মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ৪ মার্চ কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে সোশ্যাল সিকিউরিটি (এসএসএ) ব্যবস্থায় জালিয়াতির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি দাবি করেন, সরকারি তথ্যভান্ডারে এমন অসংখ্য ব্যক্তির নাম রয়েছে, যাদের বয়স মানবজীবনের সীমা ছাড়িয়ে গেছে এবং তাদের নামে অর্থ প্রদান করা হচ্ছে। তবে সোশ্যাল সিকিউরিটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এসএসএ) জানিয়েছে, কেউ এই বয়সী ব্যক্তিদের জন্য সুবিধা পাচ্ছে না। এসএসএ জানিয়েছে যে, ১০০ বছর বা তার বেশি বয়সী যে কোনো ব্যক্তি, যাদের মৃত্যুর তারিখ সঠিকভাবে রেকর্ড হয়নি, তাদের রেকর্ড সংশোধন করা হচ্ছে, তবে তারা বর্তমানে কোনো ধরনের সুবিধা গ্রহণ করছেন না। এসএসএর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বক্তৃতায় যে পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছে তা বিভ্রান্তিকর ছিল এবং কোনভাবেই এসব ব্যক্তির জন্য অর্থ প্রদান করা হচ্ছে না।
মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোশ্যাল সিকিউরিটি ব্যবস্থায় জালিয়াতি নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি দাবি করেন যে, সরকারি তথ্যভান্ডারে এমন অসংখ্য ব্যক্তির নাম রয়েছে, যাদের বয়স মানবজীবনের সাধারণ সীমা ছাড়িয়ে গেছে, যার ফলে মৃত ব্যক্তিদের নামে ভুলভাবে অর্থ প্রদান হতে পারে। ট্রাম্পের বক্তব্যে উল্লেখ করা হয় যে, ১০০ থেকে ১০৯ বছর বয়সী সদস্যের সংখ্যা ৪.৭ মিলিয়ন, ১১০ থেকে ১১৯ বছর বয়সী সদস্যের সংখ্যা ৩.৬ মিলিয়ন, ১২০ থেকে ১২৯ বছর বয়সী সদস্যের সংখ্যা ৩.৪৭ মিলিয়ন, ১৩০ থেকে ১৩৯ বছর বয়সী সদস্যের সংখ্যা ৩.৯ মিলিয়ন এবং ১৪০ থেকে ১৪৯ বছর বয়সী সদস্যের সংখ্যা ৩.৫ মিলিয়ন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আরো বলেন, বিশ্বাস করুন বা না করুন, সরকারি তথ্যভান্ডারে এই সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে, এবং তাদের অনেকের নামেই এখনো টাকা প্রদান করা হচ্ছে। ট্রাম্পের এই বিস্ময়কর পরিসংখ্যান সোশ্যাল সিকিউরিটি ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
সোশ্যাল সিকিউরিটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কমিশনার লি ডুডেক বলেন, আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানাই, যিনি গত রাতে কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে এই অস্বচ্ছতার বিষয়টি তুলে ধরেছেন। আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আমাদের কর্মসূচিতে প্রতারণা, অপচয় এবং দুষ্টাচার উৎখাত করতে এবং মৃতের তারিখের অভাবে সৃষ্ট এই অসংগতি সমাধান করতে সক্রিয়ভাবে কাজ করছি। এসএসএ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বক্তব্যের পর একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। তারা ১০০ বছর বা তার বেশি বয়সী এমন ব্যক্তিদের রেকর্ড সংশোধন করছে, যাদের মৃত্যুর তারিখ এখনও সঠিকভাবে রেকর্ডে নেই। যদিও এসব ব্যক্তি বর্তমানে সোশ্যাল সিকিউরিটি সুবিধা পাচ্ছেন না।
তিনি বলেন, এসএসএ দীর্ঘদিন ধরে প্রোগ্রাম ইন্টিগ্রিটি উদ্যোগ অনুসরণ করে আসছে, যার মাধ্যমে সেসব ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়, যাদের বয়স বেশি এবং মৃত্যুর রিপোর্ট অসম্পূর্ণ রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, এসএসএ এমন তথ্য পেয়ে থাকে, যেগুলো মেডিকেয়ার এবং মেডিকেড সার্ভিসেস থেকে আসে, যেখানে তিন বছরের বেশি সময় ধরে কেউ মেডিকেয়ার পার্ট এ বা পার্ট বি ব্যবহার করেননি। এই তথ্যের ভিত্তিতে, এসএসএ ৯০ বছর বা তার বেশি বয়সী এবং যাদের বর্তমানে সোশ্যাল সিকিউরিটি সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে, তাদের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যাচাই করে থাকে, যাতে তাদের সুবিধা প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা যায়। এছাড়া সোশ্যাল সিকিউরিটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে নিশ্চিত করার চেষ্টা করে যে ওই ব্যক্তি এখনো জীবিত আছেন। যদি কেউ মৃত বলে শনাক্ত হয়, তবে সংস্থা সঙ্গে সঙ্গে পেমেন্ট বন্ধ করে দেয় এবং প্রতারণার সন্দেহ এলে তা এসএসএর অফিস অব দ্য ইন্সপেক্টর জেনারেলকে রিপোর্ট করে।
ট্রাম্পের এই বক্তব্য সোশ্যাল সিকিউরিটি, মেডিকেয়ার এবং মেডিকেডের মতো গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বাজেট কমানোর একটি পূর্বাভাস হতে পারে বলে মানবাধিকার কর্মীরা জানিয়েছেন। তারা সতর্ক করেছেন যে, এই ধরনের অভিযোগের ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে সোশ্যাল সিকিউরিটি ব্যবস্থা সম্পর্কে অনাস্থা তৈরি হতে পারে, যা ভবিষ্যতে এই কর্মসূচির অর্থায়নে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই বিষয়টি সামনে এনে সরকারি ব্যয় কমানোর একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে এগোতে চাইছেন, যা নিম্ন ও মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, সোশ্যাল সিকিউরিটি ব্যবস্থায় সম্ভাব্য জালিয়াতি নিয়ে যে কোনো দাবি যাচাই করে দেখা গুরুত্বপূর্ণ। প্রশাসনিক তথ্যের সঠিকতা ও নীতিগত প্রভাব বিবেচনায় রেখে এই ধরনের অভিযোগ মূল্যায়ন করা উচিত, যাতে বাস্তবতার চিত্র স্পষ্ট হয় এবং সাধারণ মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করা যায়। এখন দেখার বিষয়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই বিতর্কিত তথ্য উপস্থাপনের ভিত্তিতে ভবিষ্যতে কী ধরনের নীতিগত পদক্ষেপ গ্রহণ করেন এবং কংগ্রেস এ বিষয়ে কী প্রতিক্রিয়া জানায়।