৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৯:১৯:৪৭ অপরাহ্ন


অরুণাচল ও মনিপুর নিয়ে দুশ্চিন্তায় মোদী
ডোনাল্ড লু’র আলোচনায় কি ইন্দো প্যাসেফিক থাকছে?
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-০৯-২০২৪
ডোনাল্ড লু’র আলোচনায় কি ইন্দো প্যাসেফিক থাকছে? ডোনাল্ড লু


হঠাৎ বাংলাদেশে পট পরিবর্তন। বাংলাদেশের উপর ভারতের প্রভাব হ্রাস। সেভেন সিষ্টার্সের এক অঞ্চলের সীমান্ত পেড়িয়ে ৬০ কিলোমিটার ঢুকে গেছে চায়না আর্মি। সেভেন সিস্টার্সের আরেক অঞ্চলে মনিপুরে তুমুল আন্দোলন। চাচ্ছে স্বাধীনতা। বাংলাদেশের সীমান্তের ওই পাড়ে মিয়ানমারে তুমুল যুদ্ধ। মর্টার শেলসহ গোলাগুলির আওয়াজে বাংলাদেশের কিছু এলাকার মানুষ দুশ্চিন্তায়। বাংলাদেশে ঢুকছে রোহিঙ্গা। 

বাংলাদেশ সফরে আসছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের পররাষ্ট্র কর্মকর্তা ডোনাল্ড লু। দক্ষিণ এশিয়ার বিশেষ করে ইন্দোপ্যাসেফিক এ জোনে আসলে হচ্ছেটা কী! 

শুরুটা বাংলাদেশ থেকে। 

জুলাই থেকেই আন্দোলনের তীব্রতা বেড়ে আগস্টের প্রথম প্রহরে ক্ষমতাধর ও ১৬ বছরে বাংলাদেশের সরকার পরিচালনা একছত্র প্রধান্য বিস্তার করা প্রাচীনতম দল আওয়ামী লীগ ও দলটির মূল কর্ণধর শেখ হাসিনার ছাত্র জনতার রোষাণলে গণঅভ্যুত্থানে পতনের মাধ্যমে শুরু হয় বাংলাদেশের পট পরিবর্তন। এমন একজন তুখোড় রাজনীতিবিদ ও রাজনৈতিক ফ্যামেলির সন্তান হয়েও ক্ষমতা ছেড়ে জীবনের মায়ায় দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া বিশ্বের ইতিহাসে নজির সৃষ্টি করেছে। সহস্রাধিক ছাত্র জনতা হত্যা করেও ক্ষমতার মসনদ ঠিক রাখতে না পারা আওয়ামী লীগ এখন অনেকটাই তীরহারা নৌকায় গভীর সাগরে ভাসছে। 

বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন এক সরকার। যার প্রধান শান্তিতে নোবেল জয়ী ও বিশ্ব বরেণ্য এ নেতা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশের যাত্রা এক রক্ষক্ষয়ী ও রাজপথ ডোবানো রক্ত পেড়িয়ে শুরু হওয়ার এক মাস পূর্তি অন্তত অর্থনৈতিক সেক্টরে স্বস্থির ইঙ্গিত মিলেছে। ফিরছে জনমনে স্বস্তি। চারদিক থেকে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করার খবর মিলছে তার কাছে। বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকবে না বলেই সাধারণ মানুষের বিশ্বাস। কিন্তু শুধু বাংলাদেশ এগিয়ে থাকলে তো হবে না, চারদিকের দেশ বা অঞ্চলে শান্তি না থাকলে অশান্তির আগুনের আভা বাংলাদেশেও লাগবে এটাই স্বাভাবিক। এ জন্যই বাংলাদেশের অনেক মানুষের দৃষ্টি পাকিস্তানের পর এখন সেভেন সিষ্টার্সসের দিকে। পাকিস্তানেও ছাত্র জনতার আন্দোলন শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের আদলে। সেটা আপাতত একটু দম নিয়েছে। কিন্তু নতুন মাত্রায় শুরু ভারতের মনিপুরে। 

এ রিপোর্ট লেখাকালীন সময়ে সেখানে প্রচন্ড আন্দোলন চলছে। বাতাস বইছে স্বাধীনতার। ভারত কিভাবে এমন আন্দোলন দমাতে পারবে সে দুশ্চিন্তায় নরেন্দ্র মোদী। দুশ্চিন্তা শুধু সেখানেও নয়। অরুণাচলে ১৬ কিলোমিটার ঢুকে গেছে চায়নিচ আর্মি। খবর এসেছে সেখানে ঘাটিও গেড়ে বসেছে। নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে পাথরে সন, সময়সহ অনেক কিছু লিখে ছবি তুলে সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশও করছে। ভারত মুখ ফুটে এ ব্যাপারে এখনও তেমন কিছু না বললেও এ নিয়ে হয়তো কোনো বন্ধুপ্রতীম দেশের নির্দেশনা খুঁজছে। এরই মধ্যে খবর প্রকাশিত হয়েছে ভারতের দুটি শিপিং কোম্পানীর উপর (এনএনজি) মার্কিন নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এতে করে রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের যে বাণিজ্যিক একটা গভীর সম্পর্ক তার উপর ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। বরাবরই ভারত রাশিয়া ও মার্কিনী স্বার্থ রক্ষা করে চলানীতি নিয়ে চলছে। এবার সে নীতিটা আর ঠিক রাখতে ব্যর্থ হলো বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। কেননা চায়নাদের ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের যে সহায়তা প্রয়োজন সেটা ভারতের চেয়ে ভাল আর কে বুঝবে। কিন্তু সে সম্পর্কে কিছুটা ভাটা না হলে চায়নিজরা ১৬ কিলোমিটার ঢুকে যাওয়ার যে দুঃসাহস সেটা হয়তো এ মুহূর্তে দেখাতো না। তবুও শক্তিধরদের ভাগবাটোয়ারা ও মান অভিমানের ধরন বোঝা মুশকিল! 

এ সময় বাংলাদেশের সাপোর্টটা বেশ দরকার ছিল বলেই মনে হচ্ছে। কিন্তু ভারতের পাশে নেই বাংলাদেশ। যে সরকার প্রধান তাকে সহায়তা দানে এক কদম এগিয়ে থাকতেন তিনি এখন দিল্লীতে অবস্থান করছেন। তাকে নিয়েও মহা দুশ্চিন্তায় ভারত সরকার। একই সময় এতগুলো দুঃসংবাদ ভারতের জন্য হজম করা কষ্টকর। তবে ঝানু পলিটিশিয়ান নরেন্দ্র মোদী ও তার সরকার। ফলে একটা উপায় হয়তো ঠিকই বের করবেন। কিন্তু সেটা কদ্দিনে হবে সেটা এখণ প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। অরুণাচল ও মনিপুর নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে। বাংলাদেশ নিয়েও ছিল। সেটা ঢেকে গেছে নিজের ওই দুই স্থান কন্ট্রোল করার তাগিদে। 

এমন এক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সফরে আসছেন ডোনাল্ড লু। কেন কী কারনে আসবেন তিনি বাংলাদেশ সফরে তার অদিঅন্ত না বোঝা গেলেও তার এ সফরটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি জরুরি কোনো কথা থাকতো সেটা ড. ইউনুসের জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগদান উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রে সফরে আলাপ করলেই চলতো। কিন্তু লু, তড়িঘড়ি করে ঢাকায় চলে আসার মধ্যে কোনো হেকমত নীহিত থাকলে থাকতেও পারে। 

বাংলাদেশে তিনি আসছেন দীর্ঘদিন থেকেই। বাংলাদেশে ভোটের অধিকার নিশ্চিতকরণ ও বাংলাদেশে সত্যিকারের একটা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মিশন তো আছেই, এর পাশাপাশি ইন্দো প্যাসেফিকের যে উদ্দেশ্য, চায়নাকে চোখে চোখে রাখার যে পরিকল্পনা, সেটাতে সায় দেয়নি বাংলাদেশ। বাংলাদেশ বলতে শেখ হাসিনার সরকার। 

হাসিনা এ বিষয় নিয়ে বহু রঙ্গব্যাঙ্গ করেছেন। এখন তার বিদায়ের পর নতুন সরকারের কাছে তাদের পুরানো আবদারটা উঠতেই পারে, এটা অসম্ভব কিছু না। বরং শেখ হাসিনার চেয়েও প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুস অনেক বেশি কাছের বন্ধু যুক্তরাষ্ট্রের। ফলে সে দিক থেকে বাংলাদেশের কোনো সহযোগিতা যদি তারা চায় এবং সেটাতে বাংলাদেশ যদি লাভবান হয়, তাতে হয়তো সায় দিলে দিতেও পারে প্রফেসর ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। শেখ হাসিনাও এটা করতে পারতেন, কিন্তু ভারতের কোনো নির্দেশনা ছিল কিনা সেটা ক্লিয়ার না। তবে একটা কথা শেখ হাসিনা ক্লিয়ার করেছিলেন, যে সেন্টমার্টিন ব্যাবহার করতে দিলে আমার ক্ষমতায় থাকতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আমি সেটা দেবো না। কিন্তু এর প্রতিবাদ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। তারা জানান দেয়, আমরা কখনও বাংলাদেশের এক ইঞ্চি মাটি ব্যাবহারের ইচ্ছা পোষণ করিনি। তবে হ্যা, ইন্দোপ্যাসেফিকে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া নেতৃত্বাধীন জোটে যোগদানের আহ্বানে সাড়া দেয়নি বাংলাদেশ। এখানে সম্ভবত চীনের জন্য শেখ হাসিনা সরকার মধ্যপন্থা অবলম্বন করেছে। 

এখন সব প্রেক্ষাপটের অবসান। নতুন সরকার। নতুন পরিকল্পনা সাজাতে পারে হয়তো বাংলাদেশ। কিন্তু সেটা কী সময় এলেই বুঝা যাবে বৈ কি! 

শেয়ার করুন