১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শনিবার, ০৯:০৬:১৫ পূর্বাহ্ন


আয়নাঘরের প্রমাণ তদন্ত কমিশনের হাতে
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-১০-২০২৪
আয়নাঘরের প্রমাণ তদন্ত কমিশনের হাতে আয়নাঘরের প্রতীকী ছবি


আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গুমের ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিশন ‘আয়নাঘরের’ প্রমাণ পেয়েছে। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বলপূর্বক গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, কমিশন কাজ শুরুর পর গত ১৩ কার্যদিবসে তাদের কাছে মোট ৪০০টি অভিযোগ জমা পড়েছে। এছাড়া কমিশন ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্সের (ডিজিএফআই) দোতলা ভবনটিতে ২২টি সেল খুঁজে পাওয়া গেছে, যেগুলো কাউকে বন্দি করে রাখার জন্য ব্যবহৃত হতো।

তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘যারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে জোরপূর্বক গুমের শিকার হয়েছেন, তাদের অভিযোগ আমরা আমলে নিয়েছি। আমরা অভিযুক্তদের তলব করবো। তারা কমিশনে হাজির না হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।’

তিনি আরো বলেন, ‘বেশির ভাগ অভিযোগই র‌্যাব, পুলিশের গোয়েন্দা শাখা, ডিজিএফআই ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) বিরুদ্ধে। আমরা ২৫ সেপ্টেম্বর আয়নাঘর এবং ১ অক্টোবর ডিবি ও সিটিটিসি পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। আমরা সেখানে কোনো বন্দি খুঁজে পাইনি। কারণ আমাদের মনে হয় বন্দিদের ৫ আগস্টের পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’

কমিশন গঠন হলো যখন 

এর আগে ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সব গুমের ঘটনা তদন্তে ৫ সদস্যের কমিশন গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। কমিশনের প্রধান মনোনীত হয়েছেন হাইকোর্ট বিভাগের সাবেক বিচারপতি মাইনুল ইসলাম চৌধুরী। গত ২৭ আগস্ট রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে এই কমিশন গঠন করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এদিন সন্ধ্যায় এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেনের সই করা আদেশে বলা হয়েছে-সরকার, কমিশন অব ইনকোয়ারি অ্যাক্ট, ১৯৫৬ (অ্যাক্ট নম্বর ভিআই অব ১৯৫৬)-এর সেকশন ৩-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে, আইনশৃঙ্খলা প্রয়োগকারী সংস্থা তথা বাংলাদেশ পুলিশ, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), বিশেষ শাখা, গোয়েন্দা শাখা, আনসার ব্যাটালিয়ন, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), প্রতিরক্ষা বাহিনী, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদফতর (ডিজিএফআই), কোস্ট গার্ডসহ দেশের আইন প্রয়োগ ও বলবৎকারী কোনো সংস্থার কোনো সদস্য কর্তৃক জোরপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানের জন্য নিম্নবর্ণিত পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিশন, অতঃপর ‘কমিশন' গঠন করলো-(১) বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত বিচারক, হাইকোর্ট বিভাগ, সভাপতি (২) বিচারপতি মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী, অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত বিচারক, হাইকোর্ট বিভাগ, সদস্য (৩) নূর খান, মানবাধিকারকর্মী, সদস্য (৪) নাবিলা ইদ্রিস, শিক্ষক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, সদস্য (৫) সাজ্জাদ হোসেন, মানবাধিকারকর্মী, সদস্য।

কমিশনের কার্যপরিধি 

(ক) ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা প্রয়োগকারী সংস্থা, তথা বাংলাদেশ পুলিশ, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), বিশেষ শাখা, গোয়েন্দা শাখা, আনসার ব্যাটালিয়ন, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), প্রতিরক্ষা বাহিনী, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদফতর (ডিজিএফআই), কোস্ট গার্ডসহ দেশের আইনপ্রয়োগ ও বলবৎকারী কোনো সংস্থার কোনো সদস্য কর্তৃক জোরপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান, তাদের শনাক্ত করা এবং কোন পরিস্থিতিতে গুম হয়েছিলেন তা নির্ধারণ করা; (খ) জোরপূর্বক গুম হওয়ার ঘটনাগুলোর বিবরণ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করা এবং এ বিষয়ে সুপারিশ প্রদান করা; (গ) জোরপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান পাওয়া গেলে তাদের আত্মীয়-স্বজনকে অবহিত করা; (ঘ) জোরপূর্বক গুম হওয়ার ঘটনা সম্পর্কে অন্য কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের পরিচালিত তদন্তের তথ্য সংগ্রহ করা এবং (ঙ) ওপরে বর্ণিত উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট যে কোনো কার্য করা।

এ কমিটি ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে সরকারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার কথা। 

শেয়ার করুন