৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ১১:৫০:৩৫ পূর্বাহ্ন


মার্কিন বন্দিদের এল সালভাদরের কুখ্যাত কারাগারে প্রেরণের প্রস্তাব
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-০৪-২০২৫
মার্কিন বন্দিদের এল সালভাদরের কুখ্যাত কারাগারে প্রেরণের প্রস্তাব এল সালভাদরের কুখ্যাত ‘সিকট’ কারাগার


সন্ত্রাস দমনের অজুহাতে মার্কিন নাগরিকদের ভিন্নমত দমনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি বিতর্কিত পরিকল্পনা প্রস্তাব করেছেন। পরিকল্পনার আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের আইনি যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়াই এল সালভাদরের কুখ্যাত ‘সিকট’ জেলে বন্দি করে রাখা হতে পারে। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী, মার্কিন সরকার ভিন্নমত পোষণকারী এবং অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত নাগরিকদের তাদের নিজ দেশের বিচার ব্যবস্থার অধীনে না এনে, সরাসরি এল সালভাদরে পাঠানোর কথা ভাবছে। সিকট জেলটি তার মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং নির্যাতনের জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত, যেখানে বন্দিরা তাদের মৌলিক মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে অত্যন্ত কঠোর শাস্তি ভোগ করে। এমন একটি ব্যবস্থা শুধু সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আওতায় না থেকে, বরং রাষ্ট্রের রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন করার একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে, যা যুক্তরাষ্ট্রের বিচারব্যবস্থা, আইন এবং মানবাধিকার কনভেনশনের প্রতি একটি গুরুতর আক্রমণ হতে পারে।

হোয়াইট হাউস নিশ্চিত করেছে যে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন নাগরিকদের এল সালভাদরে ‘ডিপোর্ট’ করার আইনি পথ খুঁজে দেখছেন। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট ৮ এপ্রিল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন যে, এই ধারণাটি এখনো পরিকল্পনার পর্যায়ে রয়েছে এবং প্রেসিডেন্ট কেবল এটি ‘ফ্লোট’ করেছেন। তিনি বলেন, ট্রাম্প মূলত ভয়ংকর অপরাধে দোষীসাব্যস্ত নাগরিকদের এল সালভাদরের একটি কুখ্যাত কারাগারে পাঠানোর বিষয়ে আলোচনা করছেন। যদিও এটি এখনো প্রস্তাবের স্তরে রয়েছে, এই উদ্যোগের আইনি ও রাজনৈতিক প্রভাব ইতিমধ্যেই দেশের অভ্যন্তরে এবং আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনা সৃষ্টি করেছে। আইনবিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এমন উদ্যোগ যুক্তরাষ্ট্রের সাংবিধানিক কাঠামো এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেও ৬ এপ্রিল এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের বলেন, তিনি এই আইডিয়াটিকে ‘ভালোবাসেন’ এবং যদি এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট নাইব বুকেলে রাজি থাকেন, তাহলে তিনি ‘সম্মানের সঙ্গে’ ওইসব অপরাধীকে সেখানে পাঠাতে চান। তবে তিনি স্বীকার করেন, তিনি নিশ্চিত নন যে মার্কিন আইন এ বিষয়ে কী বলে। তিনি আরো বলেন, যদি এল সালভাদর তুলনামূলকভাবে কম খরচে এসব ‘ভয়ংকর অপরাধীকে’ রাখতে পারে, তাহলে তিনি তাতে পূর্ণ সমর্থন দেবেন।

গত মার্চ মাসে টেসলা কারখানায় প্রতিবাদে গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার পরও ট্রাম্প একই প্রস্তাব তুলেছিলেন। সে সময় তিনি সামাজিক মাধ্যমে লিখেন- “এ সন্ত্রাসী দুষ্কৃতকারীরা ২০ বছরের জেলের উপযুক্ত। সম্ভবত তারা সেটা এল সালভাদরের কারাগারে ভোগ করতে পারে, যেটা এখন তাদের ‘চমৎকার’ অবস্থার জন্য বিখ্যাত হয়েছে।” তিনি আরো যুক্তি দেন, এল সালভাদরে বন্দিদের রাখা যুক্তরাষ্ট্রের ট্যাক্সদাতাদের অর্থ সাশ্রয় করে।

হোয়াইট হাউসের বক্তব্য অনুযায়ী, এই পরিকল্পনার আওতায় প্রথমে কেবল গুরুতর অপরাধীদেরই বিবেচনা করা হবে। তবে ট্রাম্প বিভিন্ন সময়ে ছোটখাটো অপরাধের ক্ষেত্রেও একই ব্যবস্থার সম্ভাবনার কথা বলেছেন। এ নিয়ে আইনবিশেষজ্ঞরা বলছেন, মার্কিন নাগরিকদের তাদের নিজ দেশের বাইরে জোর করে পাঠানো সাংবিধানিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ এবং এ ধরনের উদ্যোগ আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।

ট্রাম্প প্রশাসন গত মার্চে ১৭৯৮ সালের ‘এলিয়েন এনিমি অ্যাক্ট’ ব্যবহার করে ভেনেজুয়েলার ট্রেন দে আরাগুয়া গ্যাংয়ের সন্দেহভাজন সদস্যদের এল সালভাদরের ‘সিকট’ নামক কুখ্যাত জেলে পাঠিয়েছে। এসব অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ থাকলেও আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ ছাড়াই তাদের বিমানে করে পাঠানো হয়। সেখানে তারা এখনো আটক অবস্থায় রয়েছেন এবং আদালতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা চলমান। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মানবাধিকার সংগঠনগুলো তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। ডিটেনশন ওয়াচ নেটওয়ার্ক এক বিবৃতিতে ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে স্বৈরাচারী ধাঁচের এবং মানবাধিকার পরিপন্থী বলে উল্লেখ করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এমন উদ্যোগ যুক্তরাষ্ট্রের সাংবিধানিক কাঠামো, মানবাধিকার এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে। যদিও এটি এখনো একটি প্রস্তাব পর্যায়ে রয়েছে, তবে এর রাজনৈতিক ও আইনি প্রভাব ইতিমধ্যেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষ থেকে মার্কিন বন্দিদের এল সালভাদরের কুখ্যাত কারাগারে পাঠানোর বিষয়ে করা মন্তব্যের পর, মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কড়া প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। মানবাধিকার সংগঠন ডিটেনশন ওয়াচ নেটওয়ার্ক প্রেসিডেন্টের মন্তব্যকে স্বৈরাচারী বলে অভিহিত করেছে। সংস্থাটির অ্যাডভোকেসি ডিরেক্টর সেতারে ঘানদেহারি বলেন, হোমল্যান্ড সিকিউরিটির সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোম এবং ট্রাম্প প্রশাসনের অধীন দফতর এল সালভাদরের কারাগারকে একটি প্রোপাগান্ডার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে, যার মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষকে অমানবিক ও দানব হিসেবে উপস্থাপন করা এবং একটি নির্মম গণগ্রেফতার ও নির্বিচার বিতাড়নের এজেন্ডা চালিয়ে যাওয়া।

এই বিতর্কিত পরিকল্পনার পরিপ্রেক্ষিতে একদিকে যেমন মার্কিন নাগরিকদের মৌলিক অধিকার এবং আইনি সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হচ্ছে, তেমনি এটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নীতিমালা ও কূটনৈতিক সম্পর্কের ওপরও গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এমন পদক্ষেপের সম্ভাব্য আইনি, রাজনৈতিক এবং মানবাধিকারভিত্তিক প্রতিক্রিয়াগুলি একে বৃহত্তর আলোচনা ও বিশ্লেষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছে। আইনবিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মার্কিন নাগরিকদের বিদেশে পাঠানোর এই উদ্যোগের মাধ্যমে যদি রাষ্ট্রের রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন করার চেষ্টা করা হয়, তবে তা যুক্তরাষ্ট্রের বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা এবং সাংবিধানিক প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জ করবে। এ ধরনের পদক্ষেপ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে এবং আন্তর্জাতিক মহলে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন হতে পারে। সবশেষে এই প্রস্তাবটির বাস্তবায়ন নিয়ে ভবিষ্যতে আইনগত বাধা এবং রাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি হতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অবস্থানে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

শেয়ার করুন