৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ৬:১২:০৬ অপরাহ্ন


বাংলাদেশের নির্বাচনী হালচাল
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-০৮-২০২৫
বাংলাদেশের নির্বাচনী হালচাল প্রতীকী ছবি


বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে এখনো দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র চলছে। কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠী নানা প্রতিকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বানচাল করতে প্রাণান্তকর অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু আঞ্চলিক এবং বিশ্ব পরিস্থিতি বাংলাদেশকে জাতীয় নির্বাচনের দিকে ধাবিত করছে। অবস্থা দৃষ্টে প্রতীয়মান হচ্ছে ডিসেম্বর ২০২৫ না হোক ২০২৬ শুরুতে কোন সময় নির্বাচন হবে। 

হয়তো কয়েকদিনের মধ্যেই নির্বাচনের সঠিক সময় জানা যাবে। অচিরেই সরকার জুলাই ঘোষণা দিতে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। আবার জুলাই মাসজুড়ে সারা দেশে পদযাত্রা করা নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি এককভাবে পৃথক জুলাই ঘোষণা দিয়েছে। ২০২৪ জুলাই মাসের মতো ২০২৫ জুলাই নানা অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশে। সরকার সচেতন থাকলে এবং আন্তরিকভাবে পরিস্থিতি মনিটরিং করলে অশুভ ঘটনাগুলো এড়ানো যেতো বলেই আমরা মনে করি। 

রাজনৈতিক অঙ্গনে এখনো বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) তৃণমূলে সবচেয়ে শক্তিশালী দল। অনেকের ধারণা অপর বৃহৎ দল আওয়ামী লীগ প্রকৃত প্রস্তাবে রাজনীতির মাঠে অনুপস্থিত এবং তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ সম্ভাবনা সীমিত। এমতাবস্থায় একক রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচনে বিএনপির জয়ের সম্ভাবনা সমুজ্জ্বল তবে মাঠপর্যায়ে নানা বিতর্কে বিএনপির ভাবমূর্তি যথেষ্ট ক্ষুণ্ন হচ্ছে। একটি মহল বিএনপির বিরুদ্ধে সুকৌশলে অপপ্রচার চালাচ্ছে। 

মাঠে সক্রিয় অপর প্রধান দল জামাতে ইসলামী সরকারের ওপর প্রভাব বিস্তার করে নির্বাচনী কার্যক্রমে যথেষ্ট শক্তিশালী অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু ১৯৭১ মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তাদের বিতর্কিত ভূমিকার কারণে দলটি এখনো এককভাবে নির্বাচনে জয় লাভ করে সরকার গঠন করবে সেই সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের ফসল ছাত্র-যুবকদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি সরকারের প্রচ্ছন্ন পৃষ্ঠপোষকতা পেলেও এখনো নির্বাচন কমিশনের অনুমোদন পায়নি। 

তাছাড়া নানা কারণে দলের কিছু নেতা-নেত্রী এবং সহায়ক সংগঠনের কারো কারো বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে। অনেকের ধারণা পরিবর্তিত সময়ে কেউ কেউ দুর্নীতি এবং চাঁদাবাজি করে বিতর্কিত হয়েছে। সাধারণভাবে দেশের মানুষ রাজনীতিতে শক্তিশালী তৃতীয় শক্তির আগমন প্রত্যাশা করলেও এনসিপি সেই প্রত্যাশা এখন পর্যন্ত পূরণ করতে পারেনি। এর বাইরে ইসলামী দলগুলো যৌথভাবে বা বাম ঘরানার দলগুলো নির্বাচনী মাঠে তরঙ্গ সৃষ্টি করলেও বিশেষ কিছু অর্জন করতে পারবে মনে হয় না।

জানি না জুলাই ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশের রাজনীতির অঙ্গন নিস্তরঙ্গ থাকবে কি না। সরকার কিন্তু অজানা আতঙ্কে সতর্ক অবস্থা জারি করেছে। আগস্ট ১ তারিখ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক কার্যকর হবে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সেটি কোন পর্যায়ে দাঁড়ায় এবং সরকার কি অঙ্গীকার করে কিছু অর্জন করে সেগুলো কিন্তু সামাজিক, অর্থনৈতিক এমনকি রাজনীতিকে প্রভাবিত করবে। আরো দেখতে হবে সরকার জুলাই গণহত্যার বিচার কতটা নির্মোহ এবং নিরপেক্ষভাবে সম্পাদনের পথে এগিয়ে যায়। জুলাই সনদ বা ঘোষণা কতটা প্রতিক্রিয়া ফেলে। আওয়ামী লীগের মতো তৃণমূলে সংঘটিত একটি রাজনৈতিক শক্তিকে নির্বাচনের বাইরে রেখে এগিয়ে যাওয়া সহজ হবে না। 

অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান একটি সংঘবদ্ধ চক্র বিএনপি এবং এনসিপির জনপ্রিয়তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। মনে রাখতে হবে বাংলাদেশের মানুষ এখন অনেক সচেতন। তরুণ সমাজ কিন্তু সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধন্ত নিতে কুণ্ঠিত হবে না। সব মিলিয়ে রাজনৈতিক পরিবেশ এখনো ঘোলাটে থাকলেও নির্বাচন ছাড়া বিকল্প নেই। সরকার হয়তো ভাবছে কীভাবে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন করে নিরাপদে পরিত্রাণ পেতে পারে। ক্ষমতাপ্রত্যাশী সব দলের উচিত হবে সরকারকে নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টিতে সহায়তা করা।

শেয়ার করুন