মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে একের পর এক এমন সিদ্ধান্ত ঘোষণা করছে যেগুলো বিশ্ব অর্থনীতিকে বিশাল চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। এমনিতেই মধ্যপ্রাচ্য বিশেষত গাজা প্যালেস্টাইন নিয়ে ট্রাম্পের ইসরাইয়েল গণহত্যার পৃষ্ঠপোষকতার নীতি। ইসরাইলের পক্ষ নিয়ে ইরানের বিরুদ্ধে সরাসরি আক্রমণ বিশ্ব জুড়ে বিতর্কিত। এর উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সমতার দোহাই দিয়ে বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি দ্রব্যের উপর একশ ছোয়া আমদানি শুল্ক আরোপের ঘোষণা অনেক উন্নয়নশীল দেশের জন্য মারাত্মক চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রপ্তানি গন্তব্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক। এখন ১৫% আমদানি শুল্ক। বর্তমান অবস্থায় নিজেদের দেশে না বৈরী পরিস্থিতিতে এই সুলকেই রপ্তানি করতে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশের রপ্তানি কারকরা। এখন ষোষণা হয়েছে জুলাই ৩১র মধ্যে আলোচনায় সমাধান না হলে ১ আগস্ট থেকে অতিরিক্ত ৩৫% হরে শুল্ক আরোপ হবে। জানা গেছে এখন পর্যন্ত আলোচনায় সমাধান হয় নি। ইতিমধ্যেই অনেক আমদানি কারক পণ্যের আমদানি আদেশ স্থগিত করেছে। ১৫+৩৫= ৫০% আমদানি শুল্ক আরোপিত হলে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য মর্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি বাজার হারাবে সন্দেহ নেই। বাংলাদেশের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ভিয়েতনাম, ভারত, শ্রীলংকা সুবিধাজনক শুল্ক সুবিধা পেয়ে এগিয়ে যাবে। বলা হচ্ছে চলতি আলোচনা শেষে বাণিজ্য চুক্তি হলে সেটি গোপন রাখা হবে। ২০২৬ থেকে বাংলাদেশ মদ্ধম আয়ের দেশে পরিণত হলে এমনিতেই ২০২৯ অনেক দেশে শুল্ক সুবিধা হারাবে। বাংলাদেশ বিকল্প রপ্তানি বাজার নিশ্চিত করতে বার্থ হলে অধিকাংশ তৈরি পোশাক কারখানা, টেক্সটাইল শিল্প বন্ধ হয়ে যেতে পারে, বিপুলসংখক জনগোষ্ঠী চাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে যাবে। দেশের অর্থনীতি মহা সংকটে পড়বে।
দেশে এখন অনির্বাচিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে। এমনিতেই নানা সংকটে শিল্প বাণিজ্য খাত সংকটে। ব্যাঙ্ক ঋণের উচ্চ হার, টাকার অবমূল্যায়ন, জ্বালানি বিদ্যুৎ সংকট এবং মুদ্রা স্ফীতির কারণে অনেক ক্ষুদ্র শিল্প বন্ধ হয়ে গাছে। সকল শিল্প প্রতিষ্টান নানা বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করে কোনো রকম টিকে আছে। এমতাবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি আমদানি কর মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে আঘাত হানবে।
বাংলাদেশ সরকারের উচিত সকল রাজনৈতিক দল শিল্প উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা। বাংলাদেশকে তার রপ্তানি পণ্যকে বহুমুখী করতে হবে। চামড়া, পাটজাত পণ্য, কুঠির শিল্পকে যথাযথ প্রণোদনা দিয়ে বিকশিত করতে হবে। গ্যাস বিদ্যুৎ সংকট দ্রুত কার্যকরি সমাধান করতে হবে। বিনিয়োগ প্রদোনা আরো উদার আর বহুমুখী করতে হবে।
কাজগুলো কিন্তু অনির্বাচিত অস্থায়ী সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। যথা শীঘ্র জনগণ এবং সকল স্টেকহোল্ডারদের আস্থায় এনে নির্বাচন অনুষ্ঠান এখন জরুরি।
অবস্থানপত্র পাঠাল ঢাকা, বৈঠকের সময় এখনও জানায়নি ওয়াশিংটন
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্ভাব্য শুল্ক চুক্তি নিয়ে গত ২২ জুলাই মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির কার্যালয়ে (ইউএসটিআর) নিজেদের অবস্থানপত্র পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। ওয়াশিংটনের সঙ্গে ঢাকা কী কী বিষয়ে একমত হতে পারবে, সেগুলো অবস্থানপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে আলোচনার জন্য তৃতীয় দফা বৈঠকের সময় এখনও জানায়নি ওয়াশিংটন। আগামী সপ্তাহেই বৈঠকের সময় চেয়ে ২২ জুলাই আরেক দফা অনুরোধ জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর আগে অবশ্য ইউএসটিআর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে, সংস্থাটির কর্মকর্তারা এখন এত ব্যস্ত যে তাদের পক্ষে সময় বের করা কঠিন। ফলে বাংলাদেশ যেন তাদের কাছ থেকে সময় নিয়েই যুক্তরাষ্ট্রে যায়, এটি ইউএসটিআরের চাওয়া।
বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, সম্ভব্য শুল্ক চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থানপত্র পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে আলোচনার জন্য আগামী সপ্তাহেই বৈঠকের সময় চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ই-মেইল পাঠানো হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এর আগেও তৃতীয় দফার বৈঠকের সময় চাওয়া হলেও এখন পর্যন্ত তাতে সাড়া পাওয়া যায়নি।
এদিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী ১ আগস্টের মধ্যে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র অন্তবর্তীকালীন কোনো বাণিজ্য চুক্তি হচ্ছে না। সেপ্টেম্বর অথবা অক্টোবরে চুক্তির ঘোষণা হতে পারে। অর্থাৎ আলোচনায় অচলাবস্থা এখনও কাটেনি। ভারতীয় প্রতিনিধি দল যুক্তরাষ্ট্রে পঞ্চম দফা আলোচনা শেষে ১৯ জুলাই শনিবার দেশে ফিরেছে। আগস্টের মাঝামাঝি মার্কিন প্রতিনিধি দলের ভারতে আসার কথা। উভয় পক্ষই অস্থায়ী চুক্তি সই করতে দ্রুত কাজ করছে। লক্ষ্য হচ্ছে, ১ আগস্টের মধ্যে চুক্তি না হলেও যেন সমঝোতা হয়।