৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ৬:৫৪:৪৫ অপরাহ্ন


২০২৫-২৬ অর্থবছর
প্রস্তাবিত বাজেট ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকার
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৪-০৬-২০২৫
প্রস্তাবিত বাজেট ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকার অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ


২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। সোমবার (২ জুন) বিকাল ৩টায় বাংলাদেশ টেলিভিশনে বাজেট বক্তৃতা শুরু করেন তিনি। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা- যা চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম।

প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। বাজেট ঘাটতি ২ লাখ ৬৬ হাজার কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং এডিপি ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি বর্তমান সরকারের দৃষ্টিতে সংকোচনমূলক বাজেট।

এর আগে সোমবার (২ জুন) সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার দফতরে অনুষ্ঠিত হয় উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠক। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠকে প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন শেষে তাতে সই করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এরপর বাজেট ডকুমেন্টস নিয়ে রামপুরার বিটিভি ভবনে যান অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। সেখানে রেকর্ড করা হয় ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট উপস্থাপনা। যা বিকাল ৩টায় সম্প্রচার শুরু করে বাংলাদেশ টেলিভিশন।

২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সুদ পরিশোধের জন্য এক লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আগামী অর্থবছরে বেতন, ভাতা ও ভর্তুকির মতো খরচ চলতি অর্থবছরের মতোই অপরিবর্তিত রয়েছে অর্থ উপদেষ্টার প্রস্তাবিত বাজেটে। বাজেট ঘাটতি জিডিপির পাঁচ শতাংশের নিচে রাখা হয়েছে। অর্থ উপদেষ্টা তার বাজেট বক্তৃতায় বলেছেন, ঋণের সুদ পরিশোধে খরচ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি রাজস্ব আদায় কম হওয়ায় বাজেটের আকার ছোট করতে বাধ্য হয়েছে সরকার।

সরকার সব পণ্যে ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বর্তমানে অসমভাবে ভ্যাট বসানো রয়েছে। কর ছাড় কমিয়ে রাজস্ব বোর্ড নতুন কর ব্যবস্থা ও প্রশাসনিক উন্নতির মাধ্যমে অতিরিক্ত ৩০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। আগামী অর্থবছরের জন্য রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় তা ৭ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি।

যেহেতু বর্তমানে সংসদ কার্যকর নেই, সেহেতু বাজেটের ওপর জুন মাসজুড়ে সংসদ সদস্যদের সাধারণ আলোচনার সুযোগ নেই বিধায় এ বছর সাধারণ নাগরিকদের কাছ থেকে বাজেট সম্পর্কিত মতামত নেবেন অর্থ উপদেষ্টা। দেশের যেকোনও নাগরিক বাজেট সম্পর্কিত যেকোনও মতামত যেকোনও উপায়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পৌঁছাতে পারবেন। এসব মতামত একত্রিত করে যা গ্রহণ করা সম্ভব, তা তিনি বাজেটে যুক্ত করে আগামী ২৩ জুন অনুষ্ঠেয় উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উপস্থাপন করবেন চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য। উপদেষ্টা পরিষদের ওই বৈঠকে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট চূড়ান্ত অনুমোদনের পরে তা রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হবে। ১ জুলাই ২০২৫ থেকে বাজেট কার্যকর হবে। 

কৃষিতে ভর্তুকি দিতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে ২৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। তবে আগামী বাজেটের আকার বাড়বে না জানিয়ে এ বাবদ চলতি অর্থবছরের সমান ১৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ভর্তুকিতে বরাদ্দ না বাড়ালে তারা বিপাকে পড়বে। কারণ, ইতোমধ্যে সুদসহ ভর্তুকির বকেয়া অর্থ দাবি করছে ঠিকাদাররা। ভর্তুকিতে বরাদ্দ বাড়াতে তাই দেনদরবার করছে কৃষি মন্ত্রণালয়।

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে খাদ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। চলতি অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের তুলনায় আগামী অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ৯ গুণের বেশি বাড়িয়ে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা করা হয়েছে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন এবং খাদ্য মজুত ও বিতরণ ব্যবস্থা সুসংহত করতেই সরকার এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। একইভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের মতো জুলাই আন্দোলনের আহত সরকারি গেজেটভুক্ত জুলাইযোদ্ধাদের আয়করে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে এই বাজেটে। নানা মহলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বাড়ানো হয়েছে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মতো আগামী অর্থবছরেও বাজেট ঘাটতি মোট দেশজ উৎপাদনের ৫ শতাংশের নিচে রাখা হয়েছে। বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বলছে, চলতি অর্থবছরের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশের নিচে থাকবে। তবে সরকার আগামী অর্থবছরের জিডিপির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য কিছুটা কমিয়ে এরই মধ্যে ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ করা হয়েছে।

বিবিএস সূত্রে জানা গেছে, মূল্যস্ফীতি এখনও ৯ শতাংশের ওপরে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই নিম্ন আয়ের মানুষ বেশ চাপে রয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিল শেষে সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ। এক মাস আগে অর্থাৎ মার্চে ছিল ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ। ২০২৪ সালের নভেম্বরে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এরপর চলতি বছরের জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতির হার কমে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ হয়। ফেব্রুয়ারিতে তা আরও কমে হয় ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ।

এমন উচ্চ মূল্যস্ফীতি থেকে আগামী অর্থবছরে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেওয়ার চেষ্টা করছে সরকার। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা বলেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। সেই সঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ১ লাখ ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

বাজেট অনুমোদন 

২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত জাতীয় বাজেট, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট এবং অর্থ-বিল ২০২৫-২৬ উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন করা হয়েছে। সোমবার (২ জুন) সকালে তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠকে বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে শুরু হয়ে দুপুর সাড়ে ১২টায় শেষ হয় উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠক। অনুমোদন হয়েছে ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকার বাজেট। এটি হবে দেশের ৫৪তম বাজেট। সোমবার বিকাল ৩টা থেকে পূর্ব-রেকর্ড করা অর্থ উপদেষ্টার বাজেট ভাষণটি বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) এবং বাংলাদেশ বেতারের মাধ্যমে সম্প্রচারিত হয়।

শেয়ার করুন