৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ১১:৫৫:১৩ পূর্বাহ্ন


আদালতের আদেশ না মেনে পুরাকীর্তি গুড়িয়ে দেয়া হলো
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-০৯-২০২৪
আদালতের আদেশ না মেনে পুরাকীর্তি গুড়িয়ে দেয়া হলো


আদালতের আদেশ অমান্য করে আবারো গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো খোদ রাজধানীর পুরান ঢাকার পুরাকীর্তি বড় কাটরার একাংশ। 

যেসমেয় ভাঙ্গা হলো..

পুরান ঢাকার চকবাজারে অবস্থিত বড় কাটরা। পুরান ঢাকা পুরার্কীতি গুড়িয়ে দিতে সব সময় দেখা যায় একটি সময়কে বেছে নেয়। এবার বড় কাটরার একটি অংশ গুড়িয়ে দেয়া হয় উত্তাল আগস্টে ছাত্র জনতার আন্দোলনে টালমাটাল পরিস্তিতিতে। খোঁজ নিয়ে জানা যায় আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ভাঙার কাজ শুরু হয়। ব্যক্তিমালিকানাধীন বাড়িটি কাটরার দেয়ালের সঙ্গে লাগোয়া। আর সেই দেয়ালের সাথে লাগোয়া একটি বিরাট অংশই এবার গুড়িয়ে দিয়ে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, দেয়ালের এ-ই অংশে ছিল মুঘল আমলে বানানো তিনটি ঘর। এ ঘটনায় গত ২৯ আগস্ট রাজধানীর চকবাজার থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। কিন্তু তার আগেই মোঘল আমলে তৈরি দেয়ালটি গুড়িয়ে দেয়া হয়। ওই দেয়ালের একাংশের ওপর ভবনটি ছিল। এবার ভাঙা শেষে সবকিছু সরিয়ে ফেলা হয়েছে। সরজমিয়ে গিয়ে দেখা যায় ঘটনার পরও জায়গাটি সিলগালা থাকায় কেউ প্রবেশ করতে পারেনি। 

এদিকে বড় কাটরা রক্ষার আহবান জানানোর পাশাপাশি পুরান ঢাকার পুরার্কীতি আর এসব বিষয়গুলির পাশাপাশি রাজধানী ঢাকার মোগল ঐতিহ্য বড় কাটরা রক্ষার আহবান জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে আরবান স্টাডি গ্রুপ, ঢাকা। গত ৪ সেপ্টেম্বর বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটের সাগর-রুনি হলে ’মোঘল স্থাপনা বড় কাটরায় ধ্বংসযজ্ঞ : পুরান ঢাকায়- সাংস্কৃতিক বিপর্যযয়ের অশনি সংকেত’ বিষয়ক প্রেস কনফারেন্স আরবান স্টাডি গ্রুপের উদ্যোগে আয়োজন করা হয়। প্রেস ব্রিফিংয়ে আরবান স্টাডি গ্রুপ থেকে বক্তব্য রাখেন প্রধান নির্বাহী স্থপতি তাইমুর ইসলাম। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আরবান স্টাডি গ্রুপের স্থপতি আফরিনা ইসলাম এবং ইউএসজি ভলানটিয়ার দিপাংকর হাওলাদার, মোঃ রাফিউর রহমান, এখলাসুর রহমান ফাইয়াজ। 

স্থপতি তাইমুর ইসলাম বড় কাটরায় একাংশ ধ্বংসের ঘটনার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঘটনার পর বেশ কয়েকদিন ধরে, এ বিষয়ে আমরা রাজউক ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পাশাপাশি প্রত্বতত্ত্ব বিভাগকে অবহিত করার পরেও একটি জিডি ছাড়া এপর্যন্ত কোন আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। তিনি আশা প্রকাশ করেন বড় কাটরা সংরক্ষণ কল্পে একটি এক্সপার্ট কমিটি গঠন করে বিভিন্ন হোল্ডিং এর মালিকানা, ভূমি ব্যবহার (১২৭৪ ০০) ইত্যাদি বিষয় নিয়ে যে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে তা নিরসন করে, সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।। তিনি বলেন, বিগত ১৫ বছর ধরে স্বৈরাচার সরকারের আমলে একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা (জাহাজ বাড়ি, নিলামঘর, ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল, খামারবাড়ি, ঢাকা জেলা পরিষদ) ভাঙ্গার ক্ষেত্র সরকারিভাবে স্বেচ্ছাচারিতা, আইনের অপব্যবহার ও কারসাজি করে, অপশক্তিকে মদদ দিয়ে ঢাকার অনেক স্থাপনা ধ্বংস করার পথ বের করা হয়েছে। জাহাজ বাড়ি ঘিরে সরকারি বিভিন্ন পর্যায়ে প্রতারণামূলক যে ছলচাতুরি ব্যবহার করা হয়েছে । তিনি দাবি জানান, হাজি সেলিম এর বহুতল টাওয়ার একটি অবৈধ্য স্থাপনা হিসেবে অপসারণ করে, সরকারের ঐতিহ্য সংরক্ষণের প্রতি আন্তরিকতা প্রকাশ করবে। তিনি আরো বলেন, ঢাকা সিটি করপরেশনের আওতায় একটি ইন্ডিপেন্ডেন্ট কমিশন গঠন করে ঢাকা মহানগরীর ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার তালিকা চূড়ান্ত করা প্রয়োজন। তিনি আশা প্রকাশ করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্যোগে পুরান ঢাকার ঐতিহ্য সংরক্ষণ করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ঢাকা মহানগরীর সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করা হবে।

শেয়ার করুন