৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৭:৩২:৩৮ অপরাহ্ন


বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটি : অসাধ্যকে সাধন করলেন জাহিদ মিন্টু
১ লাখ কবরের বিশাল প্রজেক্ট নগদ অর্থে ক্লোজ করা হলো
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-১২-২০২৪
১ লাখ কবরের বিশাল প্রজেক্ট নগদ অর্থে ক্লোজ করা হলো


স্বপ্ন। এ স্বপ্ন ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না। আবার সমষ্টিগত কিছু করতে গেলে স্বপ্ন দেখানোর মানুষ লাগে। স্বপ্ন দেখানোর মানুষ না থাকলে কল্যাণকর এবং মানব কল্যাণে বড় কোনো কাজ করা সম্ভব হয় না। অন্যদিকে মানুষের কল্যাণে কিছু করতে গেলে বা মানবতার ফেরিওয়ালা হতে গেলে উদার মানসিকতার প্রয়োজন। এই মানসিকতা সব মানুষের মধ্যে থাকে না। তারা নিজের সুখ-শান্তি নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। মানব কল্যাণ তাদের চিন্তা-চেতনা এবং মননে থাকে না, সব সময়ই নিজ কল্যাণ নিয়ে থাকে। কিন্তু সমাজে কিছু মানুষ থাকেন, আল্লাহ যাদের মানব কল্যাণের জন্যই মনে হয় প্রেরণ করে থাকেন। সেই সব মহতী মানুষের কারণে ব্যক্তি, সমাজ এবং রাষ্ট্র আলোকিত হয়। তারা থাকেন প্রচারবিমুখ। নীরবে নিভৃতে তারা কাজ করে যাচ্ছেন বিরামহীনভাবে। এই রকমই একজন মানুষ হচ্ছেন বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং কমিউনিটির অত্যন্ত প্রিয় মুখ জাহিদ মিন্টু। সত্যি কথা বলতে কী তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করেন। বিশাল এক হৃদয়ের অধিকারী জাহিদ মিন্টু যিনি শুধু বৃহত্তর নোয়াখালীবাসীর জন্য নয়, এবার এগিয়ে এসেছেন প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির জন্য।

প্রবাসের অন্যতম আদর্শিক সংগঠন বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটি। একটি সংগঠনে যোগ্য নেতৃত্ব থাকলে অনেক কিছুই করা সম্ভব। আর সেই কাজটি ধারাবাহিকভাবে করে যাচ্ছে বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটি। বৃহত্তর নোয়াখালীবাসীর জন্য তিনটি প্রজেক্ট শেষ করে চতুর্থ প্রজেক্টের পরিকল্পনা গ্রহণ করে বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির কর্মকর্তারা। ব্রুকলিনের বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকা চার্চ ম্যাকডোনাল্ডে দুটি বাড়ি এবং লং আইল্যান্ডে কবরস্থানের পর এবার বাংলাদেশি কমিউনিটির জন্য বড় প্রজেক্ট নিয়ে এগোচ্ছে বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির কর্মকর্তারা। এই বৃহত্তর প্রজেক্টটি হচ্ছে নিউইয়র্কে ১ লাখ কবর। আপটাউনের মিডল টাউনে ১২৬ একর জায়গার ওপর এই প্রজেক্ট হবে। নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস, ব্রুকলিন থেকে এই প্রজেক্টের যেতে সময় লাগবে ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট। এই প্রজেক্টে থাকবে ফিউনারেল হোম, হিমাগার, নামাজ পড়ার জায়গাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা। এবই বিশাল প্রজেক্ট নোয়াখালী সোসাইটির একার পক্ষে কষ্টসাধ্য বিষয় ছিল। আর এই প্রজেক্টের নামকরণ করা হয়েছে বাংলাদেশ সিমেট্রি। এটি শুধু নোয়াখালীবাসীর জন্য নয়, পুরো প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য। যে কারণে পুরো প্রজেক্টটি বাংলাদেশিদের সামনে উপস্থাপন করা হয় তাদের সহযোগিতার জন্য। এই প্রজেক্টটি বিউটি হচ্ছে সব প্রবাসী বাংলাদেশি মুসলিম সম্প্রদায়ের কোনো সদস্যের মৃত্যুর পর একই স্থানে দাফন করা হবে। থাকবে ফিউনারেল সুবিধাও। বলা যায়, ওয়ান স্টপ সার্ভিস। এই প্রজেক্টের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ২০২২ সালের ২২ জুলাই বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির যৌথ সভায়। সেই যৌথ সভার পর পুরো বাংলাদেশি কমিউনিটিকে নিয়ে মতবিনিময় সভা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এই বিশাল প্রজেক্টটি কমিউনিটির সঙ্গে উপস্থাপন করা হয় গত ২৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় উডসাইডের গুলশান টেরেসে। অনুষ্ঠানে আগতদের ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ইউছুপ জসীম এবং স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রাখেন সমিতির সভাপতি নাজমুল হাসান মানিক। দুই পর্বের এই অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে বক্তব্য রাখেন সমিতির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হাজি মফিজুর রহমান, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মোশাররফ হোসেন খোকন, বি এম বেলাল, কার্যকরি কমিটির সহ-সভাপতি তাজু মিয়া।

দ্বিতীয় পর্বের অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রজেক্ট নিয়ে বক্তব্য রাখেন প্রজেক্টের আহ্বায়ক আব্দুর রব মিয়া। তিনি তার বক্তব্যে সবাইকে ধন্যবাদ জানান এবং এই প্রজেক্টে সহযোগিতার আহ্বান জানান। এরপর জাহিদ মিন্টুর উপস্থাপনায় প্রজেক্টরের মাধ্যমে পুরো প্রজেক্টটি উপস্থাপন করা হয়। প্রজেক্টের পরিকল্পনা, শুরু, প্রথমিক কাজ, বর্তমান অবস্থা, সুযোগ-সুবিধাসহ খুঁটিনাটি সব বিষয় উপস্থাপন করা হয়। 

জাহিদ মিন্টু যে স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং পুরো কমিউনিটিকে যে স্বপ্ন দেখিয়েছেন তিনি তা বাস্তবায়ন করলেন। প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ১ লাখ কবর এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব। গত ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪ সালে নতুন এই ইতিহাস তৈরি সৃষ্টি হয়। পুরো অর্থ নগদে দিয়ে এই প্রজেক্ট ক্লোজ করা হয়েছে। এই সময় উপস্থিত ছিলেন বা ইতিহাসের সাক্ষী হলেন বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও এই প্রজেক্টের প্রাণপুরুষ জাহিদ মিন্টু, বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির সভাপতি নাজমুল হাসান মানিক, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ শাহ আলম, বিএম বেলাল, ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য খোকন মোশাররফ এবং কার্যকরি সদস্য তাজু মিয়া।

দেশ প্রতিনিধির এক প্রশ্নের জবাবে জাহিদ মিন্টু জানান, এই প্রজেক্ট নিয়ে আমরা কমিউনিটির কাছে গিয়েছিলাম। সাংবাদিক বন্ধুদের স্মরণাপন্ন হয়েছিলাম। আল্লাহর অশেষ রহমান এবং সবার দোয়ায় আমরা এই প্রজেক্ট ক্লোজ করেছি। আমরা পুরো অর্থই মালিককে বুঝিয়ে দিয়েছি। তারা আমাদের কাছে আর কোনো অর্থ পাবে না। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগামী জানুয়ারি থেকে প্রজেক্টের ডেভেলপমেন্টের কাজ শুরু করবো। সেই সঙ্গে বিক্রিও শুরু করবো। আমরা অনেক সংগঠনকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, এখন থেকে তাদের কাছে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারবো। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই প্রজেক্টের ব্যয় প্রায় ২০ মিলিয়ন ডলারের মতো হবে। তিনি আরো জানান, প্রজেক্ট যেহেতু ক্লোজ করেছি, অচিরেই সংবাদ সম্মেলন করে পুরো বিষয়টি কমিউনিটির সামনে উপস্থাপন করবো।

শেয়ার করুন