৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৯:১৭:৪৭ অপরাহ্ন


নির্বাচনে তারিখ ঘোষণার দাবি বাম জোটের
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-০২-২০২৫
নির্বাচনে তারিখ ঘোষণার দাবি বাম জোটের বাম জোটের সভায় নেতৃবৃন্দ


প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ কমিশনের সঙ্গে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৩টায় বৈঠক করেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতৃবৃন্দ। সভা শেষে বাম গনতান্ত্রিক জোটের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, “আলোচনায় আমরা বুঝতে পেরেছি নির্বাচন কমিশন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। তাই সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান সর্বাগ্রে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করুন।”

বৈঠকে বাম গণতান্ত্রিক জোটের উপস্থিত ছিলেন- ১. বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ইকবাল কবির জাহিদ, ২. বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম, ৩. বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, ৪. বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)’র সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, ৫. গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, ৬. বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্ক্সবাদী)’র সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা ও ৭. বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আলী।

নির্বাচন কমিশনের সাথে বৈঠকে বাম জোটের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য উত্থাপন করা হয়। বাম জোটের লিখিত বক্তব্যে বলা হয় আপনারা দায়িত্ব গ্রহণের পর বর্তমান কমিশনের সাথে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচিত হতে এবং এই সুযোগে কিছু কথা বলার জন্য আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি।

নির্বাচন কমিশনের শ্রদ্ধেয় সদস্যবৃন্দ, আপনারা নিশ্চয় অবগত আছেন যে, বাম গণতান্ত্রিক জোট দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করে একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করে আসছে। নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনে বামজোটের প্রস্তাবসমূহ বিভিন্ন সময়ে নির্বাচন কমিশনে ও রাষ্ট্রপতিকে প্রদান করা হয়েছে। যা আপনাদের কমিশনের দপ্তরেও নিশ্চয় আছে। এবারও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের কাছে বাম গণতান্ত্রিক জোটভুক্ত বিভিন্ন দল তাদের প্রস্তাবসমূহ তুলে ধরেছেন। আমরা আশা করছি, এবিষয়ে সংলাপের মধ্যদিয়ে অবাধ, সুষ্ঠ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য যে সংস্কার করা প্রয়োজন, দ্রুততম সময়ে সেসব সংস্কার করেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করা হবে। কমিশন সেই উদ্যোগ নিবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি।

এতে আরও বলা হয়, সাধারণ মানুষ অনেক ক্ষেত্রে সংস্কারের বিষয়টি ভালোভাবে বুঝে উঠতে পারেন না। তাদের সাধারণ ধারণা নির্বাচন কমিশন দৃঢ়তার সাথে, মেরুদন্ড ঠিক রেখে নৈতিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করলে ভালো নির্বাচন করা সম্ভব। আমরা আশা করব গণঅভ্যুত্থানের বিজয়ের পর গঠিত বর্তমান নির্বাচন কমিশন সাধারণ জনগণের সেই আকাক্সক্ষা পূরণ করে দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী হয়ে থাকবেন। এবিষয়ে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করার জন্য প্রস্তুত আছি।

তাই বাম জোট মনে করে দেশের অধিকাংশ ক্রিয়াশীল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষের আকাঙ্খা অনুযায়ী দ্রুততম সময়ে অর্থাৎ এ বছর ২০২৫ সালের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা জরুরি কর্তব্য। আগে স্থানীয় নির্বাচনসহ যেসব নির্বাচনের আলোচনা হচ্ছে আমরা মনে করি এসব নির্বাচন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরেই সম্পন্ন করা বাঞ্ছনীয়। এসময় জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছাড়া অন্য কোন নির্বাচনের আলোচনা সামনে এনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়কে দীর্ঘায়িত করার কোন প্রয়োজন নেই। বরঞ্চ এই অবস্থা চলতে থাকলে বিগত দিনে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে জনগণ যে তাদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত সরকার গঠন করতে পারেনি, সেই সংকট দীর্ঘায়িত হবে এবং এই সুযোগে পরাজিত অপশক্তি নানা সংকট তৈরি করতে চাইবে।

আমরা আশা করব এবিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সর্বাগ্রে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আপনারা যথাযথভাবে আপনাদের দায়িত্ব পালনে উদ্যোগী হবেন। আজকের এই পরিসরে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের কোন পূর্ণাঙ্গ দাবি নতুন করে আমরা উত্থাপন করতে চাই না। তবে, প্রধান দু’একটি দাবি আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।

১. নির্বাচনে সবার সমান সুযোগের অধিকারের কথাটি সবাই বললেও নির্বাচনকে টাকার খেলা, পেশীশক্তি, ভয়-ভীতি, সাম্প্রদায়িক প্রচার-প্রচারণা, আঞ্চলিকতা ও প্রশাসনিক কারসাজি মুক্ত না করতে পারলে সমসুযোগ সৃষ্টি করা যাবে না। তাই, আমরা মনে করি নির্বাচনী জামানত ৫০০০ টাকা, প্রচার-প্রচারণাসহ সব দায়-দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনকে গ্রহণ, বিনামূল্যে ছাপানো ভোটার তালিকা প্রত্যেক প্রার্থীকে সরবরাহ করতে হবে। এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারলে যোগ্যতা সম্পন্ন মেহনতী ও দরিদ্র প্রার্থীরা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে উৎসাহিত হবে। যোগ্য প্রার্থী নির্বাচনে দাঁড়াতে উৎসাহিত হবে। নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার জন্য ১% ভোটারের স্বাক্ষরসহ কোন শর্ত আরোপ করা উচিত নয়। এটি জনগণের সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ন করে। ২. একইভাবে সংগঠন তৈরি করা সকল নাগরিকের একটি সাংবিধানিক অধিকার। নিবন্ধনের শর্ত এই অধিকার কেড়ে নেয়। এই নিবন্ধন প্রথা বাতিল করা উচিত। রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের ব্যবস্থা রাখলে তা সহজতর ও শর্তহীন করতে হবে। ৩. নিজের পছন্দমত প্রার্থীকে ভোট প্রদানে বাঁধা প্রদান আইন করে বন্ধ করতে হবে। না ভোট ও প্রার্থী প্রত্যাহারের বিধান করতে হবে। ৪. প্রার্থীদের সকল তথ্য যাচাই-বাছাই করে জনগণের কাছে উন্মুক্ত করতে হবে। যে দলের প্রার্থী সেই দলের লিখিত ইশতেহারও জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে। ৫. নির্বাচনী আচরণবিধি লংঘনকারীদের বিরুদ্ধে কারো অভিযোগ দায়েরের জন্য অপেক্ষা না করে কমিশন নিজেই সুয়োমোটর ভিত্তিতে আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর নির্বাচন কমিশনের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ৬. স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করা ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাানুপাতিক পদ্ধতি প্রবর্তনের দাবি আমাদের দীর্ঘদিনের। এবিষয়ে সবার সাথে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর কাজটি সরকার যেমন করবে, একইসাথে নির্বাচন কমিশনকেও এবিষয়ে উদ্যোগী ভূমিকা রাখা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। ৭. নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচনকালীন দল নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে। তাই, নির্বাচন ব্যবস্থায় সরকার যাতে কোন ধরনের হস্তক্ষেপ না করতে পারে সেজন্য নির্বাচন কমিশনকে স্বচ্ছতার সাথে প্রতিটি কর্মকান্ড পরিচালনা করতে হবে।

দেশের মানুষ অনেকদিন ধরে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে পছন্দ মতো প্রার্থী নির্বাচন করতে পারেনি। নিজেদের পছন্দের প্রার্থী নির্বাচন ও সরকার গঠন কবে করা যাবে এটি অনেকের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। বর্তমান সময়েও নানা আলাপ আলোচনা সামনে আশায় অনেকের মাঝে নির্বাচন নিয়ে সংশয় এবং কবে নির্বাচন হবে সেই প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে। আমরা আশা করব, দ্রুততম সময়ে আপনাদের পক্ষ থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখসহ নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করে জনগণের এই সংশয় কমিশন দূর করবে এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে আমাদের যাত্রা ইতিবাচক ধারায় অগ্রসর হতে থাকবে।

শেয়ার করুন