৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ১১:৪৪:১৮ অপরাহ্ন


কাজের জায়গায় মুসলিমবিরোধী বৈষম্য চরমে
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-০৫-২০২৫
কাজের জায়গায় মুসলিমবিরোধী বৈষম্য চরমে প্রতীকী ছবি


যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম, আরব ও ফিলিস্তিনি কর্মীদের বিরুদ্ধে বৈষম্য ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এমনই চিত্র উঠে এসেছে। আমেরিকান-ইসলামিক সম্পর্ক কাউন্সিল (কেয়ার) জানায়, ২০২৪ সালে সংগঠনটি কর্মক্ষেত্রভিত্তিক বৈষম্যের ১ হাজার ৩২৯টি অভিযোগ পেয়েছে, যা শিক্ষাখাতসহ অন্যান্য সব খাতের তুলনায় সর্বাধিক। কেয়ারের ৩০ বছরের ইতিহাসে এটি কর্মসংস্থান বৈষম্যসংক্রান্ত সর্বোচ্চ রেকর্ড, যা স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দেয় মুসলিম, আরব এবং ফিলিস্তিনি কর্মীদের প্রতি বৈষম্য একটি মারাত্মক সংকটে পরিণত হয়েছে। এই প্রতিবেদনটি যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে ক্রমবর্ধমান ইসলামোফোবিয়া ও ফিলিস্তিনবিরোধী মনোভাব কীভাবে কর্মক্ষেত্রে দ্বিমুখী নীতি ও সাংস্কৃতিক দমন নীতিকে উসকে দিচ্ছে, তার প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

‘টার্মিনেটেড : এমপ্লয়মেন্ট ডিসক্রিমিনেশন এতোটি কোর অব ইসলামোফোবিয়া অ্যান্ড অ্যান্টি-প্যালেস্টিনিয়ান রেসিজম’ শিরোনামের এই প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে গত ৭ মে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে কেয়ারের কাছে কর্মক্ষেত্রভিত্তিক বৈষম্যের ১ হাজার ৩২৯টি অভিযোগ জমা পড়েছে, যা শিক্ষাখাতসহ অন্যান্য সব খাতের তুলনায় বেশি। এই সংখ্যাটি সংগঠনটির ৩০ বছরের ইতিহাসে কর্মসংস্থান বৈষম্যসংক্রান্ত সর্বোচ্চ অভিযোগের রেকর্ড। এই প্রতিবেদনটি যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে ক্রমবর্ধমান ইসলামোফোবিয়া ও ফিলিস্তিনবিরোধী মনোভাব কীভাবে কর্মক্ষেত্রে দ্বিমুখী নীতি ও সাংস্কৃতিক দমনকে উসকে দিচ্ছে, তার প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এটি স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দেয়, মুসলিম, আরব এবং ফিলিস্তিনি কর্মীদের প্রতি বৈষম্য একটি মারাত্মক মাত্রায় পৌঁছেছে।

কেয়ারের গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি পরিচালক কোরি সায়লার বলেন, যেসব কর্মস্থল এতোদিন কর্মীদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিচয় প্রকাশে উৎসাহ দিতো, এখন তারাই মুসলিম বা ফিলিস্তিনি পরিচয়ধারী কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে, যদি তারা ফিলিস্তিনের পক্ষে সহানুভূতি প্রকাশ করে। তিনি এটিকে দ্বিমুখী নীতি হিসেবে উল্লেখ করেন। প্রতিবেদনে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বৈষম্যের ধরন স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। প্রথমত, মুসলিম, ফিলিস্তিনি ও আরব কর্মীদের ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক পরিচয় প্রকাশ করতে উৎসাহিত করা হলেও সেই প্রকাশ যেন ইসরায়েল সরকারের সমালোচনায় পরিণত না হয়— এমন সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, যেসব অফিস আগে ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটারের মতো সামাজিক আন্দোলনের প্রতি প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছিল, তারাই এখন গাজায় চলমান মানবিক সংকট নিয়ে সামান্য সহানুভূতিপূর্ণ মন্তব্য করায় কর্মীদের শাস্তি দিচ্ছে বা বরখাস্ত করছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এই বৈষম্যের ঘটনা শুধু একটি নির্দিষ্ট খাতে সীমাবদ্ধ নয়। প্রযুক্তি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং গণমাধ্যম ও শিল্পখাতে বিস্তৃতভাবে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। অনেক কর্মী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সৃষ্ট বৈরী পরিবেশে চাকরি ছেড়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন, আবার কেউ কেউ মানসিক চাপের মুখে পড়ে চাকরি ছেড়ে দিচ্ছেন, যার ফলে তারা আইনি সহায়তা পাওয়ার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন।

প্যালেস্টাইন লিগ্যালনামে একটি সংগঠন জানিয়েছে, ২০২৪ সালের শুরু থেকে নভেম্বর পর্যন্ত তারা ৬০৪টি কর্মসংস্থান-সম্পর্কিত অভিযোগ পেয়েছে, যা পরিস্থিতির আরো বিস্তৃত ও জটিল রূপ তুলে ধরে।

কেয়ারের ২০২৫ সালের আরেকটি বার্ষিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ইসলামোফোবিয়া এখন ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর নিয়মিত হস্তক্ষেপ ও দমন-পীড়নই এই বৈষম্যের অন্যতম চালিকাশক্তি বলে উল্লেখ করেছে সংগঠনটি।

সার্বিকভাবে, কেয়ারের এই প্রতিবেদনটি যুক্তরাষ্ট্রে ক্রমবর্ধমান ইসলামোফোবিয়া ও ফিলিস্তিনবিরোধী বৈষম্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। কর্মক্ষেত্র, যা একসময় বৈচিত্র‍্য ও অন্তর্ভুক্তির প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হতো, এখন অনেক মুসলিম, আরব ও ফিলিস্তিনপন্থী কর্মীর জন্য শঙ্কার কারণ হয়ে উঠেছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সাংস্কৃতিক পরিচয় জানানোর মতো মৌলিক অধিকার আজ চাকরি হারানোর কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সাংস্কৃতিক পরিচয় জানানোর মতো মৌলিক অধিকার এখন চাকরি হারানোর কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

শেয়ার করুন