৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৯:৪৩:৫৮ অপরাহ্ন


নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতবিরোধ তুঙ্গে
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-০৮-২০২৫
নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতবিরোধ তুঙ্গে প্রতীকী ছবি


অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধানের ঘোষিত ফেব্রুয়ারি ২০২৬ নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে জামাত, এনসিপির মতবিরোধ চরমে ওঠায় নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। সবাই জানে নানা কারণে ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ নির্বাচন ঘিরে বিভিন্ন ধরনের বিতর্ক আছে। এ নির্বাচনগুলোতে জনগণ ভোট দিতে পারেনি। শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণকে ভোটাধিকার বঞ্চিত করা ছিল প্রধান অভিযোগ। জনগণের ভোটাধিকার পুনরায় প্রতিষ্ঠা ছিল ১৬ বছর ধরে সরকারবিরোধী আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য। ১৬ বছরের আন্দোলন ২০২৪ জুলাই-আগস্ট ছাত্রদের কোটাবিরোধী আন্দোলন যুক্ত হয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়ে সরকারের পতন ঘটালে আগস্ট ২০২৪ অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। 

অনির্বাচিত সীমিত সময়ের অন্তর্বর্তী সরকারের মূল দায়িত্ব ছিল দেশের ভেঙে পড়া অর্থনীতি, সব অবকাঠামো যথাসম্ভব পুনরায় গঠন করে অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠান। সরকার বেশ কয়েকটি সংস্কার কমিশন গঠন করে এবং তাদের বিস্তারিত সুপারিশগুলো সমন্বয় করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দফায় দফায় আলোচনার ভিত্তিতে জুলাই সনদ ঘোষণা করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। এখন দেখা যাচ্ছে, জুলাই সনদ নিয়ে বিএনপির সঙ্গে জামাত এবং নতুনভাবে গঠিত এনসিপির মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। মূল মতবিরোধ পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন এবং জুলাই সনদ বাস্তবায়ন বিষয়ে আইনি কাঠামো। জামাত এবং এনসিপি এমনকি ফেব্রুয়ারি ২০২৬ নির্বাচন বর্জনের প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়েছে। কিছু দল জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের মধ্যে কিছু বিষয় নির্ধারণের দাবি তুলেছে। কিছু প্রান্তিক দল প্রধান উপদেষ্টার বিরুদ্ধে গণদাবির প্রতি বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ তুলেছে। 

সবাইকে স্মরণে রাখতে হবে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা ছাড়া সংস্কার বিশেষত সংবিধান পরিপন্থী কোনো কিছু করার আইনি ভিত্তি নেই অনির্বাচিত সরকারের। গত এক বছরের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, দেশ পরিচালনায় কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় সরকার সবকিছু গুলিয়ে ফেলেছে। এ সরকার যতদিন থাকবে পুঞ্জীভূত সংকটগুলো ঘনীভূত হতে থাকবে। যত শিগগির সম্ভব একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার গঠন অপরিহার্য। জনগণ অবাধ নির্বাচনে নিরাপদে ভোট দিতে পারলে নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারবে। একমাত্র নির্বাচিত সংসদ পারবে সব মৌলিক সংস্কার করতে। জুলাই-আগস্ট ২০২৪সহ পরবর্তী সময়ে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড, মব সন্ত্রাস, গুম, খুন, দুর্নীতির বিচার করতে। 

কিছু দল ১৯৯০ সর্বদলীয় ঐকমত্য থেকে পরবর্তী বিএনপি সরকারের সরে আসার প্রসঙ্গ তুলে সংশয় প্রকাশ করে বলছে, এখন নির্বাচন হলে নির্বাচিত সরকার জুলাই সনদে সম্মত বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করবে না। প্রান্তিক কিছু দল-গোষ্ঠী ১৯৭২ কনস্টিটিউশন বাতিল এবং সংবিধানের মূলনীতি বাতিলের দাবি করছে। স্বাধীন বাংলাদেশে মৌলিক বিষয়গুলো পরিবর্তনের কোনো অধিকার জনগণ কাউকে দেয়নি, দেবে না।

অনেকে বলছেন যাদের কোনো জনভিত্তি নেই, নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠনের কোনো সম্ভাবনা নেই, তারাই নানা প্রসঙ্গ তুলে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে। এমতাবস্থায় সরকারকে সব দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল এবং স্টেকহোল্ডারদের আস্থায় নিয়ে দ্রুত ভোটের ট্রেন গন্তব্যে পৌঁছে দিতে হবে। ২০২৬ ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু উপদেষ্টার কার্যক্রম বিষয়ে নানা অভিযোগ ওঠায় তাদের পরিবর্তন করে সরকারের নিরপেক্ষ ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচনে আগ্রহী সব দলের জন্য সমতল নির্বাচনী মাঠ সৃষ্টি করতে হবে।

শেয়ার করুন