৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৯:১১:০৬ পূর্বাহ্ন


অনিশ্চয়তার দোলাচলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০৫-২০২৪
অনিশ্চয়তার দোলাচলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে কথা বলছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ


রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে তোড়জোড় কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। যেমনটা হ্রাস পেয়েছে রোহিঙ্গাদের ভরণপোষণের খরচাদি প্রাপ্তি। তেমনি বিদেশিদের এ প্রসঙ্গে তৎপরতা। বাংলাদেশ বলে বলে ক্লান্ত। নিজেদের হাজারো সমস্যার সঙ্গে এ প্রসঙ্গ নিয়ে আর সোচ্চার হওয়ার সময়ও হয় কম। যদিও পরারাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানাচ্ছে প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু কার্যকারিতা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব। বিশেষ করে মায়ানমারের অভ্যন্তরে বিভিন্ন স্বাধীনতাকামীদের সঙ্গে মায়ানমারের আর্মির যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, বাংলাদেশের সীমান্তের অভ্যন্তরের লোকজন তটস্থ প্রতিবেশীর সীমান্তে গোলার ও গুলির আওয়াজে, এমন প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গাদের সেখানে পাঠানোটাকে ঠেলে দেওয়া তুল্য মনে করছে পশ্চিমাগোষ্ঠী। 

বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের মায়ানমারে প্রত্যাবাসনে গত সাত বছর ধরে বাংলাদেশ বিভিন্নস্থানে বহু চেষ্টা-তদবিরসহ ধর্ণা দিয়ে এলেও এতে কর্ণপাত নেই কারোই। যদিও এই সমস্যা সমাধানে আশাবাদ ব্যক্ত করছেন বাংলাদেশের সম্প্রতি দায়িত্ব পাওয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি মনে করছেন, আন্তর্জাতিক আদালতে মায়ানমারের বিরুদ্ধে করা মামলায় দ্রুত একটি ‘পজিটিভ আউটকাম’ আসবে। এতে মায়ানমারের ওপর চাপ তৈরি হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। একই সঙ্গে এই ইস্যুতে দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত এবং চীনকে যুক্ত করলে ‘সমাধান সম্ভব’ বলেও তিনি মনে করেন।

গত রোববার (১৯ মে) ঢাকায় প্রেসক্লাবে ওভারসিজ করেসপন্ডেন্ট অব বাংলাদেশ (ওকাব) এর একটি আলোচনা অনুষ্ঠানে এসব মতামত উঠে এসেছে।

অনুষ্ঠানের মূল প্রশ্নই ছিল দীর্ঘ ৭ বছর পরও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়ার আর কতদূর? তাদের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক যে অর্থ সহায়তা পাওয়া যায়, তা কমে আসা নিয়ে সরকারের উদ্যোগই বা কী? এ সংক্রান্ত বিষয় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সংকটকে অন্য কোনো সংকটের সঙ্গে তুলনা করা যাবে না। একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে সরকারকে আরো মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

সেমিনারের মূল প্রবন্ধে বাংলাদেশের সংবাদ সংস্থা ইউএনবির সম্পাদক ফরিদ হোসেন উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘দেশে এখন রোহিঙ্গাদের সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতার অংশ হিসেবে বিভিন্ন দেশ তাদের প্রত্যাবাসনের চেষ্টায় মায়ানমারের সঙ্গে আলোচনা করলেও এখন পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত পাঠানো যায়নি।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। বাংলাদেশ কূটনৈতিক ও আইনি দুই প্রক্রিয়াতেই এগোচ্ছে বলে জানান। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া এখনো চলমান। এ বিষয়ে এখনো সমঝোতা প্রক্রিয়া চলছে। গত বছর প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা থাকলেও মায়ানমারের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নাজুক হয়ে পড়ে। এ সমস্যা সমাধানের জন্য কূটনৈতিক পথটাকেই অনুসরণ করছি। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক আদালতেও গেছি। গাম্বিয়ার মাধ্যমে মামলা করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক আদালতে যতটুকু আউটকাম এসেছে তা আমাদের পক্ষেই এসেছে। 

হাছান মাহমুদ বলেন, খুব দ্রুতই এই মামলার একটা পজিটিভ আউটকাম আসবে। আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে একটা চাপ মায়ানমারের ওপর পড়বে। তিনি বলেন, ‘আমাদের রিজিওনাল পাওয়ারগুলোর গুরুত্ব অনেক। এখানে ভারত ও চীনের ভূমিকা অত্যন্ত মুখ্য। তাদেরকে আরো বেশি করে এনগেজ করতে পারলে বিশ্বাস করি যে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।’

উগান্ডায় মায়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের কথা জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, আন্তর্জাতিক ক্রিটিসিজম (সমালোচনা) এড়ানোর জন্য তারা অন্তত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে চায়। তার কথাতে এটা আমার মনে হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে মায়ানমারের রাখাইনে এখন যে পরিস্থিতি-তাদের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে। যেখানে তাদের সিকিউরিটি ফোর্স এখানে পালিয়ে আসছে এ পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের সেখানে ঠেলে দিতে পারি না।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘১৩ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে মাত্র কয়েকশ রোহিঙ্গাকে কানাডা, ইউকেতে নেওয়া হয়েছে। তারা তো সবাইকে নিচ্ছে না।’

শেয়ার করুন