধ্যেই আমাদেরকে প্রতিবাদের চেষ্টা করতে হবে।”
ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টসহ নানা কালাকানুনের প্রতিকূলতার মধ্যে কাজ করার জন্য গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা কাজ করার জন্য্ তাদেরকে ধন্যবাদও জানান বিএনপি মহাসচিব। সাংবাদিকদের বেকারত্মের কঠিন সময় অতিক্রান্ত করছে উল্লেখ করে তাদের কষ্ঠের সাথে সহমর্মিতা প্রকাশ করেন তিনি।
টেলিভিশনের ‘টক সো’তে সাংবাদিকদের কেউ কেউ তথ্য-উপাত্ত দিয়ে কথা বলেন সেজন্য তাদেরকেও ধন্যবাদ জানিয়ে আরো জোরালোভাবে সোচ্চার হওয়ার পরামর্শও দেন বিএনপি মহাসচিব।
বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর সভাপতিত্বে ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভপতি শহিদুল ইসলাম সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় নয়া দিগন্তের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মোস্তফা কামাল মজুমদার, এম এ আজিজ, আবদুল হাই শিকদার, বাকের হোসাইন, সৈয়দ আবদাল আহমেদ, ইলিয়াস খান, কায়কোবাদ মিলন, প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।