নিউইয়র্ক মহানগর উত্তর বিএনপি ঈদ পুনর্মিলনী এবং মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। সংগঠনের সভাপতি আহবাব চৌধুরী খোকনের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ চৌধুরীর পরিচালনায় চমৎকার এই অনুষ্ঠান গত ৭ জুন সন্ধ্যায় বাংলাদেশি অধ্যুষিত ব্রঙ্কসের আলস্কা পার্টি হলে অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক মন্ত্রী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী। গেস্ট অব অনার ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, সাবেক বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী বেবী নাজনীন। প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির উত্তর আমেরিকার সাংগঠনিক সমন্বয়ক ও কেন্দ্রীয় বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন খোকন। বিশেষ অতিথি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য জিল্লুর রহমান জিল্লু, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামাল পাশা বাবুল, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক কোষাধ্যক্ষ জসিম উদ্দিন ভূইয়া প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সিনিয়ার সহ-সভাপতি কাজী আমিনুল ইসলাম স্বপন, সিনিয়ার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার জাহিদ, যুক্তরাষ্ট্র মুক্তিযোদ্ধা দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুরুজ্জামান খান, বিএনপি নেতা জাফর তালুকদার, এ জি এম জাহাঙ্গীর হাসাইন, আব্দুর রহিম, শরিফুল খালিশদার, সোহেব আহমদ, সেবেল খান মাহবুব, বিলাল চৌধুরী, মাহমুদ আই খান সুলতান, মোহাম্মদ আলী রাজা, আশরাফ চৌধুরী জামি, জিল্লুর রহমান খান, সাম্মুন আহমদ, মাহবুব চৌধুরী ব্রঙ্কস (পূর্ব) আহ্বায়ক লিয়াকত আলী, ব্রঙ্কস (পশ্চিম) আহবায়ক আনোয়ারুল আলম ভূইয়া, ব্রঙ্কস (পশ্চিম) সদস্য সচিব দুলাল রহমান, ম্যানহাটন ব্যুরো সদস্য সচিব জিয়াউল আহমদ জামিল, অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান সাবু, স্টেট বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আশরাফ হোসেন, নিউইয়র্ক মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রিপন মিয়া, যুবদল নেতা আবুল কাশেম, মানিকুজ্জামান মানিক প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ নেতাদের ঐতিহ্য হচ্ছে দেশ এবং জাতিকে বিপদে বা সংকটে পেলে পালিয়ে যাওয়া। স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় শেখ মুজিব পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে ধরা দিয়ে জাতিকে বিপদে ফেলে পালিয়ে গিয়েছিলেন। ৭ মার্চের ভাষণে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দেননি। তিনি চেয়েছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে। তাজউদ্দীন আহমেদ তাকে স্বাধীনতা ঘোষণা দিতে বলায় তিনি বলেছিলেন, আমি কী তোমরা রাষ্ট্রদ্রোহী বানাবে। সিপাহি বিপ্লবের সময়ও আওয়ামী লীগ নেতারা পালিয়ে গিয়েছিলেন। জুলাই-আগস্টের আন্দোলনেও শেখ হাসিনা ভারত পালিয়ে গিয়েছিলেন। আশ্রয় নিয়েছিলেন মোদির কাছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ স্বাধীনতাযুদ্ধ করেনি, জনযুদ্ধ করেনি, ২৪ সালেও যুদ্ধ করেনি। তিনি বলেন, পৃথিবীতে যত স্বৈরাশাসক ছিল তার মধ্যে শেখ হাসিনা ছিল নিষ্কৃষ্ট। শেখ হাসিনা আর কোনোদিন বাংলাদেশে ফিরে আসবে না। অন্যদিকে বিএনপির সব সময় লড়াই করেছে গণতন্ত্রে জন্য। এবারও সেই লড়াই করেছে এবং অন্তর্বর্তী সরকারকে সময় দিয়ে যাচ্ছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবদিন ফারুক বলেন, যারা বলেন নির্বাচন নির্বাচন করে বিএনপির থুথু বের হয়ে যাচ্ছে, তাদের আমরাও চিনি। সাড়ে ১০ মাসে এপিএস ৩০০ কোটি টাকার মালিক হয়। আমরা অনেক কিছু জানি বলবো না। আর বলা শুরু করলেন হাটে হাঁড়ি ভেঙে দেবো। তিনি বলেন, ১৬ কছর আমাদের নেতাকর্মীরা মৃত্যুবরণ করেছে, হামলা-মামলা, গুমের শিকার হয়েছে, আয়নাঘরে গিয়েছে, বন-জঙ্গলে থেকেছে, আমাদের সেই অবদান কেন অস্বীকার করা হচ্ছে? আমরা কারো রক্তচক্ষুকে ভয় পাই না, শেখ হাসিনাকেও ভয় পাইনি। তিনি বলেন ড. ইউনূসের প্রতি বিএনপির সমর্থন ছিল এবং সমর্থন এখনো আছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এপ্রিল ফুল করার জন্য এপ্রিলে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছেন। আমরা ধোঁকা খাওয়ার মানুষ নই। আপনি নন্দিত, আমরা চাই না আপনি নিন্দিত হোন। সাবেক বিরোধীদলের চিফ হুইপ জয়নাল আবদিন ফারুক বলেন, একসময় শেখ মুজিবের দল করতেন, ছাত্রলীগ করতেন তখন কেউ অন্যদল করতো না উল্লেখ তিনি জানান, ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের নমিনেশন চেয়েছিলেন, কিন্তু তাকে না দিয়ে বঙ্গবন্ধু শ্রমিক নেতা আব্দুর রহমানের নাম বলেন। সেই থেকেই তিনি আওয়ামী লীগ থেকে বের হয়েছিলেন, এখনো আওয়ামী লীগের নাম নেননি। সাবেক বিরোধীদলের চিফ হুইপ ফারুক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে পৃথিবীর ইতিহাসে একজন ‘ঘৃডুত’ ব্যক্তি উল্লেখ করে বলেন, তিনি নিজ হাতে গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করেছেন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা লুণ্ঠন করেছেন। ৫টা খবরের কাগজ রেখে সব বন্ধ করে দিয়েছেন।
উপস্থিত বিএনপির নেতাকর্মীদের হতাশ না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এটা সাময়িক। দলকে মহাসাগরের সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেন, বিএনপিকে যত নির্যাতন করা হয়, বিএনপি ততই শক্তিশালী হয়। কারণ আমাদের শক্তি হচ্ছে শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া এবং তারুণ্যের প্রতীক তারেক রহমান।
বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বেবী নাজনীন বলেন, আমরা যারা জিয়ার দল করি, তারা কলঙ্কিত হতে পারি না। খালেদা জিয়া আমাদের আস্থা এবং তারেক রহমান আদর্শ। তিনিই বাংলাদেশের আগামীর রাষ্ট্রনায়ক।
কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জিল্লুর রহমান জিল্লু বলেন, বিএনপির বিরুদ্ধে বিভিন্ন মাধ্যমে অপপ্রচার চলছে। শেখ হাসিনার শাসনালে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ১ লাখ ৪৩ হাজার মামলা হয়েছে, ৬০ লাখ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে, ক্রসফায়ারে ৭৭১ জনকে হত্যা করা হয়েছে, গুম করা হয়েছে ১ হাজার ২০৪ জনকে, সর্বশেষ জুলাই আন্দোলনে বিএনপির ৪২২ জন নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, প্রতি হত্যাকাণ্ডের বিচার করা হবে।
যুক্তরষ্ট্র বিএনপির সাবেক কোষাধ্যক্ষ জসীম ভূইয়া বলেন, যতদিন পর্যন্ত খুনি শেখ হাসিনা বিচার করা না হবে, ততদিন পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।
সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন সভাপতি আহবাব চৌধুরী খোকন। চমৎকার এবং সবলীল উপস্থাপনা করেছেন সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ চৌধুরী।