৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০২:৫১:২৩ অপরাহ্ন


শহরের জনস্বার্থ রক্ষায় বিধিমালা বাস্তবায়ন জরুরি : বিআইপি
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৬-০৪-২০২৫
শহরের জনস্বার্থ রক্ষায় বিধিমালা বাস্তবায়ন জরুরি : বিআইপি আলোচনা সভায় অতিথিবৃন্দ


রাজধানীর বাংলামোটরে অবস্থিত প্ল্যানার্স টাওয়ারের বিআইপি কনফারেন্স হলরুমে অনুষ্ঠিত সেমিনারের আলোচকরা এসব কথা বলেন। গত ১২ এপ্রিল শনিবার ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) এর উদ্যোগে “বাংলাদেশে স্থানিক পরিকল্পনার চর্চা এবং করণীয়” বিষয়ক একটি সেমিনার এবং পরিকল্পনা পেশায় অর্জনের স্বীকৃতিস্বরূপ নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের পরিচালককে বিআইপির পক্ষ থেকে ‘বিশেষ সম্মাননা’ প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। 

বিআইপির সভাপতি পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খানের সভাপতিত্বে সেমিনারে ‘সম্মানিত অতিথি’ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) পরিকল্পনাবিদ এম. মাহমুদ আলী। পরিকল্পনা পেশায় অর্জনের স্বীকৃতিস্বরূপ পরিকল্পনাবিদ এম. মাহমুদ আলী কে বিআইপির পক্ষ থেকে ‘বিশেষ সম্মাননা’ প্রদান করা হয়। বিআইপির যুগ্ম সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ তামজিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন ইনস্টিটিউটের সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান।

স্বাগত বক্তব্যে বিআইপির সাধারণ সম্পাদক বলেন, বাংলাদেশ সৃষ্টির আগেই নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের জন্ম হয়েছে এবং এই অধিদপ্তরটি পরিকল্পনাবিদদের জন্য সব থেকে বড় সরকারি প্রতিষ্ঠান। তিনি আশাব্যক্ত করেন ভবিষ্যতে নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর ও বিআইপি দেশের টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে একসাথে কাজ করবে। পরবর্তীতে, নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর কর্তৃক আগামী ১০ বছর মেয়াদে প্রণীত কৌশলপত্রসহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণকে সাধুবাদ জানান তিনি। 

এর পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তীতে ‘নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর এর সার্বিক কার্যক্রম বিষয়ে অবহিতকরণ’ সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন, নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের পরিকল্পনাবিদ ফৌজিয়া শারমিন তিথি। তিনি উপস্থাপিত প্রতিবেদনে বলেন, নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের ভিশন পরিকল্পিত বাংলাদেশ এবং অভিলক্ষ্য দুর্যোগ ঝুঁকি বিবেচনায়সমন্বিত নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা প্রণয়ন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন মেয়াদে তারা শহর ও অঞ্চলের পরিকল্পনা করেছে এবং বর্তমানে টেকসই নগরায়ন ও ভূমি ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে ৮টি প্রকল্প পরিচালনা করছেন। তিনি আরোও উল্লেখ করেন যে, ২০২৫ সাল থেকে নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর গবেষণা ও পরিকল্পনা খাতে সহায়তার জন্য দুটি ক্যাটাগরিতে রিসার্চ ফেলোশিপ প্রদান করবে। 

অতঃপর বিআইপির পক্ষ থেকে ‘From Spatial Planning Framework to National Spatial Plan’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ইনস্টিটিউটের স্থানিক পরিকল্পনা কাঠামো টাস্কফোর্সের পরিকল্পনা বিশেষজ্ঞ এবং বিআইপির সদস্য পরিকল্পনাবিদ একেএম রিয়াজ উদ্দীন। তিনি জাতীয় স্থানিক পরিকল্পনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন এবং বলেন যে, এই পরিকল্পনা ব্যবহারের মাধ্যমে দেশ ও মানুষের টেকসই উন্নয়ন অর্জন হবে। যার পরিপ্রেক্ষিতে পরিকল্পনাবিদদের সক্ষমতাও বাড়াতে হবে। অর্থনৈতিক রূপান্তরের এই সময়ে পরিকল্পনাবিহীন অগ্রযাত্রা এড়িয়ে সমন্বিত উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন ধরনের সমন্বয় যেমন: খাতভিত্তিক সমন্বয়, স্থানিক সমন্বয়, স্তরক্রমিক সমন্বয় এবং সময়ভিত্তিক সমন্বয়ন প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন।

অনুষ্ঠানের এ পর্যায়ে নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) পরিকল্পনাবিদ এম. মাহমুদ আলীর পরিচিতি এবং জীবনী সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইপির বোর্ড সদস্য (একাডেমিক এফেয়ার্স) পরিকল্পনাবিদ উসওয়াতুন মাহেরা খুশি। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) পরিকল্পনাবিদ এম. মাহমুদ আলী ‘বিশেষ সম্মাননা’ অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য বিআইপি কে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের বিভিন্ন কার্যক্রম, অর্জন ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন। ভবিষ্যতে নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর ও বিআইপি দেশের টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে একসাথে কাজ করবে বলে তিনি আশাব্যক্ত করেন। সবশেষে পরিকল্পনাবিদদের জন্য বিসিএস এ আলাদা প্ল্যানিং ক্যাডার সংযুক্ত করার ব্যাপারে বিআইপি সহ সকলের সমন্বিত উদ্যোগের আহ্বান জানান তিনি।

সেমিনার এবং ‘বিশেষ সম্মাননা’ প্রদান অনুষ্ঠানের সমাপনী বক্তব্যে বিআইপির সভাপতি পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, যে কোন শহরের টেকসই পরিকল্পনা এবং সামগ্রিক জনস্বার্থ ও জনস্বাস্থ্য রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা ও বিধিমালা প্রণয়ন এবং সেটির কার্যকর বাস্তবায়ন অত্যন্ত প্রয়োজন। বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সঠিক পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের অভাব, যার ফলে বাংলাদেশে টেকসই উন্নয়ন ব্যহত হচ্ছে। তিনি পরিকল্পনাবিদ, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য পেশাজীবিদের সমন্বয়ের মাধ্যমে সঠিক পরিকল্পনার এবং বাস্তবায়নের নিশ্চিতকরনের লক্ষ্যে বিআইপির বিভিন্ন কার্যক্রম ও উদ্যোগ তুলে ধরেন। পাশাপাশি পরিকল্পনাবিদদের দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনায় অন্তর্ভূক্ত করে সকলের মৌলিক অধিকার ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতকরণের আহবান জানান তিনি।

এছাড়াও অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বিআইপির সহ-সভাপতি পরিকল্পনাবিদ সৈয়দ শাহরিয়ার আমিন ও পরিকল্পনাবিদ ড. মো. শফিক-উর রহমান, বোর্ড সদস্য পরিকল্পনাবিদ মোঃ আবু নাইম সোহাগ, পরিকল্পনাবিদ হোসনে আরা, পরিকল্পনাবিদ মো: ফাহিম আবেদীন এবং পরিকল্পনাবিদ নাহিদ আরিফীন সহ নাগরিক ও পেশাজীবীগগণ।

শেয়ার করুন