৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ১১:৫০:১৯ পূর্বাহ্ন


নীল অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অর্জন কী
ভুল সিদ্ধান্তে বঙ্গোপসাগর পরাশক্তির সংঘাতের থিয়েটার হয়ে যেতে পারে
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-০৩-২০২৩
ভুল সিদ্ধান্তে বঙ্গোপসাগর পরাশক্তির সংঘাতের থিয়েটার হয়ে যেতে পারে


অনেক ঢাকঢোল পিটিয়ে বঙ্গোপসাগরে প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার, ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধী নিষ্পত্তি উদযাপিত হয়েছে। তখন বলা হয়েছে আর হচ্ছে দেশ এনেছেন বঙ্গবন্ধু, সাগর জিতেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। সাত বছর ৯ বছর হয়ে গেলো ভারত, মিয়ানমারের সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তির। কিন্তু নীলজলের নিচে লুকিয়ে থাকা সম্পদ সামান্য অর্জন হয়নি এখনো। আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়, গভীর সাগর পর্যন্ত বাংলাদেশের বিশাল সাগরসীমার ওপর অধিকার বড় অর্জন। বাংলাদেশ কক্সবাজারের নিম্নাঞ্চলে যে অঞ্চলের ওপর অধিকার হারিয়েছে, সেখানেসহ বেশকিছু সাগর ব্লকে গ্যাস তেল আবিষ্কার করেছে মিয়ানমার। রাখাইন অঞ্চল থেকে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়ার অন্যতম কারণ এই গ্যাস-তেল আবিষ্কার। ভারত তাদের সাগর অংশেও গ্যাস আবিষ্কার করেছে।

অথচ বাংলাদেশ এতোদিনেও গ্যাস-তেল উত্তোলনের জন্য উৎপাদন বণ্টন চুক্তির অধীনে দরপত্র আহ্বান করতে পারেনি। ভুল কৌশলের কারণে একে একে  চলে গেছে সান্তোস, কনোকো ফিলিপ্স, দাইয়ু পস্কো। ভিন্ন উদ্দেশে ঝুলে আছে  ওএনজিসি। তথ্য অপ্রতুলতার অজুহাত তুলে সাগর অনুসন্ধান নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। দীর্ঘসময় অতিবাহিত করে উৎপাদন বণ্টন চুক্তি আপডেট করা হলেও ভূরাজনীতির প্রভাবে দরপত্র আহ্বান অনুমতি দেয়া হচ্ছে না। ২০১৬-১৭ বাংলাদেশ সাগরসীমা সন্নিহিত মিয়ানমারে কর্মরত অস্ট্রেলিয়ান কোম্পানি উডসাইড পেট্রোলিয়াম গভীর সাগরে অনুসন্ধানের জন্য পঁচিটি ব্লকে প্রস্তাব দিলেও প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের একজন আমলার প্রভাবে আমল দেয়া হয়নি। এখন ভূরাজনৈতিক কারণে বিশ্বের প্রভাবশালী ও শক্তিধর এক দেশ দরপত্র ছাড়াই মিয়ানমার সংলগ্ন ব্লকগুলো মার্কিন কোম্পানিগুলোকে ইজারা দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করছে। কি করবে বাংলাদেশ? নির্বাচনের বছরে ভূরাজনীতির প্রভাব এড়িয়ে বাংলাদেশ ২০২৩ সাগরে গ্যাস অনুসন্ধান নিয়ে কিছু করবে বলে মনে হয় না। তাহলে সাগর থেকে কিছু পেতে কত বছর সময় লাগবে?   

অথচ ১৯৭৪ স্বাধীনতা অর্জনের কয়েক বছর পরেই বঙ্গবন্ধু সরকার সীমিত জনবল নিয়ে সাগরে এই অঞ্চলের প্রথম দেশ হিসেবে তেল অনুসন্ধান শুরু করতে পেরেছিলেন। 

প্রশ্ন জাগে ১৯৭৪-৭৬ আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানিগুলোর প্রাপ্ত তথ্য, সান্তোস, কনোকো ফিলিপ্স, দায়ু পস্কোর তথ্যগুলো নিয়ে কেন বসে আছে পেট্রোবাংলা? কোনো কালো হাতের ইশারায় মাল্টি ক্লায়েন্ট সার্ভে উদ্যোগ প্রলম্বিত হয়েছে? আজ যে জ্বালানি সংকটে পুড়ছে দেশ তার মূলে রয়েছে সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যর্থতা। 

শুধু তেল গ্যাস নয় গভীর সাগরে আছে বিপুল মৎস্যসম্পদ, জলজসম্পদ। এগুলো অনুসন্ধানের জন্য গঠিত নীল অর্থনীতি সেল পুরোপুরি ব্যর্থ। জাতির জন্য দুর্ভাগ্য আমলাদের অভয় অরণ্য নীল অর্থনীতি সেল কিছুই করেনি।  

জানি না বর্তমান অথবা অনাগত সরকার ভূরাজনীতির প্রভাব কাটিয়ে অচিরে সাগরে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করতে পারবে কি না? তবে অনাহূত কোনো কোম্পানির প্রস্তাবে রাজি হলে বঙ্গোপসাগর পরাশক্তির সংঘাতের থিয়েটার হয়ে যেতে পারে। আর সেটা সত্যিই সত্যি হলে নীল অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অর্জন শূন্য মহাশূন্য থাকার সম্ভাবনা প্রকট আকার ধারণ করবে।

শেয়ার করুন