ভেনেজুয়েলার নাগরিক কিলমার আব্রেগো গার্সিয়াকে (২৯) অবশেষে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। চলতি বছরের মার্চ মাসে ট্রাম্প প্রশাসন তাকে অবৈধভাবে এল সালভাদরে নির্বাসিত করে, যা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক ও আইনি লড়াই শুরু হয়।
মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট গত এপ্রিল মাসে গার্সিয়ার নির্বাসনকে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করে এবং তাকে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেয়। দীর্ঘ সেই টানাপড়েনের পর ট্রাম্প প্রশাসন আব্রেগো গার্সিয়াকে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনে। তাকে মুক্তি না দিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প টেনেসি অঙ্গরাজ্যের একটি ফেডারেল আদালতে তার বিরুদ্ধে মানব পাচারের অভিযোগে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তিনি অবশেষে ন্যায়বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেন। অভিযোগপত্র অনুযায়ী, গার্সিয়া ২০১৬ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৯ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীদের পাচারে জড়িত ছিলেন। অভিযোগে আরো বলা হয়েছে, তিনি টেক্সাস থেকে অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন রাজ্যে অভিবাসীদের স্থানান্তর করতেন এবং পাচারের এই চক্রে এমএস-১৩ গ্যাং সদস্যরাও অন্তর্ভুক্ত ছিল। ফেডারেল প্রসিকিউটরদের দাবি, গার্সিয়া প্রতি মাসে গড়ে ৫০ জন করে অবৈধ অভিবাসী পরিবহন করতেন। তার বিরুদ্ধে একাধিক ফৌজদারি ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে এবং প্রতিটি অভিবাসী পরিবহনের জন্য তার সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে, যা কার্যত একপ্রকার আজীবন শাস্তির শামিল।
মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট গত এপ্রিল মাসে গার্সিয়ার নির্বাসনকে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করে এবং তাকে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেয়। কিন্তু সেই নির্দেশ মানতে ট্রাম্প প্রশাসন দীর্ঘ সময় গড়িমসি করে এবং তাকে এল সালভাদরের সেকট কারাগারে পাঠানো হয়। যেখানে বন্দিদের ওপর অমানবিক আচরণের অভিযোগ রয়েছে।
গার্সিয়ার আইনজীবী সাইমন সান্দোভাল-মোশেনবার্গ বলেন, সরকার গোপনে একজন মার্কিন নাগরিককে নির্বাসিত করে তারপর তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ সাজিয়ে ফিরিয়ে এনেছে। এটি ন্যায়বিচারের অপব্যবহার। এ প্রসঙ্গে ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যান জেমি রাসকিন বলেন, এই ঘটনাটি কেবল নৈতিক প্রশ্ন নয়, এটি একটি সাংবিধানিক প্রশ্ন- সরকার কীভাবে বিচার ছাড়াই কাউকে দেশ থেকে বের করে দিতে পারে? অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সাংবাদিকদের জানান, এমন একজন বিপজ্জনক পাচারকারীকে ফিরিয়ে আনার কোনো দরকার ছিল না। তিনি এমএস-১৩ গ্যাংয়ের সদস্য ছিলেন।
অভিযোগে আরো বলা হয়েছে, গার্সিয়া ও তার সহযোগীরা মোবাইল ফোন এবং সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে পাচারের কার্যক্রম চালাতেন। যাত্রীদের যাত্রাপথে ফোন কেড়ে রাখা হতো যাতে তারা বাইরের কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারে। এমনকি গাড়ির ভেতরের আসন পুনর্বিন্যাস করে শিশুসহ যাত্রী পরিবহন করা হতো। একবার টেনেসি হাইওয়ে পেট্রোল গার্সিয়ার গাড়ি থামিয়ে তৃতীয় সারির বেসামরিক আসনে গাদাগাদি করে রাখা অবৈধ যাত্রীদের উদ্ধার করে। এছাড়া মেক্সিকোতে ১৫০ জন অভিবাসী বহনকারী একটি ট্রাক উল্টে গেলে ৫০ জনের মৃত্যু হয়- এই ঘটনাতেও গার্সিয়ার জড়িত থাকার অভিযোগ তোলা হয়েছে।
আগামী ১৩ জুন গার্সিয়ার জামিন শুনানি ও আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। বিচারক বারবারা হোমস তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন এবং তিনি ফেডারেল হেফাজতেই থাকবেন বলে জানানো হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, কিলমার গার্সিয়ার মামলা শুধু মানব পাচারের অভিযোগ নয়, বরং নির্বাসন, নাগরিক অধিকার ও রাষ্ট্রের ক্ষমতার সীমা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আইনি ও রাজনৈতিক পরিসরে একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক বিতর্কের উদাহরণ হয়ে উঠেছে।