মার্কিন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএইড) গত ২৮ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এদিন অবশিষ্ট প্রায় ৯০০ কর্মচারীকে ছাঁটাই করে কর্মীদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, তাদের পদগুলো বিলুপ্ত করা হলো এবং সংস্থার বাকি কার্যক্রম পররাষ্ট্র দফতরের অধীনে নিয়ে আসা হবে। এর আগে গত মাসে সংস্থাটির প্রায় ৬ হাজারের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বেতনসহ বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়।
ইউএসএইড কর্মীদের কাছে পাঠানো এক ইমেইলে, সরকারি দক্ষতা বিভাগের কর্মকর্তা জেরেমি লুইন, যিনি ২০ মার্চ থেকে সংস্থার দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন- জানান যে এই ছাঁটাই কার্যকর হবে ১ জুলাই বা ২ সেপ্টেম্বর থেকে।
কংগ্রেস কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত একটি সংস্থাকে একতরফাভাবে বন্ধ করার এই সিদ্ধান্তের ফলে তাৎক্ষণিক আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে ট্রাম্প প্রশাসন। হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা, যিনি গোপনীয়তা রক্ষার শর্তে অভ্যন্তরীণ সরকারি যোগাযোগ সম্পর্কে কথা বলেছেন, সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন যে প্রশাসন দুপুর ১২টায় কংগ্রেসকে তাদের পরিকল্পনার কথা জানায়, যা কর্মীদের জানানো হয় এর মাত্র ১০ মিনিট পর।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী মার্কো রুবিও এক বিবৃতিতে বলেন, ‘দুঃখজনকভাবে, ইউএসএইড অনেক আগেই তাদের মূল লক্ষ্য থেকে সরে গেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কল্যাণে এই বিভ্রান্তিকর ও অর্থনৈতিকভাবে দায়িত্বজ্ঞানহীন যুগের অবসান ঘটলো।’
এই পদক্ষেপটি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশ্বব্যাপী বৈদেশিক সহায়তা ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সংস্থাটির বিরুদ্ধে অভিযানের অংশ, যা অনেকের কাছে আমেরিকার মূল মূল্যবোধের অংশ হিসেবে বিবেচিত হলেও ট্রাম্প এটিকে ‘বিশাল প্রতারণা’ ও করদাতাদের অর্থের অপচয় বলে অভিহিত করেছেন। ২৮ মার্চ মধ্যাহ্নে কর্মীদের কাছে পাঠানো এক ইমেইলে এই পরিবর্তনের কথা জানানো হয়, যা দ্রুত পরিবর্তন আনতে চাওয়ার কৌশলের অংশ বলে মনে করা হচ্ছে।
পররাষ্ট্র দফতর ইউএসএইডের ‘অবশিষ্ট জরুরি ও কৌশলগত সহায়তা কর্মসূচিগুলো’ পরিচালনা করবে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির নতুন প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা জেরেমি লুইন। তবে ঠিক কোন কোন কর্মসূচি টিকে থাকবে, তা তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট হয়নি।
ইউএসএইডের একজন সাবেক কর্মকর্তা প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেন যে, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে অন্তত ১৪৪ জন নিহত হওয়ার দিনেই সংস্থাটিকে বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হলো। ‘আমরাই মূলত সেই বৈশ্বিক ব্যবস্থা তৈরি করেছি যা ভূমিকম্পের পর আন্তর্জাতিক অনুসন্ধান ও উদ্ধার কার্যক্রম সমন্বয় করে, বলেন ইউএসএইডের সাবেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এবং বর্তমানে শরণার্থী অধিকার বিষয়ক সংস্থা রিফিউজি ইন্টারন্যাশনালের প্রধান জেরেমি কোনিনডাইক। এখন গত দুই বছরের সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পের দিনে, যুক্তরাষ্ট্র তার দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া কর্মীদের বরখাস্ত করছে, পাঠাচ্ছে না।
কংগ্রেসনাল রিসার্চ সার্ভিসের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি মানবিক সহায়তা প্রদানকারী দেশ। ২০২৩ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র বিদেশি সহায়তায় আনুমানিক ৪০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। সামগ্রিকভাবে বিদেশি সহায়তা যুক্তরাষ্ট্রের মোট বাজেটের ১ শতাংশেরও কম। ইউএসএইড বন্ধের ফলে সাহারার দক্ষিণাঞ্চলীয় আফ্রিকা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। গত বছর যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলে ৬.৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি মানবিক সহায়তা প্রদান করেছিল। মার্কিন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএইড)-এর মাধ্যমে ২০২০ থেকে ২০২৪ অর্থবছরের মধ্যে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২.২৯ বিলিয়ন ডলারের বেশি সহায়তা পেয়েছে এবং সর্বশেষ অর্থবছরে বাংলাদেশের জন্য মার্কিন বিদেশি সহায়তার বরাদ্দ ছিল ২৩৫.৮ মিলিয়ন ডলার। তবে আন্তর্জাতিক এই সাহায্য সংস্থাটির বিলুপ্তির মধ্যেও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সাহায্যের জন্য বাংলাদেশকে নতুন করে ৭৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট জন এফ. কেনেডি শীতল যুদ্ধ চলাকালে ১৯৬১ সালে ইউএসএইড প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি চেয়েছিলেন যে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাব মোকাবিলায় একটি দক্ষ বৈদেশিক সহায়তা কাঠামো গড়ে তোলা হোক, কারণ তিনি মনে করতেন পররাষ্ট্র দফতর এই কাজে অত্যন্ত আমলাতান্ত্রিক প্রতিবন্ধকতার শিকার। ইউএসএইড প্রতিষ্ঠার পর থেকে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটরা সংস্থাটির কার্যক্রম ও অর্থায়ন নিয়ে বহুবার বিতর্ক করেছে। তবে ট্রাম্প প্রশাসনই প্রথম ইউএসএইডের কার্যক্রম পুরোপুরি বিলুপ্ত করলো।