যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৩ সালে স্থায়ী বাসিন্দা হওয়া বা পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট নতুন অভিবাসীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশ পত্রিকা কর্তৃক ডাটা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে যে, যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার জন্য বেশির ভাগ মানুষ বিদেশ থেকে নতুন আসছেন এবং সংখ্যাটি বছরে বছরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশিদের জন্য এটি একটি নতুন মাইলফলক। বাংলাদেশের অভিবাসীদের জন্য ২০২৩ সাল একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ২০২১ সালে যেখানে মাত্র ৬ হাজার ৪১০ জন বাংলাদেশি যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী বাসিন্দা হন, ২০২২ সালে তা বেড়ে ১০ হাজার ৮৬০ জনে দাঁড়ায়। ২০২৩ সালে তা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ১৮ হাজার ৯১০ জনে পৌঁছে। এটি বাংলাদেশের অভিবাসন ইতিহাসে একটি বড় সাফল্য এবং প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কোভিড-১৯ মহামারির কারণে গত কয়েক বছরে অভিবাসন সংখ্যা কম ছিল, তবে ২০২৩ সালে তা আবারও পুনরুদ্ধার হয়েছে। এই পুনরুদ্ধার যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন প্রবণতার একটি ইতিবাচক সংকেত প্রদান করছে। ২০২৩ সালে প্রায় ১১ লাখ ৭২ হাজার ৯১০ জন ব্যক্তি পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট বা গ্রিনকার্ডধারী হিসেবে অনুমোদিত হয়েছেন। এ সংখ্যা ২০২২ সালের তুলনায় ১৫ শতাংশ এবং ২০২১ সালের তুলনায় ৬৬ শতাংশ বেশি। ২০২১ থেকে ২০২৩ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন ল-ফুল পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট হিসেবে অনুমোদিত অভিবাসীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২১ সালে মোট ৭ লাখ ৪০ হাজার জন পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট অনুমোদিত হন, ২০২২ সালে এই সংখ্যা বেড়ে ১০ লাখ ১৮ হাজার ৩৫০ জনে পৌঁছে এবং ২০২৩ সালে তা আরো বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ১১ লাখ ৭২ হাজার ৯১০ জন।
নতুন আসা অভিবাসীদের সংখ্যা ২০২১ সালে ছিল ২ লাখ ২৭ হাজার ২১০ জন, যা মোট অভিবাসীদের ৩০.৭ শতাংশ ছিল। ২০২২ সালে এই সংখ্যা বেড়ে ৪ লাখ ৬৫ হাজার ৭২০ জন (৪৫.৭%) এবং ২০২৩ সালে আরো বৃদ্ধি পেয়ে ৫ লাখ ৬৪ হাজার ৬৬০ জন (৪৮.১%) হয়। অন্যদিকে যারা যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছিলেন এবং তাদের স্থায়ী বাসিন্দার স্ট্যাটাস পরিবর্তন করেছেন, তাদের সংখ্যা ২০২১ সালে ছিল ৫ লাখ ১২ হাজার ৮০০ জন, যা মোট অভিবাসীদের ৬৯.৩ শতাংশ ছিল। ২০২২ সালে এটি বেড়ে ৫ লাখ ৫২ হাজার ৬৩০ জন (৫৪.৩%) এবং ২০২৩ সালে ৬ লাখ ৮ হাজার ২৬০ জন (৫১.৯%) হয়েছে।
পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট অনুমোদিত ক্যাটাগরি ও সংখ্যা কী?
২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে মোট ১১ লাখ ৭২ হাজার ৯১০ নতুন ল-ফুল পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট হিসেবে অনুমোদিত অভিবাসীদের মধ্যে ৬৪.৪ শতাংশ বা ৭ লাখ ৫৫ হাজার ৮৩০ জন অভিবাসী পরিবারভিত্তিক ক্যাটাগরি থেকে স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে অনুমোদন পেয়েছেন। এর মধ্যে নিকটাত্মীয়দের সংখ্যা ছিল ৫ লাখ ৫১ হাজার ৫৯০, যার মধ্যে স্বামী/স্ত্রী ২ লাখ ৭৬ হাজার ৮০, পিতা/মাতা ২ লাখ ৮ হাজার ৩৫০ এবং সন্তান ৬৭ হাজার ১৫০ জন ছিলেন। পরিবারভিত্তিক অগ্রাধিকার ক্যাটাগরিতে ২ লাখ ৪ হাজার ২৪০ জন স্থায়ী বাসিন্দা হয়েছেন, যাদের মধ্যে অবিবাহিত পুত্র/কন্যা ২৩ হাজার ৬৯০, গ্রিনকার্ডধারীদের স্বামী/স্ত্রী ও সন্তান ১ লাখ ১৬ হাজার ৫৬০, বিবাহিত পুত্র/কন্যা ১৯ হাজার ১৮০ এবং ভাই/বোন ৪৪ হাজার ৮২০ জন ছিলেন।
চাকরিভিত্তিক অভিবাসীদের মধ্যে ১৬.৮ শতাংশ বা ১ লাখ ৯৬ হাজার ৭৬০ জন অভিবাসী স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে অনুমোদন পেয়েছেন। এর মধ্যে ৫৭ হাজার ১৪০ জন প্রাধান্যপ্রাপ্ত কর্মী (প্রায়োরিটি ওয়ার্কার্স), ৫৫ হাজার ৭৯০ জন উচ্চতর ডিগ্রিধারী পেশাজীবী, ৫৭ হাজার ৩১০ জন দক্ষ ও অদক্ষ কর্মী, ১৪ হাজার ৬০০ জন বিশেষ অভিবাসী এবং ১১ হাজার ৯৩০ জন বিনিয়োগকারী ছিলেন। ডাইভারসিটি প্রোগ্রাম (ডিভি লটারি) থেকে ৬৭ হাজার ৩৫০ জন স্থায়ী বাসিন্দা হয়েছেন, যা মোট অভিবাসীদের ৫.৭ শতাংশ। শরণার্থী এবং আশ্রয়প্রার্থী সমন্বয়ে ৯৯ হাজার ৩৬০ জন ল-ফুল পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট হিসেবে অনুমোদন পেয়েছেন, যার মধ্যে শরণার্থী সমন্বয় ৫৯ হাজার ৩০ এবং আশ্রয়প্রার্থী সমন্বয় ৪০ হাজার ৩৩০ জন।
অন্যান্য ক্যাটাগরিতে ৫৩ হাজার ৬০০ জন অভিবাসী স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে অনুমোদন পেয়েছেন, যার মধ্যে বাহিরে জন্ম নেওয়া শিশু ৬১০, ইরাকি ও আফগান কর্মীরা ২৬ হাজার ৪৩০, অপসারণের বাতিল ৪ হাজার ৯০০, নির্দিষ্ট বার্ষিক সীমায় অভিবাসী ৪ হাজার ৫৮০, নিকারাগুয়ান অ্যাডজাস্টমেন্ট অ্যান্ড সেন্ট্রাল রিলিফ অ্যাক্ট সেকশন ২০৩-এর অধীনে ৩২০, মানব পাচারের শিকার ৮০০, অপরাধের শিকার এবং তাদের পরিবার ১৯ হাজার ৭২০ এবং অন্যান্য ১ হাজার ১৪০ জন ছিলেন।
অভিবাসনের উৎস দেশ ও অঞ্চল
যুক্তরাষ্ট্র এশিয়া অঞ্চলে ২০২৩ সালে সর্বোচ্চ সংখ্যক অভিবাসী প্রদান করেছে, যেখানে ৪ লাখ ১৮ হাজার ৯৩০ জন অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী বাসিন্দা হন। এটি মোট অভিবাসনের ৩৫.৭ শতাংশ। উত্তর আমেরিকা থেকে ৪ লাখ ৫০ হাজার ৩১০ জন (৩৮.৪%) এবং আফ্রিকা থেকে ১ লাখ ৫ হাজার ৫২০ জন (৯.০%) অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী বাসিন্দা হন। এর পাশাপাশি, দক্ষিণ আমেরিকা, ইউরোপ ও ক্যারিবীয় অঞ্চল থেকেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। বিশেষ করে ক্যারিবীয় অঞ্চল থেকে ২০২১ সালে ৭৭ হাজার ৫৬০ জন অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী বাসিন্দা হন, যা ২০২৩ সালে বেড়ে ১ লাখ ৯৩ হাজার ৫৮০ জনে পৌঁছায়।
পরিবারভিত্তিক এবং চাকরিভিত্তিক অভিবাসন
২০২৩ সালে ৬৪ শতাংশ নতুন পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট পরিবারভিত্তিক অভিবাসন দ্বারা স্থায়ী বাসিন্দা হয়েছেন, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় হিসেবে। এই ক্যাটাগরির জন্য বার্ষিক সীমা নেই এবং এটি পরিবারভিত্তিক অভিবাসনের বৃহত্তম অংশ। চাকরিভিত্তিক অভিবাসন ২০২৩ সালে হ্রাস পেয়েছে, যেখানে মাত্র ১৭ শতাংশ নতুন পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট চাকরিভিত্তিক ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী বাসিন্দা হয়েছেন। গত দুই বছর মহামারির কারণে অব্যবহৃত পরিবারভিত্তিক ভিসা পুনর্বণ্টন হওয়ার কারণে চাকরিভিত্তিক অভিবাসন বৃদ্ধি পেয়েছিল।
ডাইভারসিটি ভিসা প্রোগ্রাম ও মানবিক অভিবাসন
ডাইভারসিটি ভিসা প্রোগ্রামের মাধ্যমে ২০২৩ সালে ৫৪ হাজার ৮৩৩ জন অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী বাসিন্দা হন। এই প্রোগ্রামটি ওই দেশগুলোর নাগরিকদের জন্য পরিচালিত হয় যেসব দেশ থেকে কম অভিবাসন হয়েছে। এছাড়া শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থীদের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ রয়েছে। ২০২৩ সালে শরণার্থী গ্রহণের সীমা ১ লাখ ২৫ হাজার ছিল এবং যুক্তরাষ্ট্রে মানবিক ভিত্তিতে অভিবাসন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের প্রবণতা একটি ইতিবাচক পরিবর্তন দেখিয়েছে। বিশেষ করে, বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ২০২৩ সাল ছিল একটি মাইলফলক। বাংলাদেশের অভিবাসীরা তাদের ক্রমবর্ধমান যোগ্যতা ও অভিবাসনের জন্য উৎসাহের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছেন। এটি বাংলাদেশের অভিবাসন ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক এবং ভবিষ্যতে আরো বৃহত্তর অভিবাসন প্রবাহের আশাবাদী সংকেত।