৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ১১:৪৮:৩৪ পূর্বাহ্ন


খালগুলো পুনরুদ্ধারের চমৎকার উদ্যোগ
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-০২-২০২৫
খালগুলো পুনরুদ্ধারের চমৎকার উদ্যোগ খাল পুনরুদ্ধারে পরিবেশ উপদেষ্টা


অনেক সংস্কার প্রতিশ্রুতি নিয়ে ক্ষমতায় আশা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের ৬ মাস কার্যকালীন সময়ে কোনো ক্ষেত্রেই দৃশ্যমান তেমন উন্নয়ন পরিলক্ষিত হয়নি। তবে চার মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে ঢাকার ৬টি খাল পুনরুদ্ধারের কাজ শুরু হয়েছে, এটা চমৎকার এক উদ্যোগ। এ সরকার ক্ষমতা হস্তান্তরের আগে আর কোনো ক্ষেত্রে কতটুকু সংস্কার করতে পারবে, নিশ্চিত করে বলা যাবে না। কিন্তু অন্তত ঢাকা চট্টগ্রাম মহানগরের খালগুলো এবং নদীগুলো যদি সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে উদ্ধার আর সংস্কার করতে পারে সেটি হবে বিশাল অর্জন। নগরের জলাবদ্ধতা দূর হবে, পরিবেশ উন্নত হবে, নগরীর যানজট দূর করার বিকল্প সৃষ্টি হবে। 

সরকার সব অংশীজনকে সম্পৃক্ত করে কাজটিকে আন্দোলনে পরিণত করতে পারবে। ছাত্রদের ছুটির দিনগুলোতে এ কাজে লাগাতে পারলে ভালো। নদী-খালগুলোর অবৈধ দখলদাররা ভূমিদস্যু, অনেক প্রভাবশালী। অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো রাজনৈতিক অভিলাষ নেই। তাই তাদের কার্যকালে জলাশয়গুলো দখলমুক্ত করে স্থায়ীভাবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা হলে বহুমুখী অর্জন হবে। একই সঙ্গে প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় নগরবাসীকে সম্পৃক্ত পলিথিনসহ কোনো ধরনের বর্জ যেন খালে বা জলাশয়ে ফেলা না হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। খালগুলোর পাড় বরাবর হাঁটার রাস্তা, সবুজ বৃক্ষ রোপণ করে রক্ষা করতে হবে। বন পরিবেশ মন্ত্রণালয় এ কাজের সঙ্গে দেশব্যাপী পাহাড় কাটা বন্ধ, ঢাকার চারপাশের চারটি নদী-বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু ও তুরাগ নদী দখলমুক্ত করাকে জাতীয় আন্দোলনে পরিণত করতে পারবে কি না? ছাত্র-যুবকদের সম্পৃক্ত করে এ কাজগুলো করতে পারলেও দিনশেষে সবাই বর্তমান সরকারকে অনেক দিন মনে রাখবে। 

অস্ট্রেলিযার নগরগুলো সিডনি, মেলবোর্ন, ব্রিসবেন, এডিলেড, পার্থ এক একটি নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। একই কথা বলা যায় লন্ডন, প্যারিস, রোম, ভেনিস নগরীর বিষয়ে। আমস্টারডাম নগরীজুড়ে খাল ছড়িয়ে রয়েছে। অথচ খোদ ঢাকা নগরীর চারপাশে চারটি খাল, নগরজুড়ে ২০-২২টি খাল মৃতপ্রায়। শুরু করা উদ্যোগে সর্বসাধারণকে সম্পৃক্ত করে নগরগুলোকে দূষণমুক্ত হওয়া সত্যিকার অর্থেই প্রয়োজন। জলাশয়গুলো আদিরূপে ফিরলে, দূষণমুক্ত হলে ডেঙ্গুসহ নানা রোগবালাইয়ের হাত থেকেও রক্ষা পাবে মানুষ। সুস্থ, নির্মল পরিবেশে স্বাস্থ্য সম্মত উপায়ে বড় হবে আগামীর প্রজন্ম। ঢাকা মহানগরীর নিকটবর্তী স্থানগুলো থেকে সবজি মাছ অতি সহজেই জলপথে নগরগুলোতে সরবরাহ করা যাবে। নদী-খালগুলো বিনোদনের বাড়তি উপলক্ষ হবে। 

ঢাকা, চট্টগ্রমের পাশাপাশি সারা দেশজুড়েই প্রসারিত হবে জলসায় উদ্ধার কার্যক্রম। তবে মনে রাখতে হবে শুরু হওয়া উদ্যোগ যেন মাঝপথে স্থগিত না হয়ে যায়। নাগরিক সমাজের বিশাল দায়িত্ব রয়েছে সরকারের এ উদ্যোগের সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করার। 

উল্লেখ্য, এ খাল উদ্ধার কার্যক্রমে লাল কার্পেটের ওপর দিয়ে উপদেষ্টারা হেঁটে ড্রেজিংয়ে চড়েছেন। এটা আসলে বিতর্কের কোনো বিষয় নয়। লাল বলেই এখানে কার্পেট অন্যকালার হলে হয়তো দৃষ্টিকটু হতো না। যে পরিবেশ পরিস্থিতিতে তারা ড্রেজারে চড়েছেন, সেখানে কোনো কাপড় বা কার্পেট জাতীয় কিছু বিছানো না থাকলে যাওয়া অসম্ভব। ফলে ভালো উদ্যোগকে সাধুবাদ জানানোর চেয়ে ছোট একটা বিষয় নিয়ে ভালো উদ্যোগটাকে মলিন করে দেওয়া হীনমন্যতারই কাজ। 

শেয়ার করুন