৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৭:৩৩:১৩ অপরাহ্ন


সপ্তাহ জুড়ে নাটকীয়তা কার পক্ষে গেলো
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-০৫-২০২৫
সপ্তাহ জুড়ে নাটকীয়তা কার পক্ষে গেলো ড. মূহাম্মদ ইউনূস


অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে তোপের মুখে ফেলে ক্ষমতা থেকে তার সরে যাওয়ার পরিস্থিতি ঠেকিয়ে দিয়েছে বিএনপি। বিএনপি’র ঘাড়ে বন্দুক রেখে একটি শক্তিশালী মহল এ কাজটি সেরে ফেলতে বিরাট ষড়যন্ত্রের ফাঁদ পেতেছিল বলে শোনা যায়। আবার ওই মহলটি ত্রাণকর্তা সেজে আগেভাগেই অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস’কে পূর্ণ সমর্থন দেয়ার নাটক মঞ্চস্থ করেছে। কারো কারো ধারণা, সরকারের অনেক স্পর্শকাতর সংস্থায় কিছু অপ্রীতিকর ‘পরিস্থিতিকে’ ধামাচাপা দিতে সপ্তাহজুড়ে নানান ধরনের নাটক মঞ্চস্থ করা হয়। রাজনীতির মাঠ ঘুরে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে। তবে এত্তোসব ঘটনা, নাটকীয়তার পর প্রশ্ন উঠেছে এমন পরিস্থিতিতে আসলে লাভবান কে হলো?

বাংলাদেশের রাজনীতিতে গত সপ্তাহ জুড়ে দেশে ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল তার নেপথ্যে ছিল ভয়ঙ্কর খেলা। আর এমন খেলার টার্গেট কেবল অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস নয়। এমন খেলার টার্গেট ছিল বিএনপি’কে দিয়ে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালি বিরোধী শক্তি তৈরি করা। যারা বিএনপি’কে দিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলে বিভিন্ন ইস্যুতে মাঠ গরম করিয়ে ফায়দা লুটে নেবে। অন্যদিকে ওই মহলটি ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বোঝাতে চেষ্টা করে যে মাঠে প্রধান রাজনৈতিক শক্তি বিএনপি তা-র ঘোরতর শত্রু, তাকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না।

বলা হয় যে, বিএনপি চায় অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস’কে অপমান করে দেশ থেকে বিতাড়িত করতে। খোঁজ নিয়ে জানা যায় যে, গত কয়েক সপ্তাহ মাঠে ময়দানে বিভিন্ন ধরনের সভা সমাবেশের ঢল নামিয়ে, নানান ধরনের দাবি-দাওয়া নিয়ে মাঠ গরম করে ওই ধরনের একটি পরিস্থিতি প্রায় তৈরি করে ফেলা। এতে চক্রটির দ্বারা বোঝানো হয় বিএনপি আসলে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস’কেই আর সহ্য করতে পারছে না, ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তারা আসলে নির্বাচন নয় অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস’কে আরেকটি ফ্যাসিবাদের দোসর প্রমাণ করতে মাঠে নেমেছে।

ইশরাক-ছাত্রদল নিয়ে খেললো কারা? 

ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে বসানোর দাবিতে গত সপ্তাহ ছিল রাজধানী উত্তাল। এখনো তার ধারাবাহিকতা চলছে। একবার সচিবালয় অভিমুখে মিছিল নিয়ে যান তার কয়েক হাজার সমর্থক। তারা গুলিস্তান, জিরো পয়েন্ট, পল্টন মোড়, প্রেসক্লাব, হাইকোর্ট, শিক্ষা ভবন ও বঙ্গবাজার হয়ে নগর ভবনের সামনে গিয়ে অবস্থান নেন। কিছুক্ষণ সেখানে থেকে আবার চলে যান নগর ভবনের সামনে। সেখানেই চলে লাগাতার বিক্ষোভ করেন সমর্থকেরা। এমন পরিস্থিতিতে ঢাকা প্রায় বেশ কয়েকদিন অচল হয়ে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে ইশরাককে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া গেজেটের কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে করা রিট গত সপ্তাহের ২২ মে বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে হাইকোর্ট সরাসরি খারিজ করে দিলে তার সমর্থকরা অন্যদাবি নিয়ে হাজির হয়। তারা অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও মাহফুজ আলমের পদত্যাগের দাবি করতে থাকে। সেখানে বেলা দেড়টার দিকে কাকরাইল মোড়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ভিড় বাড়তে দেখা যায়। অনেকে দলে দলে মিছিল নিয়ে এই মোড়ে আসছিলেন। মোড়ে এসে তাঁরা শ্লোাগান দিচ্ছিলেন। এসব শ্লোগানের মধ্যে ছিলো- ‘দফা এক, দাবি এক, আসিফের পদত্যাগ, দফা এক, দাবি এক, মাহফুজের পদত্যাগ’; ‘এই মুহূর্তে দরকার নির্বাচিত সরকার’; ‘ঢাকাবাসীর দাবি এক, আসিফের পদত্যাগ।’ এমন পরিস্থিতিতে জনমনে নানান শঙ্কা দেখা দেখা দেয়। কারো কাছে পুরো পরিস্থিতি ২০২৪ সালের আগস্টের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনকালীন সময়ের কথা স্বরণ করিয়ে দিচ্ছিল। 

আর ইশরাক হোসেন নিয়ে এভাবে পুরো ঢাকা অচল করে দুর্ভোগের তৈরির করার বিষয়টিকে সাধারণ জনগণ এমনকি বিএনপি’র অনেক সমর্থকদেরও ব্যথিত করে। এসময়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া’র একটি মন্তব্য বিএনপি’র বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে কাজ করে। তিনি বলেন, গায়ের জোরে নগর ভবন বন্ধ করে বিএনপি আন্দোলন করছে। কারো কারো মতে, ইশরাক হোসেনের তার মেয়র পদ ফিরে পেতে নানান ধরনের প্রতিকুলতার ক্ষেত্র তৈরি করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইমেজকে ধারণ করে গড়ে উঠা দলটিকে দিয়ে। অথচ এই দল নেপথ্যে বাধাগ্রস্ত করছে তাদের সাথেই তো একসময়ে বিএনপি’র বেশ দহরম-মহরম ছিল। 

আবার ছাত্রদলের শাহবাগ অচলের কর্মসূচি

এদিকে ২২ মে’তে ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে বসানোর দাবিতে রাজধানী যখন বলা চলে পুরো স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছিল তখন আরেক পাশ অর্থ্যাৎ শাহবাগে এলাকাও অচল হয়ে পড়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার বিচার দাবিতে ২২ মে’তে ওইদিন সকাল ১০টায় শাহবাগে অবস্থান নেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। 

বিশ্লেষকদের আশঙ্কা বাড়তে থাকে

এভাবে একের জনের ইস্যুতে খোদ রাজধানী যখন অচল হয়ে যাচ্ছিল তখন একজন তরুণ রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান কলম ধরেন। তিনি লেখেন রাস্তা আটকে কেউ যদি আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে, তাহলে নাগরিকদের একধরনের ভোগান্তি হয়। তবে এর সঙ্গে গণতন্ত্রের উত্তরণ যুক্ত। গণতন্ত্রে উত্তরণ ঠিকমতো না হলে সেটিকে কেন্দ্র করে বাজে ধরনের বিশৃঙ্খলার মধ্যে আমরা যদি পড়ে যাই, তাহলে সেটি দেশকে বিপদে ফেলবে। একের পর এক প্রায় প্রতিদিন রাজধানী অচল হয়ে উঠা আসলে কেউ মানছিল না। এমন পরিস্থিতি অনেকের মধ্যে লক্ষ্য করা যায় কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে। 

ঠিকই বিপদ টের পেয়ে থামিয়ে দেয়া হলো কর্মসূচি

এমন পরিস্থিতি কেউ যখন কোনো সুরাহা পাচ্ছিল না তখন ঠিক ওই ২২ মে আকাশে বাতাসে হঠ্যাৎ করে শোনা যাচ্ছিল যে ড. ইউনূস ক্ষমতায় থাকছেন না। প্রায়ই প্রতিদিন সড়ক আটকে আন্দোলন, সংস্কারসহ বিভিন্ন বিষয়ে দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য না হওয়া, রাষ্ট্রীয় কাজে নানা পক্ষের অসহযোগিতাসহ দেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে ক্ষোভ ও হতাশা ব্যক্ত করেছেন অধ্যাপক ইউনূস। এবং তিনি পদত্যাগের কথা চিন্তা করছেন। তার পদত্যাগের ভাবনার কথা জানাজানি হওয়ার পর ২২ মে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই বিভিন্ন মহলে নানা আলোচনা ও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়।

হুট করে ইশরাকের ও ছাত্রদলের অবস্থান পরিবর্তন

এদিকে অধ্যাপক ইউনূসের পদত্যাগ করতে পারেন এমন কথা জানাজানি হওয়ার পর ২২ মে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই বিভিন্ন মহলে নানা আলোচনা ও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনাসংলগ্ন কাকরাইল মসজিদ মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করার ঘোষণা দিয়ে দেন ইশরাক হোসেন। ওইদিন বিকেল সাড়ে চারটার দিকে সেখানে ট্রাকের ওপর স্থাপিত অস্থায়ী মঞ্চে উপস্থিত হয়ে তিনি এ ঘোষণা দেন। আদালতের রায় দ্রুত বাস্তবায়নের বিষয়ে সরকারকে পর্যবেক্ষণে রাখার কথা জানিয়ে তিনি ওই কর্মসূচি দিয়ে সরে পড়েন। এদিকে সাত ঘণ্টা পর রাজধানীর শাহবাগ মোড় ছাড়েন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। বৃহস্পতিবার (২২ মে) বিকেল ৫টার দিকে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম অবস্থান কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করেন। আথচ এর আগে সকাল ১০টা থেকে রাজধানীর শাহবাগ মোড় ও হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। যদিও এমন কর্মসূচি পালন আবার শুরু করেছে।

প্রশ্ন হচ্ছে এমন পরিস্থিতি নেপথ্যে কে

এদিকে এমন পরিস্থিতির পর যখন খবর আসে যে ড. ইউনুস আর ক্ষমতা থাকতে চান না। তিনি পদত্যাগে আগ্রহী। এসময়ে লক্ষ্য করা গেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইমেজকে ধারণ করে গড়ে উঠা দল এনসিপি’র নেতাদের সাক্ষাৎ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। শোনা যায় ওই পরিস্থিতি জামায়াতের আমির মাওলানা শফিকুর রহমান-ও একেবারে প্রধান উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাৎকারের জন্য উদগ্রিব হয়ে উঠেন, যা অনেকের কাছে রহস্যজনকও লেগেছে, যদিও তিনি সফল হননি। কারো কারো মতে, প্রধান উপদেষ্টা ওই সময়ে জামায়াতকে সাক্ষাৎ দেননি পাছে অন্য বিতর্কের জন্ম দেয়। কারণ একিই সময়ে বিএনপি’র কাউকেই উপদেষ্টা সাক্ষাৎ দিতেই চাচ্ছিলেন না। তাই এমন পরিস্থিতিতে জামায়াতের আমিরের সাথে সাক্ষাৎ রাজনীতিতে অন্য বার্তা দিতে পারে ভেবেই তা এড়িয়ে চলা হয়। 

কেননা বলা হয় বিএনপি’র পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাৎ চেয়ে পাননি বা পাচ্ছেনই না বলে বাজারে রটে যায়। যা সবার কাছে রহস্যজনক ঠেকেছে। বলা হচ্ছে ওই সময়ের রাজনৈতিক জটিলতা নিয়ন্ত্রণ করতে মাঠের প্রধান রাজনৈতিক দল ছাড়া প্রধান উপদেষ্টা কার ওপর ভরসা করে সমধানের চেষ্টা করেন? প্রশ্ন হচ্ছে ওই সপ্তাহ জুড়ে বিএনপি কি করে এত্তো জনদুর্ভোগ সৃষ্টির কর্মসূচি দিয়ে ঢাকার মেয়রকে ইশরাককে বসাতে আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন। কেনো একটি সামান্য ইস্যুতে এত্তো শক্ত কর্মসূচি করে কি নিতে পারলো? প্রশ্ন হচ্ছে এত করে কি বিএনপি জনগণের কাছে একটি জনদুর্ভোককারীরা দল হিসাবে পরিচিতি পায়নি? আবার কেনইবা এখন পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার কূলকিনারা পায়নি বলেই শোনা যায়। আর যা নিয়ে এত্তো তোলপাড়ের পর সেটি নিয়ে ক্যাম্পাসে এখন তোড়জোড় নেই? বিএনপি ও ছাত্রদল কি কারো ফাঁদে পা দিয়ে এমন কর্মসূচি দিয়েছে? প্রশ্ন চারিদিকে..। আর এমন জনভোগান্তির কর্মসূচির কারণে প্রধান উপদেষ্টার সাথে এখন একটি বড়ো ধরনের দূরত্ব তৈরি করার ক্ষেত্র তৈরি করে দিলো না? কথায় কথায় বিএনপি বলেছিল যে তারা প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুসকে ক্ষমতায় বসিয়েছে। তাহলে সেই প্রধান উপদেষ্টার আমলে বিশেষ করে গত সপ্তাহ জুড়ে পুরো রাজধানীতে প্রায় ২০২৪ সালের জুলাই আগস্টের মতো একটি পরিস্থিতি তৈরি করতে দেখা গেলো কেনো? 

এখন কি হবে?

রাজনৈতিক পরিস্থিতির দিকে তাকালে দেখা যায় পুরো পরিস্থিতিতে বিএনপি’র প্রতি একধরনের নেতিবাচক ধারণা দেশে- বিদেশে তৈরি হয়েছে। কারো কারো মতে, যে বিএনপি আগামীতে পুরো দেশের ক্ষমতায় বসতে যাচ্ছে সেই দলটি ঢাকার একটি মেয়র পদের জন্য পুরো রাজধানী দিনের পর দিন কেন স্থবির করে দেওয়ার কর্মসূচিতে মাঠে নামলো? বলা হচ্ছে বিএনপি কি তাহলে পতিত শেখ হাসিনার আমলে হওয়া সব নির্বাচন (জাতীয় ও স্থানীয়) আনুষ্ঠিকভাবে বৈধতা দিতে চায়? অন্যদিকে ইতোমধ্যে দেশে বিদেশে প্রচার পাচ্ছে যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা সংস্কারের প্রধান বাধা বিএনপি। অন্যদিকে বিএনপি’র বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে একটি প্রতিবেশী দেশের এজেন্ডা অনুযায়ী মাঠে ড. ইউনুস বিরোধী ভয়াবহ পরিস্থিতি তেরির? পুরো রাজনীতির মাঠে খবর রটে গেছে যে, একটি প্রতিবেশী দেশের এজেন্ডা বাস্তবায়নে বিএনপি বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা জড়িত। ওইসব নেতাদের বিরুদ্ধে প্রতিবেশী দেশের দালাল তাবেদার উপাধি দেয়া হচ্ছে। এসব প্রচার করে তাদের পুরো রাজনৈতিক ইমেজতে ধবস নামিয়ে দিচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে এমন সব পরিস্থিতির পেছনে কার পাতা ফাঁদে বিএনপি পা দিলো? এতদিন একটি ইসলামী দলের বিরুদ্ধে ছিল প্রতিবেশী দেশের এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা অভিযোগ ছিল রাজনীতির মাঠ জুড়ে। শোনা গিয়েছিল পতিত আওয়ামী লীগকে মাঠে নিয়ে আসার ব্যাপারে ওই দলটির গোপন তৎপরতার কথা। কিন্তু গত কয়েকদিনের ঘটনায় এখন সে দায়ভার দুর্নাম গিয়ে পড়েছে খোদ বিএনপি’র ওপর। 

অনেক পরে বিএনপির বোধোদয়

একটি সূত্র জানায় ইশরাক ইস্যুতে বিএনপি’কে একটি মহল রাজপথে ব্যস্ত রেখে দলটির ইমেজে কালিমা লেপনে করে সরকারে কেউ কেউ তাদের শক্ত অবস্থান তৈরি করতে সচেষ্ট ছিল। তারা ড. ইউনুসকে বোঝাতে চেষ্টা করে তাদের সমর্থন ছাড়া এখন ড.ইউনুস আর ক্ষমতায় থাকতে পারবে না, অপমানিত হয়ে দেশ ছাড়তে হতে পারে। এমন কি ওই মহলটি বিএনপি’র সাথে ড. ইউনুসের সাথে দূরত্ব তৈরির পাশাপাশি সরকারের সঙ্গে বিরোধ বা মুখোমুখি অবস্থানের কথা প্রচার করে এক ভয়াবহ অবস্থার তৈরি করে। যা পরে এক সংবাদ সম্মেলন করে সেনাবহিনীর অবস্থান পরিস্কার করা হয়। গণমাধ্যমে সংবাদ সম্মেলন করে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উদ-দৌলা বলেন, দেশের স্বার্থ ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সরকারের নির্দেশ মেনেই কাজ করছে সেনাবাহিনী। আগামীদিনে বিন্দু পরিমাণ শক্তি থাকা পর্যন্ত দেশকে রক্ষা করা হবে। এর পাশাপাশি জানানো হয় যে, সরকারের সঙ্গে সেনাবাহিনীর কোনো ধরনের বিরোধ বা মুখোমুখি অবস্থান নেই। বিভেদ কিংবা দ্বন্দ্ব কিছুই সৃষ্টি হয়নি। একে অপরের সঙ্গে সুন্দরভাবে কাজ করছে। যেভাবে বাইরে বলা হচ্ছে, সেটি অপব্যাখ্যা ছাড়া আর কিছু নয়। শনিবার রাজধানীর ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেসে সেনা সদর দপ্তর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়। সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশনসের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উদ-দৌলা এবং মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম। 

এদিকে জানা গেছে, বিএনপির সাথে ড. ইউনুসের বড়ো ধরনের একটা গ্যাপ এবং এর পাশাপাশি দলটি সম্পর্কে আন্তর্জাতিক মহল বিশেষ করে পশ্চিমাদের কাছে খারাপ ইমেজ তৈরি করতে সুকৌশলে কাজ করেছে। তবে ঘটনার একেবারে শেষে বিএনপি’র শীর্ষপর্যায় থেকে বিষয়টি আঁচ করা গেলেও কারো কারো মতে অনেক দেরি হয়ে গেছে। গত শনিবার দুপুরে উপদেষ্টা পরিষদের অনির্ধারিত বৈঠকে শেষে এক বিবৃতিতে এমনটাই বোঝা গেছে। উপদেষ্টা পরিষদের দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে‘ যদি পরাজিত শক্তির ইন্ধনে এবং বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সরকারের ওপর আরোপিত দায়িত্ব পালনকে অসম্ভব করে তোলা হয়, তবে সরকার সব কারণ জনসমক্ষে উত্থাপন করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। বিবৃতিতে বলা হয় সরকারের স্বকীয়তা, সংস্কার উদ্যোগ, বিচারপ্রক্রিয়া, সুষ্ঠু নির্বাচন ও স্বাভাবিক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কর্মকাণ্ড অর্পিত দায়িত্ব পালন করাকে অসম্ভব করে তুললে সরকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।’ কারো কারো মতে, উপদেষ্টা পরিষদের এমন বিবৃতি অনেক কিছুরই ইঙ্গিত করে।

শেয়ার করুন