৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৯:১৯:৪৩ অপরাহ্ন


আওয়ামী লীগের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ, এরপর কী
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-০৫-২০২৫
আওয়ামী লীগের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ, এরপর কী


আওয়ামী লীগের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ, আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করে প্রজ্ঞাপন জারি। এরপর কী। এ প্রশ্নটাই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে চারদিকে। অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে শুরু করেছে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ তাহলে এরপর কী? 

একটি দলকে নিষিদ্ধ করলেই সে নিষিদ্ধ হয়ে যায় না। যেমনটা বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেছেন “আওয়ামী লীগ কচুর পাতার পানি নয়, সেটি সিদ্ধ হবে না, নিষিদ্ধ হবে এ রায় দেবেন জনগণ।” তিনি আরও বলেন, “মওলানা ভাসানীর তৈরি করা দল ও বঙ্গবন্ধুর লালন-পালন করা দল আওয়ামী লীগ, যে দল বাংলাদেশের স্বাধীনতা এনেছে।” কাদের সিদ্দিকী আরো বলেন, “কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করলেই তা নিষিদ্ধ হয়ে যায় না। জনগণ যদি তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, অনুমোদন না দেয়, তাহলে সে দল দাঁড়াতে পারে না। আওয়ামী লীগের যারা অন্যায় করেছে, ভুল করেছে, তাদের বিচার হবে এবং আইনের বিচারের দোষী সাব্যস্ত হলে তাদের শাস্তি হবে।”

অগনিত সমার্থকদের একটি দলের কার্যক্রম চাইলে নিষিদ্ধ করা যায় না। এটাই বাস্তবতা। এমন দৃষ্টিকোন থেকে বলাই যায় এটা তাহলে সাময়িক! অবশ্য উপদেষ্টা পরিষদের যে সিদ্ধান্ত সেখানে বলাও হয়েছে যতক্ষন পর্যন্ত জুলাইয়ের গণগত্যার বিচারকার্য সম্পাদিত না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকবে। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ। জুলাই গণহত্যার সঙ্গে আওয়ামী লীগের অগনিত সমার্থক জড়িত নয়। জড়িত দলের শীর্ষ পর্যায়ে যারা ছিলেন শুধু তারাই। ইতিমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগও দাখিল হয়েছে। অর্থাৎ ১৬ বছরের শাসনামলে এই রাজনৈতিক দলটি যেসকল অপকর্ম করেছে যেমনটা তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন আয়োজন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিরোধী কর্মকাণ্ড, গুম ও বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড, বিরোধী মত দমন, দলীয়করণ, ব্যাপক দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগের পাশাপাশি জুলাই গণগত্যা গুম খুন, অর্থ পাচার থেকে শুরু করে নানান অপকর্মের সঙ্গে জড়িত দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব। 

যতক্ষণ পর্যন্ত অভিযুক্তদের বিচারকার্য সম্পাদিত না হবে, ততক্ষন পর্যন্ত কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের। তবে বিচারকার্য শেষের পর থেকে আবার কার্যক্রম চালাতে পারবে এমন একটা সুযোগ এখানে রয়ে গেছে। তবে সেটা হতে পারে দলের যারা ওইসব গুরুতর কোনো কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত নন, কেবল তারা নেতৃত্বে আসতে পারবেন। এসব কথা অনেক পরের কথা। তার আগে দল হিসেবে আওয়ামী লীগই নিষিদ্ধ হয় কিনা সেটাও দেখার বিষয়। কারণ কোনো দল যদি তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও সাংগঠনিক কার্যক্রম না দেখাতে পারে সেক্ষেত্রে দলের নিবন্ধন বাতিল হওয়ার সুযোগ রয়েছে। ফলে আওয়ামী লীগ এখন বহু সমীকরনে ‘যদি’ এর মধ্যে এসে দাঁড়িয়ে গেছে। 

দলটির অগনিত সমার্থক নেতাকর্মী। কিন্তু যে চিন্তাধারা তাদের এ কার্যক্রম সেটা গলদ হলে সেখানে মানুষের কল্যাণ বয়ে আনে না। আওয়ামী লীগ বিগত তিনটার্ম যেভাবে এককভাবে সকল প্রশাসনযন্ত্র ব্যাবহার করে বিনা ভোটে, গণতন্ত্র হরণ করে ক্ষমতা আকড়ে ছিল সেটা কোনো গণতান্ত্রিক দেশের জন্য, কোনো গণতান্ত্রিক দলের মানদণ্ড নয়। অনেক দোষে দোষী দলটি। যার চূড়ান্ত প্রকাশ জুলাইয়ের ওই নৃশংস হত্যাকান্ড। আর এতে করেই সব অভিযোগ এখন দলটির উপর। এরসঙ্গে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার পাচার করে দেশের অর্থনীতি ধ্বংসপ্রায় করে ফেলার মত অবস্থানে নিয়ে যাওয়া। 

সব মিলিয়ে আওয়ামী লীগের এমন ক্ষত শুকিয়ে উঠতে সম্ভবত বহুত সময় লেগে যেতে পারে। ততক্ষণে দলটির কী অবস্থা হবে সেটা নিয়েও অনেক বিশ্লেষণ চলছে। শীর্ষ নেতৃত্ব না থাকলে বা ফ্রন্টলাইনে না আসতে পারার অর্থ অস্থিত্ব বিলীন হওয়া। কারণ কে কোথা থেকে এসে দলের হাল ধরবেন আর কে তার বশ্যতা স্বীকার করবে। এটা খুবই কঠিন এক প্রশ্ন। এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের একজনই সম্ভব তিনি শেখ হাসিনা। কিন্তু তার যে বয়স, ও যে অভিযোগ তার উপরে ওগুলো খন্ডিয়ে তিনি সোজা হয়ে দাঁড়াবেন কবে সে সময় তিনি মানসিকভাবে কতটা স্ট্রং থাকবেন না আদৌ থাকবেন না, সেটা সময় বলে দেবে। 

ফলে দুশ্চিন্তার কালো মেঘ আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে। এর আগেও আওয়ামী লীগ বহুবার বিপকে পড়েছে। আবার উঠে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এবারের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখান থেকে উঠে দাঁড়ানো বিষেশ করে নতুন প্রজন্মকে যেভাবে শারীরিক ও মানসিকভাবে আঘাত করেছে সেখান থেকে উঠতে সময় লাগবে। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি ৫ আগস্টের পর থেকেই ছিল। কিন্তু সে দাবিতে সেভাবে সম্মতি দেয়নি কেউই। 

সবশেষ আওয়ামী লীগ আমলে দুইবারের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশত্যাগের ঘটনার পর আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ৮ইমে রাত থেকে আন্দোলন শুরু করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সহ কিছু রাজনৈতিক দল ও সংগঠন। সেটা ধীরে ধীরে বড় আকার ধারণ করে। একমাত্র বিএনপি যমুনার সম্মুখে ও শাহবাগে যায়নি। আর প্রায় সবদলের নেতাকর্মী হাজির। বিএনপি অবশ্য বলছে তারা প্রধান উপদেষ্টাকে চিঠি দিয়ে সমর্থন জানিয়েছে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের ব্যাপারে। 

মাঠে এনসিপির পাশাপাশি ইসলামী ছাত্রশিবির, জামায়াতে ইসলামী, ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (আপ) ও জুলাই আন্দোলনে যুক্ত বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। লাগাতার ওই আন্দোলনের মুখে ১০ই মে রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে জরুরি বৈঠকে বসে উপদেষ্টা পরিষদ। বৈঠক শেষে ঘোষণা করা হয় যে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দলটির সব ধরনের কার্যক্রম (সাইবার স্পেসসহ) নিষিদ্ধ থাকবে। এরপর প্রজ্ঞাপনও জারি হয়েছে। আওয়ামী লীগের নিষেধাজ্ঞার খবর বিশ্বের বহু মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচারিত হয়। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরের রাজনীতিতেও নতুন মোড় দিয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে দলটির ভবিষ্যৎ কৌশল কোন দিকে যাবে, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

তবে আওয়ামী লীগ দল হিসেবে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা তার আত্মীয় স্বজন ও দলের শীর্ষ কর্মকর্তাসহ যেভাবে পালিয়ে দেশ ছেড়ে গেছেন এতে দলের সাধারণ নেতাকর্মীর উপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পরেছে। রীতিমত ঐতিহ্যবাহী এ দলটি প্রেস্টিজ ইস্যুতে পরেছে। এরপর অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া ও এমন কি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও যদি কেউ আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রচার প্রচারণা করে তাকেও গ্রেফতার করার যে হুমকি, এতে দলটির ভবিষ্যত ও অস্থিত্ব প্রশ্নের মুখে এসে দাঁড়িয়ে গেছে।

শেয়ার করুন