ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিস্যান্টিস ট্রাম্প প্রশাসনের আসন্ন অভিবাসন নীতির সঙ্গে ফ্লোরিডা স্টেটের আইনকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে উদ্যোগী হয়েছেন। ট্রাম্পের পরিকল্পিত অভিবাসন নির্বাহী আদেশগুলোর সঙ্গে ফ্লোরিডার আইন সংগতিপূর্ণ করতে তিনি বিশেষ একটি অধিবেশনে অভিবাসন বিল প্রণয়নের প্রস্তাব দিয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসনের আসন্ন পদক্ষেপগুলোর মধ্যে ২৮৭ (জি) প্রোগ্রামের শক্তিশালী প্রয়োগ এবং অবৈধ অভিবাসীদের ইন-স্টেট টিউশন সুবিধা বাতিলের মতো পদক্ষেপ অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসন ২৮৭(জি) প্রোগ্রামের একটি বিস্তৃত সংস্করণ চালু করতে পারে। এই প্রোগ্রামে ফেডারেল অভিবাসন কর্মকর্তাদের কিছু দায়িত্ব স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের হাতে ন্যস্ত করার সুযোগ রয়েছে। গভর্নর ডিস্যান্টিসের এই উদ্যোগ ফ্লোরিডার অভিবাসন নীতিকে আরো কঠোর করতে সাহায্য করবে বলে মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন।
গত ১৩ জানুয়ারি সোমবার গভর্নর ডিস্যান্টিস ঘোষণা করেন যে, বিশেষ অধিবেশন ২৭ জানুয়ারি শুরু হবে, ট্রাম্পের অফিস গ্রহণের এক সপ্তাহ পর। এই সময়কালে ফ্লোরিডা স্টেটের আইনগুলো এমনভাবে তৈরি করা হবে, যা ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করবে। ডিস্যান্টিস জানান, তিনি প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করেছেন এবং তার দল ট্রাম্প প্রশাসনের প্রাথমিক অভিবাসন পরিকল্পনা সম্পর্কে বিস্তারিত ব্রিফিং পেয়েছে। ট্রাম্প ২০ জানুয়ারি অফিসে যোগদানের পর শুরুর দিনগুলোতেই এই পরিকল্পনা কার্যকর করার প্রত্যাশা করছেন।
ডিস্যান্টিস স্থানীয় কর্মকর্তাদের ফেডারেল অভিবাসন আইন মানতে বাধ্য করার জন্য কঠোর শাস্তির বিধান, স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ক্ষমতা বাড়ানো এবং অভিবাসীদের ফ্লোরিডায় থাকার অবশিষ্ট প্রণোদনা দূর করার ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বিশেষভাবে ২০১৪ সালের একটি আইন তুলে ধরেন, যা অবৈধ অভিবাসীদের ফ্লোরিডা স্টেটের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন-স্টেট টিউশন ফির সুবিধা দেয়। এই আইনটি তখনকার গভর্নর রিক স্কট স্বাক্ষর করেছিলেন। গভর্নর ডিস্যান্টিস আরো বলেন, ইন-স্টেট টিউশন সুবিধা তাদের অবৈধভাবে এখানে থাকার জন্য পুরস্কৃত করছে।
ডিস্যান্টিসের এ উদ্যোগে ফ্লোরিডার অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাশলি মুডি এবং স্টেট রিপ্রেজেন্টেটিভ র্যান্ডি ফাইন সমর্থন জানিয়েছেন। ফাইন জানান, তিনি বিশেষ অধিবেশনের জন্য একটি প্রস্তাবিত বিল উত্থাপন করবেন, যা অবৈধ অভিবাসীদের টিউশন ফির সুবিধা বন্ধ করবে। তিনি বলেন, আমাদের বিশ্বখ্যাত কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে অবৈধ অভিবাসীদের জন্য ৪৫ মিলিয়ন ডলারের সুবিধা বন্ধ করা প্রয়োজন।
ডিস্যান্টিসের এই পদক্ষেপ নিয়ে ফ্লোরিডার বিভিন্ন মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অভিবাসী অধিকার সংগঠনগুলো এ উদ্যোগের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে, তারা দাবি করছে এটি মানবাধিকারের লঙ্ঘন এবং শিক্ষার সুযোগকে সংকুচিত করবে। অন্যদিকে ডিস্যান্টিসের সমর্থকরা বলছেন, এটি রাজ্যের নিরাপত্তা ও অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হবে।
মানবাধিকার সংগঠন ‘ফ্লোরিডা ইমিগ্র্যান্ট কোয়ালিশন’ জানিয়েছে, এই নীতিমালা বাস্তবায়িত হলে অনেক শিক্ষার্থী তাদের শিক্ষা জীবন চালিয়ে যেতে পারবে না। সংগঠনের এক মুখপাত্র বলেন, শিক্ষা সবার অধিকার, অবৈধ অভিবাসী হলেও তাদের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করা উচিত নয়।
ডিস্যান্টিসের এই কঠোর অভিবাসন নীতি আগামী নির্বাচনে তার জনপ্রিয়তায় কী প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে বিতর্ক চলছে। কেউ কেউ মনে করছেন, এটি রিপাবলিকান ভোটারদের মধ্যে ডিস্যান্টিসের অবস্থানকে শক্তিশালী করবে, আবার কেউ কেউ বলছেন, এটি ল্যাটিনো ও তরুণ ভোটারদের মধ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
গভর্নর ডিস্যান্টিসের প্রস্তাবিত অভিবাসন বিলটি ফ্লোরিডার অভিবাসন নীতিকে আরো কঠোর করার লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে। যদিও এই পদক্ষেপ রাজ্যের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্বার্থে ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে, তবে এটি মানবাধিকার ও শিক্ষার সুযোগ সংকুচিত করতে পারে বলে সমালোচনা রয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন ও অভিবাসী সম্প্রদায়ের জন্য এটি উদ্বেগজনক। অভিবাসন নীতিতে এই ধরনের পরিবর্তন সামাজিক বৈষম্য ও বৈচিত্র্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, যা ফ্লোরিডার দীর্ঘমেয়াদি সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় প্রভাব ফেলতে পারে। তাই এই বিলের বাস্তবায়ন ও এর পরিণতি নিয়ে আরো সংবেদনশীল ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন।