৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০২:৫০:৪১ অপরাহ্ন


১৪ দলের শরিকেরা ভীত-সন্ত্রস্ত
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-০৮-২০২৪
১৪ দলের শরিকেরা ভীত-সন্ত্রস্ত


আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল শরিকরা ভীত-সন্ত্রস্ত। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে কেউ কেউ মোবাইলেও যোগাযোগ রাখছেন না। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কারো নিবাস এখন। কোনো কর্মসূচি দূরে থাক বিবৃতি দিতেও সাহস পাচ্ছেন না তারা। এসব তথ্য মিলেছে খুঁজে পাওয়া ১৪ দল শরিকদের কয়েকজন মাঝারি গোছের নেতাদের। 

ভাবতেই পারেনি তাদের ভবিষৎ

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এমন আকস্মিক পতনের চেয়ে বড় ব্যাপারে হচ্ছে শরিকরা এখন আওয়ামী লীগের পাশাপাশি তারাও স্বৈরশাসকের সহযোগী হিসেবে আখ্যা পেয়েছে। ইতোমধ্যে দাবিও উঠেছে স্বৈরশাসকের সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত করে শরিক দলগুলোর নেতাকর্মীর বিচারের দাবি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া শিক্ষার্থী ও তাদের সমর্থনকারী রাজনৈতিক দলের নেতাদের এমন দাবির মুখে একে একে গ্রেফতারও হচ্ছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৪ দলের শরিকদের অন্যতম বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভাবতেই পারেনি তাদের ওপর এমনভাবে খড়গ নেমে আসছে। তাদের ধারণাই ছিল না তারা গ্রেফতার হতে যাচ্ছেন বা মামলায় পড়বেন। কিন্তু ইতোমধ্যে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেননকে পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়ে দিয়েছে আদালত। রাজধানীর নিউমার্কেটে ব্যবসায়ী আবদুল ওয়াদুদ হত্যা মামলায় গত বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) বিকেলে সোয়া ৫টার দিকে রাজধানীর বনানীস্থ নিজ বাসা থেকে আটক হন রাশেদ খান মেনন। এরপর মাত্র পাচ দিনের মাথায় সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনুকে আটক করা হয়েছে। গত সোমবার রাজধানীর উত্তরা থেকে তাকে আটক করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। বলা হয়েছে ইনুর বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মামলা আছে।

এই অবস্থায় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক জোট কেন্দ্রীয় ১৪ দলের এই পর্যায়ের আরো গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের পাশাপাশি বাকিরা গা দ্রুত রাজধানী ত্যাগ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে পাড়ি দিয়েছেন। আরো জানা গেছে গত ৭ অগাস্ট বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির আরেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা দেশ ছেড়েই চলে গেছেন। তবে পুরোপুরি নিশ্চিত না হওয়ায় নাম প্রকাশ না করতে অনুরোধ করে দলের একজন নেতা। তবে দলটির অন্যতম নেতা বিশেষ করে রাশেদ খান মেনন ধারণাই করতে পারেননি তাকে গ্রেফতার করা হবে। তাই তিনি আত্মগোপন বা দেশ ছাড়ার মতো সিদ্ধান্ত নেননি। তাছাড়া তা-র ধারণা ছিল পতিত আওয়ামী লীগের অগণতান্ত্রিক বা স্বৈরশাসনের দায় তার বা ১৪ দলের বাকি শরিকদের ওপর পড়বেই না। কারণ শোনা যায়, ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে রাশেদ খান মেনন অংশগ্রহণই করতে চাননি। কিন্তু দলের অপর একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা যিনি ইতোমধ্যে দেশত্যাগ করে ফেলেছেন তার পীড়াপীড়িতেই ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে রাশেদ খান মেনন অংশ নেন। এমনকি শোনা যায় ছাত্র-জনতার উত্তাল সময়ে প্রথম কারফিউ দেয়ার জন্য ১৯ জুলাইয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠতেও মেনন আসতে চাননি। এমনকি ২০২৪ সালের নির্বাচিত হয়েও তিনি সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের সমালোচনাও করেছেন। বলেছিলেন কারা বাজার নিয়ন্ত্রণ করে সরকারের তা জানা উল্লেখ করে ওয়ার্কার্স পার্টির এই সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছিলেন অন্য দলকে এ ব্যাপারে দোষ দিয়ে লাভ নেই। নিজের (ওই সময়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ) মানুষের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিতে হবে বলে সাফ জানিয়ে দেন। এর পাশাপাশি তিনি দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সমালোচনা করে মেনন অধ্যাপক রেহমান সোবহানকেও সমর্থন করেন। বলে উনি ঠিকই বলেছেন, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে মুষ্টিমেয় লোক ধনসম্পদের অধিকারী হয়েছেন। তাই একটা ভরসার জায়গা ছিল যে মেননের গায়ে স্বৈরাচারের দোসর হিসাবে আচড় পড়ছে না। অন্যদিকে একই মনোভাব ছিল বলে বলা হয় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু’র বেলাতেও। তবে একটি সূত্র জানায়, রাশেদ খান মেননের দলের নেতাকর্মীরা তাদের নেতার ওপর এমন খড়গ নেমে আসার আশঙ্কা না করলেও হাসানুল হক ইনু’র বেলায় তা ছিল না। হাসানুল হক ইনু’র নেতাকর্মীরা ধারণাই করেছিলের তাদের নেতা কোনোভাবেই রেহাই পাচ্ছেন না। এদিকে রাশেদ খান মেননের পরপরই হাসানুল হক ইনু’র গ্রেফতারের পর থেকে পুরো ১৪ দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরাই এখন ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন। এমনটা হবে তারাও ভাবতে পারেননি। কারো কারো মতে, এমনটা যে হবে না ভেবেই ১৪ দলের শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতা নিজ নিজ বাসায়ই অবস্থান করছিলেন, এর পাশাপাশি অন্য নেতাকর্মীরাও । কিন্তু এখন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে পুরো ১৪ দলের শরিকদের গুরুত্বপূর্ণের পাশাপাশি মাঝারি গোছের নেতারাও আতকে উঠছেন। পালিয়ে বেড়ানোর খাতায় নাম লেখিয়েছেন। 

২০০৪ সালে ১৪ দল গঠনের সময় বলা হয়েছিল আন্দোলন, নির্বাচন ও সরকার গঠন সবকিছু একসঙ্গে হবে। কিন্তু ২০১৮ সাল থেকে আর জোটের সরকার ছিল না। পুরোপুরি আওয়ামী লীগের সরকার হয়ে যায়। তখন থেকে রাজপথের কর্মসূচিও ছিল না। মাঝে মধ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে কিছু বৈঠকে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে জোটের কার্যক্রম। কোথাও ছিল না ১৪ দলের কোনো অস্থিত্ব। অর্থ্যাৎ ২০১৮ সাল পর্যন্ত জোটে একধরনের সক্রিয়তা থাকলেও এরপর থেকেই ক্রমে দূরত্ব তৈরি হয় জোটে। তবে সর্বশেষ ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে মাত্র ছয়টি আসনে ছাড় পায় ১৪ দলের শরিকেরা। এর মধ্যে মাত্র দুটি আসনে জয় পায়, কিন্তু মন্ত্রিসভায়ও স্থান হয়নি।

শেয়ার করুন