৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০২:০৪:৫০ অপরাহ্ন


নির্বাচনের পর গঠিত পরবর্তী সরকারের অংশ হওয়ার কোনো আগ্রহ তাঁর নেই- ড. ইউনূস
দেশ অনলাইন
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-০৬-২০২৫
নির্বাচনের পর গঠিত পরবর্তী সরকারের অংশ হওয়ার কোনো আগ্রহ তাঁর নেই- ড. ইউনূস


প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, নির্বাচনের পর গঠিত পরবর্তী সরকারের অংশ হওয়ার কোনো আগ্রহ তাঁর নেই। তিনি জোর দিয়ে বলেন, তাঁদের কাজ হলো সফল ও শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা, যা নির্বাচন দ্বারা সম্পন্ন হবে।

আজ বুধবার লন্ডনের চ্যাথাম হাউজে রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সে বক্তব্য প্রদানের পর এক প্রশ্ন-উত্তর পর্বে বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কোনোভাবেই না, একেবারেই না। আমি মনে করি, আমাদের উপদেষ্টা পরিষদের কোনো সদস্য সেটা করতে আগ্রহী হবেন না’।

একজন সাংবাদিক জানতে চান, অধ্যাপক ইউনূস কি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত পরবর্তী সরকারের অংশ হতে আগ্রহী বা সে ধরনের অবস্থানে রয়েছেন কি-না। উত্তরে অধ্যাপক ইউনূস সাফ জানিয়ে দেন, তাঁদের দায়িত্ব হলো- যে রূপান্তর চলছে সেটা ঠিকমতো শেষ করা এবং যখন তাঁরা নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন, তখন জনগণ যেন সন্তুষ্ট থাকে।

তিনি বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে নির্বাচনটি সঠিকভাবে সম্পন্ন হবে। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।’


নতুন ভোটারদের আগ্রহ নতুন বাংলাদেশ গড়তে কাজে লাগানো হবে


দেশের তরুণদের স্বপ্ন ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ভোট দেয়ার প্রতি তরুণদের যে আগ্রহ, তা নতুন বাংলাদেশ গড়তে কাজে লাগানো হবে।

তিনি আজ বুধবার লন্ডনে এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে বলেন, ‘আমরা তরুণদের স্বপ্ন ও দৃষ্টিভঙ্গিকে সম্মান করি... আমরা পুরনো বাংলাদেশকে বিদায় জানাতে চাই।’

চ্যাথাম হাউজের রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স আয়োজিত অনুষ্ঠানের শিরোনাম ছিল  ‘অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আলাপচারিতা।’

তিনি বলেন, গত ১৭ বছরে যারা নতুন ভোটার হয়েছে, তারা কেউ তাদের প্রথম ভোট দেয়ার সুযোগ পায়নি। ‘নতুন বাংলাদেশ গড়তে তরুণদের এই উচ্ছ্বাসকে আমরা ব্যবহার করতে চাই।’ 

প্রধান উপদেষ্টা জানান, পরবর্তী নির্বাচন শুধু একটি নিয়মিত ভোট গ্রহণ বা নতুন সরকার নির্বাচনের জন্য নয়, বরং এটি হবে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার ভোট এবং ‘এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি।’

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য বহু কমিশন গঠন করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাঁর সরকার শেষ পর্যন্ত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনও গঠন করেছে।

অধ্যাপক ইউনূস জানান, চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো এসব সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলোতে সব রাজনৈতিক দল সম্মত হবে এবং একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করবে।

তিনি বলেন ‘আমরা একে ‘জুলাই সনদ’ বলি। আমরা জুলাই মাসের জন্য অপেক্ষা করছি...এই সনদ জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে এবং এর ভিত্তিতেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’

অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তাদের প্রধানত তিনটি দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল—সংস্কার, জুলাই অভ্যুত্থানের হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের বিচার এবং নির্বাচন আয়োজন।

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার সময়কার অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সেটি ছিল অত্যন্ত কঠিন সময়, যখন বিশ্ব নানা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল এবং বাংলাদেশও আলাদা ধরনের সংকটে ছিল।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমরা ছিলাম অর্থনীতির শূন্য পর্যায়ে, বরং ঋণাত্মক পর্যায়ে। আমাদের বিশাল দেনা পরিশোধ করতে হয়েছে।’

স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সময়কার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রস্তুত করা শ্বেতপত্রের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, বিতাড়িত সরকারের সময়ে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশে পাচার করা হয়েছে। তখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল শূন্য এবং ব্যাংকিং খাত ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।

দেশের অর্থনীতিকে পতনের হাত থেকে রক্ষা করতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে এবং ‘আজ আমাদের পেমেন্ট অব ব্যালেন্স পুরোপুরি পাল্টে গেছে।’

তাঁর সরকারের প্রতি বৈশ্বিক সমর্থন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সকল দেশ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি নৈতিক সমর্থন দিয়েছে। এজন্য তিনি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

শেয়ার করুন