৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০২:২০:৪৪ অপরাহ্ন


‘তোমরা একটা মুসলিম দেশ বেছে নাও, কেন খিস্ট্রান দেশে আসো’
স্ট্যামফোর্ড শহরে মসজিদের সামনে বিদ্বেষমূলক হামলার অভিযোগ
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০৮-২০২৫
স্ট্যামফোর্ড শহরে মসজিদের সামনে বিদ্বেষমূলক হামলার অভিযোগ ইসলামিক কালচারাল সেন্টার অব নিউইয়র্ক, স্ট্যামফোর্ড, কনেকটিকাট


কনেকটিকাটের স্ট্যামফোর্ড শহরের ওয়াশিংটন বুলেভার্ডে অবস্থিত ইসলামিক কালচারাল সেন্টার অব নিউইয়র্ক মসজিদের বাইরে গত ৯ আগস্ট রাতে এক মুসলিম বিদ্বেষমূলক ঘটনার ঘটনা ঘটে। এ সময়, মসজিদ থেকে নামাজ শেষ করে বের হচ্ছিলেন মুসলিম পরিবারসহ শিশুরা। সেই সময় একটি এসইউভি গাড়ির মধ্যে থাকা এক ব্যক্তি হঠাৎ করে তাদের ওপর কুরুচিপূর্ণ ও বিদ্বেষমূলক ভাষায় চিৎকার শুরু করেন। মুসলিম সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা ও শান্তিপূর্ণ উপাসনার পরিবেশ ভঙ্গের এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে কনেকটিকাটের মুসলিম কমিউনিটি দ্রুত ও জোরালো তদন্তের দাবি তুলেছে। ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শীর মোবাইল ফোনে ধারণকৃত ভিডিওতে দেখা যায়, ওই ব্যক্তি ইসলাম ধর্ম এবং নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর বিরুদ্ধে অপমানজনক ও বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য দেন। ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, এখান থেকে চলে যাও... বিশ্বের ৫৬টি মুসলিম দেশ আছে, তোমরা একটা বেছে নাও। কেন তোমরা ক্যাথলিক দেশের মধ্যে আসো? যুক্তরাষ্ট্র একটি খ্রিস্টান দেশ।

কনেকটিকাটের কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনসের চেয়ারম্যান ফারহান মেমন এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, এটি ছিল উদ্দেশ্যমূলক এবং পরিকল্পিত মৌখিক হামলা, যা নিরীহ মুসলিম পরিবার ও বিশেষ করে শিশুদের ওপর মানসিক অত্যাচার চালানোর জন্য করা হয়েছে। যারা শান্তিপূর্ণভাবে নামাজ থেকে বের হচ্ছিল, তাদের এই ধরনের হয়রানি ভয়ংকর এবং গ্রহণযোগ্য নয়। ঘটনার পর স্ট্যামফোর্ড পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়। পুলিশ ১০ আগস্ট রবিবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে মসজিদের সিসিটিভি ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীর মোবাইল ভিডিও সংগ্রহ করে। পুলিশ বিভাগ ১১ আগস্ট সোমবার এক বিবৃতিতে জানায়, তারা ঘটনাটির প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছে এবং স্টেট অ্যাটর্নির অফিসের সঙ্গে পরামর্শের মাধ্যমে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে ইতোমধ্যে শনাক্ত করা হয়েছে এবং পুলিশ জনগণকে আরও তথ্য পেলে মেজর ক্রাইম ইউনিটে যোগাযোগ করার আহ্বান জানিয়েছে।

ফারহান মেমন আরো জানান, তিনি কনেকটিকাটের ইমার্জেন্সি সার্ভিসেস ও পাবলিক প্রটেকশন বিভাগের কমিশনার রোনেল হিগিনসের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন। হিগিনস জানিয়েছিলেন, প্রয়োজন হলে রাজ্যের হেট ক্রাইম ইউনিট স্ট্যামফোর্ড পুলিশের তদন্তে সহায়তা করবে। মেমন বলেন, এসইউভিতে থাকা ব্যক্তিকে অবশ্যই জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত। আমরা আশা করি পুলিশ বিষয়টি ঘৃণামূলক অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় কঠোর ব্যবস্থা নেবে। সাম্প্রতিক সময়ের এ ধরনের বিদ্বেষপূর্ণ ঘটনা মোকাবিলায় প্রশাসনের ভূমিকা প্রসঙ্গে মেমন স্ট্যামফোর্ডের মেয়র ক্যারোলিন সিমন্সের সঙ্গেও কথা বলেছেন। মেয়র জানিয়েছেন, তিনি শিগগিরই মসজিদের সঙ্গে বৈঠকের আয়োজন করবেন। তবে মেমন মনে করেন, বর্তমান সময়ে যখন ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বিশেষ করে মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তখন প্রশাসনের আরো দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া উচিত। তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডার কুইবেক সিটি, নিউজিল্যান্ডসহ বিশ্বজুড়ে মসজিদ ও উপাসনালয়ে হামলার দুসহ পরিণতি দেখেছি। তাই যখন এমন একটি ঘটনা ঘটে, তখন তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।

মেমন আরো বলেন, আমাদের রাজ্যে ঘৃণামূলক অপরাধবিরোধী আইন রয়েছে, যেগুলো মুসলিম কমিউনিটির জন্যও সমানভাবে প্রয়োগ করা উচিত। আইনকে কার্যকর করতে না পারলে, আমাদের সমাজে ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও নিরাপত্তা বিধ্বস্ত হবে। মসজিদ কমিউনিটির সদস্যরা এ ঘটনার পর উদ্বেগ ও আতঙ্ক প্রকাশ করেছেন এবং তাদের নিরাপত্তার বিষয়ে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করছে। তারা আশ্বাস চাচ্ছেন যেন ধর্মীয় উপাসনালয়গুলো শান্তিপূর্ণ ও সুরক্ষিত থাকে। স্ট্যামফোর্ড পুলিশের তদন্ত অব্যাহত রয়েছে এবং তারা জনগণের সহযোগিতা কামনা করেছে যাতে ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটন ও দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

শেয়ার করুন