৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ৬:১৬:৪৮ অপরাহ্ন


ডিএনএ সংগ্রহে স্বচ্ছতার অভাবে হোমল্যান্ড সিকিউরিটির বিরুদ্ধে মামলা
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-০৬-২০২৫
ডিএনএ সংগ্রহে স্বচ্ছতার অভাবে হোমল্যান্ড সিকিউরিটির বিরুদ্ধে মামলা ডিএনএ


যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের (ডিএইচএস) বিরুদ্ধে ডিএনএ সংগ্রহ কার্যক্রমে স্বচ্ছতার অভাব এবং নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ফেডারেল কোর্টে মামলা দায়ের করেছে তিনটি মানবাধিকার ও আইন সহায়তা সংস্থা। গত ৯ জুন ওয়াশিংটনে এই মামলা দায়ের করে জর্জটাউন ল সেন্টার অন প্রাইভেসি অ্যান্ড টেকনোলজি, আমিকা সেন্টার ফর ইমিগ্র্যান্ট রাইটস এবং আমেরিকানস ফর ইমিগ্র্যান্ট জাস্টিস। মামলায় বলা হয়, ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে ডিএইচএস, ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) এবং কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশন (সিবিপি)-এর কাছে অনাগরিকদের ডিএনএ সংগ্রহ সংক্রান্ত তথ্য চাওয়া হলেও কোনো সন্তোষজনক জবাব পাওয়া যায়নি। এর ফলে, সংস্থাগুলোর অভিযোগ, ডিএনএ সংগ্রহ কার্যক্রমটি নাগরিক অধিকার লঙ্ঘন করছে এবং গোপনে নজরদারির একটি অবৈধ পদ্ধতিতে রূপ নিচ্ছে।

জর্জটাউন সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের পর থেকে ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিএনএ সংগ্রহ ও তা এফ বিআইয়ের জাতীয় ডাটাবেজ কোডিসে সংরক্ষণের মাত্রা ৫ হাজার শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছে। ফলে ডিএইচএস বর্তমানে কোডিসের সবচেয়ে বড় ডাটা-জোগানদাতা। এই ডাটাবেজ থাকা ডিএনএ নমুনা দেশের আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো অপরাধ তদন্তে ব্যবহার করতে পারে।

জর্জটাউন সেন্টারের গবেষণা পরিচালক স্টিভি গ্ল্যাবারসন বলেন, এই কর্মসূচি এমন ব্যক্তিদের কাছ থেকেও ডিএনএ সংগ্রহ করছে, যাদের বিরুদ্ধে কোনো অপরাধের অভিযোগ নেই। এটি সরকারের একটি বিপজ্জনক নজরদারি কৌশল, যা কোনো নীতিমালার ভিত্তিতে পরিচালিত হচ্ছে, তার কোনো স্বচ্ছতা নেই। ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি এই বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য দেয়নি।

আমিকা সেন্টারের সিনিয়র অ্যাটর্নি ড্যানিয়েল মেলো জানান, ২০০৫ সালের একটি আইন অনুযায়ী, ফেডারেল সংস্থাগুলো অনাগরিকদের থেকে ডিএনএ সংগ্রহ করতে পারে। তবে ২০২০ সালের আগে পর্যন্ত আইনের প্রয়োগ ছিল সীমিত। ট্রাম্প প্রশাসনের একটি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে এই কর্মসূচিকে পূর্ণমাত্রায় বাস্তবায়ন করা হয় এবং বাইডেন প্রশাসনও তা চালিয়ে যেতে থাকে। তবে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনিয়ম ও অসামঞ্জস্যতার অভিযোগ রয়েছে।

আইনজীবীরা সতর্ক করেছেন, এই তথ্য সংগ্রহ ভবিষ্যতে বৃহত্তর নজরদারি কাঠামোর অংশ হতে পারে, যা অনাগরিক সম্প্রদায়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে এবং তাদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরণের ঝুঁকি বাড়াবে। জর্জটাউন সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক এমিলি টাকার বলেন, এই ডিএনএ সংগ্রহ কর্মসূচিকে শুধুই ‘ইমিগ্রেশন এনফোর্সমেন্ট’ হিসেবে দেখা ভুল। এটি মূলত নজরদারি ব্যবস্থার অংশ, যা একসময় সবার ওপর প্রয়োগ হতে পারে। তিনি অভিযোগ করেন, ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসন আইনের ছত্রছায়ায় ফেডারেল নজরদারি বাড়াচ্ছে, যেখানে কোনো বিচার বিভাগীয় নজরদারি বা জবাবদিহিতা নেই।

মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, এই কর্মসূচির মাধ্যমে রাষ্ট্র একটি বিপজ্জনক নজরদারি ব্যবস্থার ভিত্তি গড়ে তুলছে, যার প্রভাব শুধু অভিবাসন ব্যবস্থার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না বরং গোটা সমাজেই এর প্রভাব পড়বে। মামলার মাধ্যমে তারা ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটিকে জবাবদিহির আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছে।

শেয়ার করুন