মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের সালিসবুরি শহরে এক মুসলিম পরিবারকে ধর্মীয় বিদ্বেষের কারণে পাসপোর্ট সেবা না দেওয়ার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের ডাক বিভাগ (ইউএসপিএস) আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে। পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন, হিজাব পরিহিতা স্ত্রীসহ পরিবারের দৃশ্যত মুসলিম পরিচয়ের কারণে তাদের উপেক্ষা করা হয় এবং নির্ধারিত অ্যাপয়েন্টমেন্ট থাকা সত্ত্বেও সেবা দেওয়া হয়নি। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুসলিম নাগরিক অধিকার সংগঠন কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস (কেয়ার) বিষয়টিকে বৈষম্যমূলক আচরণ হিসেবে চিহ্নিত করে সালিসবুরি পোস্ট অফিসের কর্মীদের জন্য বাধ্যতামূলক সাংস্কৃতিক সচেতনতা ও পক্ষপাতমুক্ত আচরণবিষয়ক প্রশিক্ষণের দাবি জানিয়েছে।
গত ১৪ এপ্রিল মেরিল্যান্ডের সালিসবুরি সিটির এক মুসলিম পরিবার তাদের সদ্যজাত পুত্রের জন্য সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে সালিসবুরি পোস্ট অফিসে নির্ধারিত পাসপোর্ট অ্যাপয়েন্টমেন্টে উপস্থিত হন। পরিবারের স্ত্রী সদস্য হিজাব পরিহিতা হওয়ায় তারা দৃশ্যত মুসলিম পরিচয়ে চিহ্নিত ছিলেন। অভিযোগ অনুযায়ী, নির্ধারিত সময় থাকা সত্ত্বেও পোস্ট অফিসের কর্মীরা তাদের উপেক্ষা করে পরে আসা গ্রাহকদের সেবা প্রদান করেন এবং ভুল তথ্য দিয়ে তাদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট অস্বীকার করেন। একপর্যায়ে পরিবারটি সেবা না পেয়েই ফিরে যেতে বাধ্য হয়। পরে ঘটনার একটি অংশ সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়ে এবং পরিবারটি ইউএসপিএসের কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করে। ইউএসপিএসের অভিযোগ ও অনুসন্ধান কর্মকর্তা স্টেফানি মোরো একটি চিঠিতে তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা দুঃখিত যে আপনি আমাদের পোস্ট অফিসে একটি নেতিবাচক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন। আমাদের কর্মীদের সদয় ও পেশাদার আচরণের প্রত্যাশা থাকে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আপনি সে সেবা পাননি। এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা না ঘটে। তবে ইউএসপিএস ঠিক কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, তা স্পষ্ট করে জানানো হয়নি।
কেয়ার মেরিল্যান্ড পরিচালক জাইনাব চৌধুরী বলেন, আমরা ইউএসপিএসের দুঃখ প্রকাশকে স্বাগত জানাই, তবে এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সালিসবুরি পোস্ট অফিসের কর্মীদের জন্য সাংস্কৃতিক সচেতনতা ও পক্ষপাতমুক্ত আচরণবিষয়ক প্রশিক্ষণ অপরিহার্য। কোনো পরিবারকেই তাদের ধর্ম, জাতি বা পোশাকের কারণে মৌলিক সেবা থেকে বঞ্চিত করা উচিত নয়। পরিবারের পিতা করম ইদ্রিস ইউএসপিএসকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, আমরা আমাদের সেবার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছি এবং আমার স্ত্রীর হিজাব পরা অবস্থার কারণে আমরা লক্ষ্যবস্তু বলেই মনে হয়েছে। এ ঘটনা আমাদের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর আস্থা নষ্ট করেছে, যা সব নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া উচিত। কেয়ারের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে: সালিসবুরি পোস্ট অফিসে কর্মীদের জন্য সাংস্কৃতিক সচেতনতা ও পক্ষপাতমুক্ত আচরণের প্রশিক্ষণ। অভিযোগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। অ্যাপয়েন্টমেন্টভিত্তিক সেবা পরিচালনার জন্য পরিষ্কার নির্দেশনা প্রণয়ন। পরিবারটি আশাবাদী যে, তারা যেভাবে সামনে এসে কথা বলেছে তা ভবিষ্যতে নীতিগত পরিবর্তনের পথ প্রশস্ত করবে। কেয়ার সবাইকে অনুরোধ করেছে যেন তারা কোনো বৈষম্যের শিকার হলে সঙ্গে সঙ্গে কেয়ার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানায়।
সালিসবুরি পোস্ট অফিসে মুসলিম পরিবারকে পাসপোর্ট সেবা না দেওয়ার ঘটনাটি শুধু একটি বিচ্ছিন্ন অভিজ্ঞতা নয়, বরং এটি বৃহত্তর কাঠামোগত বৈষম্যের একটি প্রতিফলন, যা সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ইউএসপিএসের দুঃখ প্রকাশ অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, তবে শুধু ক্ষমা প্রার্থনা নয়, প্রয়োজন কার্যকর নীতিগত পরিবর্তন ও জবাবদিহিমূলক পদক্ষেপ। কেয়ারের দাবিগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব। একই সঙ্গে এটি যুক্তরাষ্ট্রের মতো বহুবর্ণ সমাজে ধর্মীয় সহনশীলতা ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্রে্যর প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার প্রয়োজনীয়তাও স্মরণ করিয়ে দেয়। সব নাগরিকের ন্যায্য ও সমান সেবা পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করাই হওয়া উচিত সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের মূল দায়িত্ব।